এশিয়া কাপের নবীনতম দেশ আফগানিস্তানের কাছে ৩২ রানের অবমাননাকর হার বরণ করেছে টাইগাররা। এই হারে নিজেদের সামর্থ্যকে প্রশ্নবিদ্ধ করার পাশাপাশি চলতি টুর্নামেন্ট থেকে বিদায় নেয়াও নিশ্চিত করে ফেলেছে গত আসরের রানার্স আপ দলটি।১৩ বল হাতে রেখে ২২২ রান করে অল আউট হয় স্বাগতিকরা।
জয়ের জন্য ২৫৫ রানের লক্ষ্যে খেলতে নেমে শুরু থেকেই বিপর্যয়ের পথে হাঁটতে থাকে স্বাগতিকরা। ইনিংসের পঞ্চম বলে শামসুর রহমান এবং পরের ওভারেই আনামুল হক ফিরে গেলে ১ রানে ২ উইকেট হারিয়ে কোনঠাসা হয়ে পড়ে টাইগাররা। অধিনায়ক মুশফিকুর রহিম ও মুমিনুল হক কিছুটা প্রতিরোধ গড়ে ৬৮ রান যোগ করলেও ২৩ রান করা মুশফিক ও ৫০ রান করে ফিরে যান মুমিনুল।নাঈম ইসলাম ও নাসির হোসেন কিছুক্ষণ ক্রিজে কাটালেও কাজের কাজটি করতে পারেননি। ৬০ বলে ৪১ রান করে নাসির এবং ৩৫ রানে ফিরে যান নাঈম। এর পর হাস্যকরভাবে রান আউট হয়ে সাজঘরে ফেরেন বাঁহাতি স্পিনার আব্দুর রাজ্জাকও। অস্টম ব্যাটসম্যান হিসেবে ফেরেন আরাফাত সানিও।
তবে দলীয় শীর্ষ ব্যাটসম্যানদের লজ্জ্বা দেন জিয়াউর রহমান। অনেকটা একক প্রচেষ্টায় মাত্র ২২ বলে ৪ চার ও ৩ ছক্কায় ৪১ রানের দানবীয় ইনিংস খেলে বিমর্ষ সমর্থকদের কিছুটা হলেও আনন্দ দেন তিনি। তবে মোহাম্মদ নবীর বলে বোল্ড হয়ে সাজঘরে ফেরেন তিনিও । এ সময় বাংলাদেশের সংগ্রহ ছিল ২০৫ রান ৯ উইকেটে। জয় থেকে তখনও ৫০ রান দুরত্বে টাইগাররা। আহত সোহাগ গাজী এক হাতে ব্যাট করে কিছুটা সঙ্গ দেন বোলার রুবেল হোসেনকে। কিন্তু তা শুধু হারের ব্যবধানই কমায়। রুবেল ১৭ রান করে শেষ ব্যাটসম্যান হিসেবে আউট হন।
আফগানিস্তানের পক্ষে অধিনায়ক মোহাম্মদ নবী ৪৪ রানে ৩ উইকেট তুলে নেন। এছাড়াও হামিদ হাসান ২৬ রানে ও শাপুর জর্দান ৩৯ রানে দুটি করে উইকেট নেন।
এর আগে আসগর স্টানিকজাই এবং সামিউল্লাহ শেনওয়ারির অসাধারণ ব্যাটিং নৈপূণ্যে ৯০ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে কোনঠাসা অবস্থায় আফগানিস্তান শেষ পর্যন্ত নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৬ উইকেটে ২৫৪ রানের চ্যালেঞ্জিং লক্ষ্য দাঁড় করায়। এই দুই ব্যাটসম্যান ষষ্ঠ উইকেটে ১৩৮ বলে ১৬৪ রানের অসাধারণ এক জুটি উপহার দেন দলকে। ইনিংসের ১ বল বাকী থাকতে এ জুটি বিচ্ছিন্ন হয়। অলরাউন্ডার সামিউল্লাহ শেনওয়ারি মাত্র ৬৯ বলে ১০ চার ও ১ ছক্কায় ৮১ রানের বিস্ফোরক ইনিংস খেলে রান আউট হন। অন্য প্রান্তে স্টানিকজাই ১০৩ বলে ৬ চার ও ৩ ছক্কায় ৯০ রানের হার না মানা ইনিংস খেলেন। যা তার ওয়ানডে ক্যারিয়ারের চতুর্থ অর্ধশতক এবং ক্যারিয়ার সেরা ইনিংসও বটে। আফগানরা। খেলার ৪৫.৩ ওভারেই ৫ উইকেট হারিয়ে দলীয় দ্বিশতকের কোঠায় পৌঁছায় তারা।
এর আগে চতুর্থ উইকেটে শক্ত প্রতিরোধ গড়ে শেষ পর্যন্ত ২৪ রান করা আফগানদের অভিজ্ঞ ক্রিকেটার নওরোজ মঙ্গল রান আউট হয়ে সাজঘরে ফিরে যান । দলীয় সংগ্রহ ছিল এ সময় ২২.২ ওভারে ৪ উইকেটে ৭৪ রান। এরপর দলীয় ৯০ রানে মুমিনুলের বলে নাসির হোসেনের তালুবন্দী হন আফগান অধিনায়ক মোহাম্মদ নবী ৭ রান করে।
এর আগে পর পর ওভারে জোড়া উইকেট শিকার করেন বাংলাদেশের বাঁহাতি স্পিনার আরাফাত সানি। ইনিংসের ১৩.৪ ওভারে এবার তিনি ফেরালেন চমৎকার ব্যাটিং করতে থাকা ওপেনার নজিবুল্লাহ জর্দানকে। ৩৬ বলে ২১ রান করে তিনি ডাউন দ্য উইকেট খেলতে এসে বোল্ড হন। এর আগে ইনিংসের ১২তম ওভারে বাংলাদেশকে দ্বিতীয় উইকেটটি উপহার দেন বাঁহাতি এই স্পিনারই। ১২ রান করা করিম সাদিককে রিটার্ন ক্যাচ দিতে বাধ্য করেন সানি। ইনিংসের তৃতীয় ওভারেই বাংলাদেশকে প্রথম সাফল্য এনে দেন রুবেল হোসেন। দলীয় ৭ রানের মাথায় ২ রান করা ওপেনার মোহাম্মদ শেহজাদকে লেগ বিফোরের ফাঁদে ফেলেন এ পেসার।
সামিউল্লাহ শেনওয়ারি অবধারিতভাবে তাদের জন্য ঐতিহাসিক এই ম্যাচের সেরা খেলোয়াড় মনোনীত হন।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
আফগানিস্তান ৫০ ওভার ২৫৪/৬ (স্টানিকজাই অপরাজিত ৯০, শেনওয়ারি ৮১, নওরোজ মঙ্গল ২৪, নজিবুল্লাহ ২১, সাদিক ১২, সানি ২/৪৪, মুমিনুল ১/৩৮, রুবেল ১/৬১)
বাংলাদেশ ৪৭.৫ ওভার ২২২ (মুমিনুল ৫০, জিয়া ৪১, নাসির ৪১, নাঈম ৩৫, মুশফিক ২৩, রুবেল ১৭, নবী ৩/৪৪, হাসান ২/২৬, জর্দান ২/৩৯)
ফল: আফগানিস্তান ৩২ রানে জয়ী।
ম্যান অব দ্য ম্যাচ: সামিউল্লাহ শেনওয়ারি