DMCA.com Protection Status
title="৭

উপজেলা নির্বাচনের বিশ্লেষনঃ বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোট তৃনমূলের সমর্থন অর্জন করলো

image_756_109296প্রথম দুই ধাপের উপজেলা নির্বাচনে তৃণমূলের ম্যান্ডেটে এগিয়ে রয়েছে বিএনপি। দলটির নেতৃত্বে ১৯ দলীয় জোট সমর্থিত প্রার্থীরা চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যান পদে নিরঙ্কুশ জয় পেয়েছেন। দ্বিতীয় ধাপের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ব্যবধান কমালেও নির্বাচনে কেন্দ্র দখল ও জালিয়াতির অভিযোগে প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে পুরো নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা। প্রথম ধাপের ৯৭টি উপজেলার ফলে বিএনপি ৪২, আওয়ামী লীগ ৩৪ জামায়াত ১২টিতে চেয়ারম্যান পদে জয় পায়। জামায়াত-বিএনপি মিলিয়ে ৫৫টি উপজেলায় জয় পান জোটের প্রার্থীরা। এছাড়া ভাইস চেয়ারম্যান পদেও প্রাধান্য ছিল বিএনপি-জামায়াত প্রার্থীদের। দুই ধাপের নির্বাচনে ২১০টির ঘোষিত ফলে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগ সমর্থিতরা জিতেছেন ৭৯টিতে, বিএনপি ৯৪টিতে এবং জামায়াত সমর্থিত প্রার্থীরা জয়ী হয়েছেন ২০টিতে। বিএনপি-জামায়াত মিলে জয়ী হয়েছেন ১১৪টিতে। অন্যদিকে আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক মিত্র ও জাতীয় সংসদের প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টির প্রার্থী দুই ধাপের নির্বাচনে মাত্র দু’টিতে জয়ী হয়েছেন। অন্যন্য দল ও দল নিরপেক্ষ প্রার্থী জয়ী হয়েছেন ১৩ জন। দুই ধাপের নির্বাচনে বিএনপি-জামায়াত জোট সমর্থিত প্রার্থী আওয়ামী লীগের প্রার্থীর চেয়ে বেশি বিজয়ী হয়েছেন ৩৬ জন। উপজেলা নির্বাচনকে জনপ্রিয়তা যাচাইয়ের মানদণ্ড মনে করছে বড় রাজনৈতিক দলগুলো। এ কারণে মিত্র জোটের বাইরের দলের প্রার্থী সঙ্গে সমঝোতা করে হলেও জয় ঘরে তোলার চেষ্টা করছেন প্রার্থীরা। অধিকাংশ উপজেলায় বিএনপি ও জামায়াত সমঝোতার ভিত্তিতে নির্বাচন করেছে। ব্যতিক্রমও আছে ক্ষেত্রবিশেষে। নিজেদের স্বার্থে আওয়ামী লীগের প্রার্থীর সঙ্গে জামায়াতের সমঝোতার খবরও পাওয়া গেছে। একই সঙ্গে বিএনপি ও জামায়াতের প্রার্থীরা একই উপজেলায় আলাদাভাবেও লড়ছেন। বিএনপি ও তাদের নেতৃত্বাধীন জোট ৫ই জানুয়ারির নির্বাচন বর্জন করায় অর্ধেকেরও বেশি আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আওয়ামী লীগ ও ১৪ দলের নেতারা এমপি হিসেবে বিজয়ী হন। বাকি অর্ধেক আসনে নির্বাচন করলেও সেখানে অনেক ক্ষেত্রেই প্রতিদ্বন্দ্বিতা ছিল না। বিরোধী জোটের দাবি- নির্বাচনে ১০ ভাগের কম ভোট পড়েছে। এতে প্রমাণ হয় সরকারের প্রতি জনসমর্থন নেই। যদিও নির্বাচন কমিশন জাতীয় নির্বাচনে ৪০ভাগ ভোট পড়ে বলে তথ্য প্রকাশ করে। জাতীয় নির্বাচন বর্জন করলেও স্থানীয় নির্বাচন হওয়ায় উপজেলায় অংশ নিচ্ছেন ১৯ দলীয় জোট সমর্থক প্রার্থীরা। প্রথম ধাপের নির্বাচনে ব্যাপক সাফল্যের পর   জোটের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছিল সরকারের প্রতি জনআস্থা নেই এটি ভোটে প্রমাণিত হয়েছে। সুষ্ঠু ভোট হলে শতকরা ৫ ভাগের বেশি উপজেলায় ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থীরা জয়ী হতে পারতেন না। একই সঙ্গে দ্বিতীয় ধাপের নির্বাচন সুষ্ঠু হবে না এমন আশঙ্কাও প্রকাশ করা হয় বিরোধী জোটের পক্ষ থেকে। ২৪শে জানুয়ারি অনুষ্ঠিত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্বাচনী এলাকা রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলা নির্বাচনে বিএনপি সমর্থিত প্রার্থীর জয়ে টনক নড়ে ক্ষমতাসীন দলের। বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় ধাপের নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীর জয় নিশ্চিত করতে মরিয়া হয়ে নামেন সরকারি দলের নেতা কর্মীরা। স্থানীয় পর্যায়ে প্রভাব প্রতিপত্তির মাত্রা ছাড়িয়ে চলে কেন্দ্র দখল ও জাল ভোটের মহোৎসব। অন্তত ১৩টি উপজেলায় দুপুরের মধ্যে নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দেন প্রার্থীরা। ব্যাপক জালিয়াতির অভিযোগ তোলা হয় বিরোধী  জোটের পক্ষ থেকে। এমন জোর জবরদস্তির মধ্যেও নির্বাচনের ফল নিজেদের অনুকূলে রাখতে পারেনি ক্ষমতাসীন দল। বরং বিরোধী  জোটের প্রার্থীরা বিপুল ব্যবধানে এগিয়ে রয়েছেন নির্বাচনের ফলে। চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগ কিছুটা ব্যবধান কমালেও ভাইস চেয়ারম্যান পদে বড় ব্যবধানে এগিয়ে রয়েছেন বিএনপি ও জামায়াত সমর্থিত প্রার্থীরা। কার্যত এ নির্বাচনের ফলে বিএনপি’র নেতৃত্বাধীন জোট তৃণমূলের সমর্থনের দিক দিয়ে এগিয়ে থাকায় চাঙ্গা রয়েছে জোটের নেতাকর্মীদের মনোবলও। এটিকে কাজে লাগিয়ে অন্যান্য ধাপের নির্বাচনে ফল নিজেদের অনুকূলে রাখারও পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। 

প্রথম ও দ্বিতীয় ধাপের নির্বাচনে ভাইস চেয়ারম্যান পদেও বিএনপি এবং জামায়াত সমর্থিত প্রার্থীরা বেশি জয়ী হয়েছেন। উপজেলা পরিষদের দ্বিতীয় দফা নির্বাচনে ভাইস চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগ ৩৭, বিএনপি ৩২ ও জামায়াতের প্রার্থী ৩৪টি উপজেলায় বিজয়ী হয়েছেন। মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের ৩৭, বিএনপি’র ৫১ ও জামায়াতের ১৭ জন বিজয়ী হয়েছেন। এ দুই পদ মিলিয়ে আওয়ামী লীগের ৭৪, বিএনপি’র ৮৩ এবং জামায়াতের ৫১ জন বিজয়ী হয়েছেন। বিএনপি ও জামায়াত মিলে মোট ১৩৪ জন বিজয়ী হয়েছেন। এ ধাপে বিএনপি ও জামায়াত-আওয়ামী লীগের চেয়ে ৬০ জন প্রার্থী বেশি বিজয়ী হয়েছেন। এছাড়া প্রথম ধাপের নির্বাচনে ভাইস চেয়ারম্যান পদে বিএনপি ৩২টি, আওয়ামী লীগ ২৩টি, জামায়াতে ইসলামী ২৪টি, জাতীয় পার্টি ৩টি ও অন্যান্য দল ও স্বতন্ত্র প্রাথী ১০টিতে এবং মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে বিএনপি ও আওয়ামী লীগ সমানসংখ্যক ৩৪টি, জামায়াতে ইসলামী ১০টি, জাতীয় পার্টি ১টি অন্যান্য দল ও স্বতন্ত্র প্রার্থী ৩ টিতে জয়ী হয়েছেন। এ ধাপে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী জয়ী হন ৫৭টিতে। আর বিএনপি ও জামায়াত সমর্থিত প্রার্থী জয়ী হন ৯৯টিতে। এক্ষেত্রে আওয়ামী লীগের চেয়ে বিএনপি-জামায়াত জোটের ৪২জন প্রার্থী বেশি বিজয়ী হয়েছেন। দ্বিতীয় ধাপের ভোটে জনসংহতি সমিতি-জেএসএস’র ৩ জন এবং ইউপিডিএফ’র ১ জন  চেয়ারম্যান পদে বিজয়ী হয়েছেন। নীলফামারীর কিশোরগঞ্জ উপজেলায় জয়ী হয়েছেন জাতীয় পার্টির প্রার্থী। তিনটি উপজেলায় ফল ঘোষণা হয়নি। এর মধ্যে নোয়াখালী সদর উপজেলার নির্বাচন স্থগিত করা হয়েছে। বাকি দু’টি উপজেলার কিছু কেন্দ্রের ফল স্থগিত রাখা হয়।

 
 
 

Share this post

scroll to top
error: Content is protected !!