পেটের তাগিদে প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে সমুদ্রপথে মালয়েশিয়া যাওয়ার সময় সেন্টমার্টিনের অদূরে বঙ্গোপসাগর থেকে নারী, শিশুসহ ৭৩ জন আটক হয়।
আটক যশোরের বাসিন্দা আলমগীর জানান, আমি পেটের দায়ে সাগর পথে মালয়েশিয়া পাড়ি দিচ্ছি। কি করব দেশেও কোন কাজ কর্ম নেই। যাওয়ার আগে আমি কোন টাকা দেইনি। মালয়েশিয়া পৌছানোর পর টাকা দেবে আমার পরিবার। তিনি জানান, গত ১৪ ফেব্রুয়ারি শুক্রবার রাতে যশোর থেকে আমাদের সাতজনকে চট্টগ্রাম নিয়ে আসে টেকনাফে দালালচক্রের সদস্য শাহপরীর দ্বীপের বাসিন্দা আবুল কালাম। পরে আরও ১১ জনকে চট্টগ্রাম থেকে জড়ো করে ওইদিন রাতে টেকনাফে এনে সাবরাং কচুবনিয়া ঘাট থেকে সবাইকে একটি নৌকায় তুলে দেয়া হয়। এ সময় থাইল্যান্ডের নিয়োজিত দালালের ইংরেজিতে (আয়াছ নামে) লেখা একটি করে গেঞ্জি পরিয়ে দেওয়া হয়। পরে নৌকাটি সেন্টমার্টিনের কাছাকাছি এসে একটি ট্রলারে আমাদের উঠিয়ে দেয়। আরো যাত্রী নেয়ার জন্য ট্রলারটি দীর্ঘ ১৫ দিন এখানে অপেক্ষা করছিল। এরই এক পর্যায়ে গত শনিবার দুপুরে কোস্টগার্ড সদস্যদের হাতে ধরা পড়ি।
এছাড়া আটক মিয়ানমারের নাগরিক শাজেদা বেগম জানান, মিয়ানমারের পরিস্থিতি এখনো শান্ত হয়নি। ভয়ে আতংকে আমরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সাগর পথে মালয়েশিয়া পাড়ি দিচ্ছি। কি করব, আমাদের মিয়ানমারেও জায়গা নেই, এখানোও জায়গা নেই। এখন সাগরে এসেও পার পাচ্ছি না।
গতকাল শনিবার দুপুর একটার দিকে এই ট্রলারসহ ৭৩ জন নারী-পুরুষ ও শিশুকে আটক করে কোস্টগার্ডের সদস্যরা। কোস্টগার্ডের দাবি, আটক এসব মানুষ অবৈধভাবে মালয়েশিয়া যাওয়ার জন্য ট্রলারটিতে অবস্থান করছিলেন বলে প্রাথমিকভাবে স্বীকারোক্তি দিয়েছেন। কোস্টগার্ড জানায়, গতকাল দুপুরে সেন্ট মার্টিনের অদূরে দক্ষিণ-পূর্ব দিকে মৌলভীরশীল নামক এলাকার বঙ্গোপসাগরে ভাসমান অবস্থায় একটি ট্রলার দেখতে পান টহলরত কোস্টগার্ড সদস্যরা। পরে সেন্টমার্টিন স্টেশনের কোস্টগার্ডের সদস্যরা ট্রলারটির কাছাকাছি গিয়ে কিছু সন্দেহভাজন লোকজন দেখতে পায় এবং ট্রলারটিতে তল¬াশি চালায়। ওই সময় ট্রলারটি থেকে নারী, পুরুষ ও শিশুসহ ৭৩ জনকে উদ্ধার করা হয়।
এদের মধ্যে মিয়ানমারের তিনজন নারী, দুইশিশুসহ ৪৩ জন যাত্রী রয়েছে। তাদের মধ্যে পাঁচজন রাখাইন, এরা ট্রলারের মাঝিমাল্ল¬া। বাকি ৩০ জনের মধ্যে একজন নারীসহ নারায়ণগঞ্জ, পাবনা, সিরাজগঞ্জ, যশোর ও কক্সবাজার জেলার বাসিন্দা রয়েছে।
গত ১১ ফেব্রুয়ারি স্বামীর টানে সাগর পথে মালয়েশিয়া পাড়ি দিতে গিয়ে কোস্টগার্ডের হাতে ৪ সন্তানসহ আটক হন হাসিনা বেগম। তিনি মিয়ানমারের মংডু হাসুরাতা এলাকার বাসিন্দা। এসময় তার সাথে তিন ছেলে এক মেয়ে ছিল।
কোস্টগার্ড টেকনাফ স্টেশনের লেফটেন্যান্ট কাজী হারুনুর রশিদ গত দিনের ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে দৈনিক প্রথম বাংলাদেশকে বলেন 'আটক করা যাত্রীদের সন্ধ্যা ৭টায় জেটিঘাটে নিয়ে এলে অধিকাংশ নারী-পুরুষ কান্নায় ভেঙে পড়েন'। এ সময় কোস্টগার্ড সদস্যরা তাদের খাদ্য সহায়তা ও প্রাথমিক চিকিত্সা দেয়। গতকাল সন্ধ্যায় এই রিপোর্ট লেখার সময় ট্রলারসহ আটক ৭৩ জনকে থানার পুলিশে হস্তান্তর করার প্রক্রিয়া চলছিল। কোস্টগার্ড গত দুই মাসে সাগর পথে মালয়েশিয়া যাওয়ার চেষ্টাকালে তিনটি ট্রলারসহ ৩৪১ জনকে আটক করে।