DMCA.com Protection Status
title=""

উপজেলা নির্বাচনের পর আবার সরকার পতনের আন্দোলন- রাজবাড়ীর জনসভায় বেগম খালেদা জিয়া

image_79758_0রাজবাড়ী থেকে দৈনিক প্রথম বাংলাদেশ এক্সক্লুসিভ: উপজেলা নির্বাচন শেষে দ্রুত সরকার পতনের আন্দোলন শুরু করার ঘোষণা দিয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসন এবং ১৯ দলীয় জোট নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া।
শনিবার সন্ধ্যায় রাজবাড়ী শহীদ মুক্তিযোদ্ধা খুশি রেলওয়ে মাঠ ময়দানে অনুষ্ঠিত জনসভায় এ ঘোষণা দেন তিনি।
দল গোছানোর কাজ চলছে জানিয়ে বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, ‘উপজেলা নির্বাচন শেষ হলে দ্রুত আমাদের সরকার পতনের আন্দোলন শুরু হবে। নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন হলে ১৯ দলীয় জোটকে পরাজিত করা যাবে না।’
জঙ্গি তৎপরতা প্রসঙ্গে বর্তমান সরকারের কঠোর সমালোচনা করে সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশে কোনো জঙ্গির জায়গা হবে না, আল কায়েদার জায়গা হবে না। সন্ত্রাসী কার্যক্রমের জন্য এ দেশের মাটি ব্যবহার করতে দেয়া হবে না।’
তিনি বলেন, ‘ শেখ হাসিনা স্বঘোষিত প্রধানমন্ত্রী। ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের আগে থেকেই তিনি হোম মিনিস্টারগিরি করছেন। জঙ্গিরা কীভাবে পালিয়ে গেলো এর জবাব তাকেই দিতে হবে। আমাদের নেতারা টেলিফোনে কথা বললে তা তারা (সরকার) জানতে পারে। আর জঙ্গি জেলখানায় থেকে কীভাবে পালানোর পরিকল্পনা করে?’

বেলা সোয় ১১টায় ঢাকা থেকে রাজবাড়ীর উদ্দেশ্যে সড়ক পথে রওনা করেন খালেদা জিয়া। অন্যবারের তুলনায় এবার তার যাত্রাপথে তেমন সাজসজ্জা লক্ষ্য করা যায়নি। বেলা পৌনে ৩টায় তিনি রাজবাড়ী সার্কিট হাউজে পৌঁছান। বিকেল সোয়া ৪টার দিকে আসেন জনসভা স্থলে।
খালেদা জিয়া জনসভা স্থলে পৌঁছলে শতাধিক তরুণী লাল শাড়ি পরে সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে গাঁধা ফুলের শুভেচ্ছা জানায়। পরে রাজবাড়ী জেলা বিএনপির সভাপতি আলী নেওয়াজ মাহামুদ খৈয়মের নেতৃত্বে জনসভা ময়দানে বিএনপি নেতারা তাকে বরণ করে নেন। খালেদা জিয়ার মঞ্চের পাশে স্থানীয় জাসাস সাংস্কৃতিক মঞ্চ তৈরি করে। সেখান থেকেও তারা খালেদা জিয়াকে স্বাগত জানায়। বিএনপি চেয়ারপারসনও মঞ্চে উঠে হাত নেড়ে সবাইকে অভিনন্দন জানান।
প্রায় পৌনে এক ঘণ্টার বক্তব্যের শুরুতে খালেদা জিয়া রাজবাড়ীবাসীর কাছে দুঃখ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, ‘এর আগে তিনবার সময় দিয়েছি। নানা কারণে আসতে পারিনি। তার জন্য আন্তরিকভাবে দুঃখ প্রকাশ করছি।’
জনসভার অনুমতি প্রদানে সরকারের গড়িমসির অভিযোগ করে খালেদা জিয়া বলেন, ‘গতকাল রাত ১টার সময় এখানে পারমিশন দেয়া হয়েছে। বিভিন্ন জায়গায় গাড়ি আটকে জনসভায় আসতে বাধা দেয়া হয়েছে।’ বাধা পেরিয়ে জনগণ জনসভায় উপস্থিত হওয়ায় আন্তরিক ধন্যবাদ জানান বিএনপি চেয়ারপারসন।

আওয়ামী লীগের শাসনামলে দেশে কোনো ধর্মের মানুষ নিরাপদ নয় মন্তব্য করে খালেদা জিয়া বলেন, ‘৫ জানুয়ারি অবৈধ নির্বাচনের পর যখন তারা কোথাও থেকে সমর্থন পাচ্ছিলো না, সারা বিশ্বে হৈ চৈ পড়ে গেলো। তখন তারা সংখ্যালঘু নির্যাতন শুরু করলো। তারপর আবার জঙ্গিবাদ।
বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, ‘আওয়ামী লীগ অবৈধ নয়, এই সরকার অবৈধ। তারা জোর করে ক্ষমতায় রয়েছে। ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে জনগণ ভোট দেয়নি।’
তিনি বলেন, ‘জবরদখলকারী সরকারকে ক্ষমতা থেকে সরাতে হবে। সেজন্য আমাদেরকে আন্দোলন করতে হবে।’ বিএনপি জোটের সাম্প্রতিক আন্দোলন কর্মসূচি ‘পালন’ করায় সারাদেশের মানুষকে ধন্যবাদ জানান খালেদা জিয়া।
তিনি আরো বলেন, ‘গত ২৫ অক্টোবর থেকে ২৫ জানুয়ারি পর্যন্ত ৩ মাসে ৩০৪ জন নেতাকর্মী নিহত হয়েছে। ৬৫ জনের অধিক নেতাকর্মীকে গুম করা হয়েছে। তাই এদেরকে সরকার বলা যায় না, এরা অবৈধ।’
দলীয়করণের জন্য প্রশাসন মেধাশূন্য হয়ে পড়েছে মন্তব্য করে আওয়ামী লীগ সরকারের তীব্র সমালোচনা করেন বিএনপি চেয়ারপারসন।
খালেদা বলেন, ‘লুটপাট সমিতি হলো আওয়ামী লীগ।’ এসময় তিনি শেয়ারবাজার, ব্যাংকসহ বিভিন্ন কেলেঙ্কারির কথা তুলে ধরেন।
খালেদা জিয়া বলেন, ‘দেশে মানবাধিকার বলতে কিছু নেই। এখনো অনেক জেলায় সন্ধ্যার পর পুরুষ শূন্য হয়ে পড়ে। আওয়ামী লীগ রক্তপিপাসু। এদের হাত রক্তে রঞ্জিত।’ পিলখানা, হেফাজতে ইসলামের শাপলা চত্বরের সমাবেশ এবং সম্প্রতি বিভিন্ন জায়গায় যৌথ নিরাপত্তা বাহিনীর অভিযানের সমালোচনা করেন বিএনপি চেয়ারপারসন।
চাকরির ক্ষেত্রে কোঠা শিথিলের পক্ষে নিজের অবস্থান ব্যক্ত করে খালেদা জিয়া বলেন, ‘কোঠা কমিয়ে দিতে হবে। মেধা ও যোগ্যতার ভিত্তিতে চাকরি দিতে হবে। দলীয়করণ, আত্মীয়করণের কারণে কোনো কমিশন কাজ করতে পারছে না। পুলিশের প্রোফেশনালিজম ধ্বংস করা হচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘ছাত্রলীগ, যুবলীগের হাতে আগ্নেয়াস্ত্র। আমাদের নেতাকর্মীদের নামে ৩২ হাজার মামলা দেয়া হয়েছে। পুলিশ এখান থেকে বাণিজ্য করছে। তারা আমাদের নেতাকর্মীদের মিথ্যা মামলায় ফাঁসানোর ভয় দেখাচ্ছে। অনেক ক্ষেত্রে নেতাকর্মীরা টাকা দিয়ে রেহাই পাচ্ছে।’

রাজবাড়ীর জনসভা থেকে খালেদা জিয়া বিভিন্ন উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি দেন। সরকার গঠন করতে পারলে পদ্মাসেতু এবং রাজবাড়ীতে বিশ্ববিদ্যালয় করার ঘোষণা দেন তিনি।
নারী শিক্ষার জন্য ১৯৯১ সালে বিএনপি সরকার বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করেছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘সারাদেশে সুষম উন্নয়ন করা হবে। কোনো জেলা আমার বা অন্য দলের সেটা বিবেচনা করা হবে না।’
কৃষকদের স্বার্থ সংরক্ষণের জন্য বিএনপি জোটের আন্তরিকতা রয়েছে জানিয়ে খালেদা জিয়া বলেন, ‘আমরা সরকার গঠন করলে কৃষি উপকরণে ভর্তুকি দিয়ে উৎপাদনের উৎসাহিত করা হবে এবং উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্য মূল্য দেয়া হবে। কয়েকদিন আগে চাষীরা রাস্তায় আলু ফেলে শুয়ে ছিল। সেদিকে সরকারের খেয়াল নেই।’
গ্যাস-বিদ্যুতের দাম বাড়লে সবকিছুর দাম বেড়ে যাবে। তাই গ্যাস-বিদ্যুতের দাম বাড়লে সবাইকে প্রতিবাদ করার আহ্বান জানান সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী।
খালেদা জিয়া বলেন, ‘সংসদ চলছে। প্রতি মিনিটে কত হাজার টাকা খরচ হয়। সেখানে খালি গালিগালাজ হয়। আমরা সংসদে নেই। তথাকথিত বিরোধী দল রয়েছে। যারা বিরোধী দলে থেকে সরকারের মন্ত্রিসভায় রয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘অবিলম্বের জনগণের দাবি পূরণ করতে নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন দিতে হবে।’
খালেদা বলেন, ‘আমরা বলেছি, আওয়ামী লীগের অধীনে আমরা জাতীয় নির্বাচনে যাবো না। অন্য নির্বাচনের কথা বলিনি। কারণ উপজেলা নির্বাচনে সরকার পরিবর্তন হয় না। আমরা উপজেলা নির্বাচনে এসেছি বলে সরকারের গায়ে জ্বালা ধরেছে। উপজেলা নির্বাচনে তারা অনিয়ম করেছে। তারপরও আমরা জয়লাভ করেছি। গোপালগঞ্জের ২টি জায়গায় আমাদের সমর্থিত প্রার্থী নির্বাচিত হয়েছে।’
বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, ‘আওয়ামী লীগ উপজেলায় নির্বাচিতদের ক্ষমতাই দেয়নি। এদের ক্ষমতা দিতে হবে।’
সরকার ভয়ে ঢাকা সিটি করপোরেশন নির্বাচন দিচ্ছে না মন্তব্য করে খালেদা জিয়া বলেন, ‘কী মতলবে তারা ঢাকা সিটি করপোরেশনকে দুইভাগে ভাগ করেছে। ২ বছর ধরে সেখানে অনির্বাচিত প্রশাসক রয়েছে।’
দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির জন্য সরকারের সমালোচনায় মুখর বিএনপি চেয়ারপারসন। তার নেতৃত্বে সরকার গঠন হলে দুর্নীতি মুক্ত প্রশাসন করার প্রতিশ্রুতি দেন তিনি। বলেন, ‘আমরা সুশাসন প্রতিষ্ঠা করবো। যুবকদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থ করবো।’

বিএনপি চেয়ারপারসনের বক্তব্যের আগে জালাল উদ্দিন নামে স্থানীয় এক ইউপি চেয়ারম্যান খালেদা জিয়ার হাতে ফুল দিয়ে বিএনপিতে যোগ দেন।
রাজবাড়ী জেলা বিএনপি আয়োজিত জনসভায় সভাপতিত্ব করেন জেলার সভাপতি আলী নেওয়াজ মাহামুদ খৈয়ম। সভা পরিচালনা করেন যুগ্ম-সম্পাদক গাজী আহসান হাবিব, দপ্তর সম্পাদক এম মজিদ বিশ্বাস এবং প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক আকমল হোসেন।

জনসভায় অন্যদের মধ্যে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, ড. আব্দুল মঈন খান, ভাইস চেয়ারম্যান সাদেক হোসেন খোকা, বেগম সেলিমা রহমান, চৌধুরী ইবনে কামাল ইউসুফ। শরিক দলগুলোর মধ্যে জাতীয় পার্টির একাংশের চেয়ারম্যান কাজী জাফর আহমেদ, জাগপা সভাপতি শফিউল আলম প্রধান, জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মজিবর রহমান, লেবার পার্টির সভাপতি ডা. মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, ইসলামিক পার্টির সভাপতি অ্যাডভোকেট আব্দুল মবিন, এলডিপির মহাসচিব ড. রেদোয়ান আহমেদ প্রমুখ বক্তৃতা করেন।
এছাড়ও মঞ্চে বিএনপির সহ-মহিলা বিষয়ক সম্পাদক শিরিন সুলতানা, সহ-দপ্তর সম্পাদক শামীমুর রহমান শামীম, নির্বাহী কমিটির সদস্য শ্যামা ওবায়েদ, ছাত্রদলের সাবেক নেতা শহীদুল ইসলাম বাবুল প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

Share this post

scroll to top
error: Content is protected !!