তথাকথিত মঙ্গনউদ্দিন ফখরুদ্দিন গং যে উদ্দেশ্য নিয়ে ক্ষমতায় এসেছিল তা বাস্তবায়নে প্রথম দিন থেকেই কাজ শুরু করে তারা।মুখে দূর্নিতীর বিরুদ্ধে জেহাদ ঘোষনা করলেও তাদের প্রধান টার্গেট ছিলো বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্ব থেকে শুরু করে আন্যান্য জাতীয় পর্যায়ের নেতারা।সাথে চলেদল ভাঙ্গার খেলা।বেগম জিয়া ও তারেক রহমানকে অন্তরীন করার পর দুঃখ জনকভাবে সিনিয়ার নেতা সাইফুর রহমান কে সভাপতি করে পাল্টা কমিটি করা হয়। বিএনপির বেশ কিছু নেতা এই তথাকথিত সংষ্কারবাদী গ্রুপের সাথে যুক্ত হন সরাসরি ডি জি এফ আইয়ের তত্বাবধানে ।এসময় সাবেক বিএনপি নেতা ফেরদৌস আহমেদ কোরেশীর নেতৃত্ব একটি সরকার সমর্থক দল বা কিংস পার্টিও গঠন করা হয়।যেহেতু বিএনপির উপর এহেন সরাসরি আক্রমন জনমনে সন্দেহের সৃষ্টি করতে পারে তাই লোক দেখানোর জন্য মখা আলমগীর সহ কিছু আওয়ামী লীগ নেতাদের বলির পাঠা হিসাবে আটক করা হয় এবং শেখ হাসিনাকে চাদাবাজী মামলায় আটক করা হয়।ঐসময় শুরু হয় গনমাধ্যম সহ সব মহলে বিএনপি শাসনামলের ভয়াবহ দূর্নিতীর উপাখ্যান প্রচার ও প্রচারনা(হাওয়া ভবন কাহিনী এবং অন্যান্য)।যে তত্বাবধায়কে সরকারের প্রধান কাজ ছিলো সংবিধান মোতাবেক তিন মাসের মধ্যে জাতীয় নির্বাচনের ব্যবস্থা করা এবং বিজয়ী দলের হাতে দেশ পরিচালনার ভার অর্পন করে দ্রুত প্রস্থান করা,তা না করে তারা অবৈধ ভাবে তাদের রুলস অব বিজনেস বহির্ভূত কার্যকলাপ চালাতে থাকে দেদারসে।তৎকালীন সেনাপ্রধান মঈন ইউ আহমেদ যে মিথ্যা অজুহাতে (জাতিসংঘের চাপ-অন্যথায় শান্তিরক্ষা মিশনে অংশগহনে সুযোগ হারানোর ভয়)পেছনে থেকে ক্ষমতা দখল করে বাংলাদেশের গনতন্ত্রের দ্বার প্রায় ২ বছর বন্ধ করে রেখেছিলেন তার বিচার একদিন অবশ্যই হবে।তবে তার এই বিতর্কিত ও ঘৃন মিথ্যাচার যে ভারতের সহযোগিতায় একটি সূদুরপ্রশারী পরিল্পনারই অংশ তা তখন না বুঝলেও পরবর্তিতে আমরা হারে হারে টের পেয়েছি।যাই হোক এই পরিকল্পনা অনুযায়ী আবার আওয়ামী লীগ কে ক্ষমতায় আনার পরিকল্পনা করা হয়।যে জেনারেল মঈন কে বেগম জিয়া তার ভাই মেজর (অবঃ)সাঈদ ইস্কান্দারের কোর্স মেট ও ঘনিষ্ট বন্ধু সর্বপরি তাদের নিজ জেলা ফেনীর লোক হিসাবে বেশ কয়েকজনকে ডিঙ্গিয়ে সেনা প্রধান করেছিলেন তার সাথে সরাসরি বিশ্বাসঘাতকতা করে এই মঙ্গন আজ ইতিহাসের আস্তাকুড়ে নিক্ষিপ্ত হয়েছে।এতো প্রপাগান্ডার পরও ২০০৮ সালের নির্বাচনের প্রাক্কালে চালানো জরীপে দেখা যায় বিএনপি ও আওয়ামী লীগের জনসমর্থন প্রায় সমান,অথচ নির্বাচনের ফলাফলে দেখা গেলো এক অভূতপুর্ব অবস্থা।দু দলের প্রাপ্ত ভোট প্রায় কাছাকাছি হলেও(আওয়ামী লীগ ৪২ ভাগ এবং বিএনপি ৪০ভাগ)প্রাপ্ত আসন বিএনপি জোট মাত্র ৩৩টি আর আওয়ামী লীগের মহাজোট পায় ২৬৭ টি আসন।এধরনের ঘটনা পৃথিবীর নির্বাচনের ইতিহাসে বিরল।এই নির্বাচনী ফলাফল যে পূর্ব পরিকল্পিত তা বুঝতে কাউকে আইনস্টাইন হতে হয় না,সাধারন জজ্ঞানে তা বোঝা যায়।দেশ পরিচালনায় নিরবিচ্ছিন্নতা অর্থাৎ সংসদের প্রায় ৯০ শতাংশ আসন নিয়ে যে কোন আইন অথবা সংবিধানের যে কোন পরিবর্তনের ক্ষমতা দেয়া হয় আওয়ামী লীগকে।কার সুবিধার্থে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ কে যুগ যুগ ধরে ক্ষমতায় থাকতে হবে এবং বাকশালী কায়দায় একদলীয় , নিঃষ্ঠুর,জনবি্ছিন্ন হয়েও জোর রে ক্ষমতা আড়ে থাকতে হবে তা বোধকরি আজ আর কারও বুঝতে বাকি নেই।বাংলাদেশের মানুষ ৭১সালে পাকিস্থানের মুক্তিযুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করছে ভারতে বংশবদ হয়ে থাকতে নয়।আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধে ভারতের অবদান আমরা আজীবন স্মরন করলেও আমাদের সম্পর্ক হতে হবে বন্ধু সূলভ,প্রভূ বা প্রজা সূলভ নয়।পাক-ভারত আজন্ম দ্বন্দের একটা স্ফুরণ ঘটেছিল বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় যখন পাকিস্তানের বিরূদ্ধে লড়ার জন্য ভারত বিভিন্ন ভাবে বাংলাদেশকে ব্যবহার করছিল। ওই সময় পাকিস্তান ভারতের বিরূদ্ধে "অপারেশন চেঙ্গিস খান" নামক একটি আক্রমণ চালায় যা ভারতের পশ্চিম সীমান্তে ইন্দো-পাক যুদ্ধের সূচনা করে।
ওই যুদ্ধে জয় লাভের জন্য বাংলাদেশের চলমান স্বাধীনতা যুদ্ধকে ব্যবহার করার খুব সুক্ষ বুদ্ধি এঁটেছিলো ভারত। কারন ভারত জানত যে পাকিস্তানকে ইন্দো-পাক যুদ্ধে পরাজিত করার সবচেয়ে ভালো উপায় হল দ্বিমুখী আক্রমণে পাকিস্তানকে পর্যদুস্ত করা। এই জন্য ভারত বাংলাদেশকে সাহায্য করার নামে সৈন্য পাঠায় ৩রা ডিসেম্বর ১৯৭১ এ !
যাতে করে এক ঢিলে দুই পাখি মারতে পারে। এভাবে একদিকে বাংলাদেশকে স্বাধীন করার সব কৃতিত্ব ভারত নিজেদের অধিকারে নিয়ে নেয় আবার বাংলাদেশের সাহায্য নিয়ে ইন্দো-পাক যুদ্ধে ভারত সহজে জয় লাভ করে যা বাংলাদেশের সাহায্য ব্যতিরেকে ভারত কখনোই পারতো না। তাহলে কে কাকে সাহায্য করেছিলো ১৯৭১ এ? বোধ করি ঊত্তরটা এখন আর আপনাদেরকে বলে দিতে হবে না।
বিভিন্ন সুত্রে জানা যায় যে ১৯৭১ এ বাংলাদেশের মুক্তিযোদ্ধাদেরকে প্রশিক্ষণ, খাদ্য সরবরাহ ইত্যাদি বাবদ ভারত সরকারের ব্যয় হয় আনুমানিক ৭০০ কোটি টাকা। আর যে অস্ত্রশস্ত্র ভারত আমাদের দিয়েছিল বলে আমরা জানি তা কিন্তু প্রকৃত পক্ষে রাশিয়া আমাদের দিয়েছিলো ভারতের মাধ্যমে। ওইসব সাহায্যের বিনিময়ে ভারত আমাদের সাথে কি করেছিল জানেন?
তারা ১৬ ডিসেম্বরের পর বাংলাদেশ জুড়ে নজির বিহীন লুটপাট চালিয়েছিলো। পাকিস্তানীদের ফেলে যাওয়া বিপুল পরিমাণ অস্ত্রশস্ত্র যার মূল্য ওই সময় ছিলো ২৭ হাজার কোটি টাকা তার সবই ভারত ১৫ টি বিশাল জাহাজে করে বাংলাদেশ থেকে লুট করে নিয়ে যায়। অথচ সেই অস্ত্রের মালিকানা ছিলো পুরোপুরি বাংলাদেশের। শুধু তাই নয় বাংলাদেশের শত শত মিল কারখানার যন্ত্রপাতি, ব্যাংক, স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যাল, ঘর বাড়ির সাধারণ গৃহস্থালী জিনিসপত্র পর্যন্ত বাদ যায়নি লোভী ভারতীয় লুটেরাদের হাত থেকে।
এসব সম্পদ ও দ্রব্যাদির তখনকার মূল্য ছিলো আনুমানিক ৯০ হাজার কোটি টাকা। এমনও শোনা যায় যে শৌচাগারের বদনা গুলোও বাদ দেয়নি ভারতীয় লুটেরার দল। এছাড়াও যুদ্ধকালীন ও যুদ্ধ পরবর্তীকালীন সময়ে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রদত্ত বিপুল পরিমাণ অর্থ ও অন্যান্য সাহায্যও লুট করে নিয়ে যায় আমাদের পরম মিত্র (!!!) ভারত।
ভারতের আরেকটি অন্যতম উদ্দেশ্য ছিলো পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশকে বিচ্ছিন্ন করে দ্বিমুখী সুবিধা আদায় করা। প্রথমতঃ সেই সময় বিশ্বের অন্যতম বড় মুসলিম প্রধান অঞ্চল বাংলাদেশ (সে সময়ের পুর্ব-পাকিস্তান) ও পাকিস্তান (সে সময়ের পশ্চিম-পাকিস্তান) যদি এক দেশ হিসেবে গন্য হত তাহলে সেটা ভারতের জন্য অনেক বড় একটি হুমকি হিসেবে দেখা দিত যা সামাল দেয়ার ক্ষমতা ভারতের ছিলো না।
কারণ ভৌগলিক ভাবে তাদের দুইদিক থাকত শত্রু পরিবেষ্টিত। দ্বিতীয়তঃ ভারত চেয়েছিলো পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশকে বিচ্ছিন্ন করে বাংলাদেশকে অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক, ভৌগলিক ও অন্যান্য সকল দিক দিয়ে শোষণ করে কার্যতঃ ধ্বংস করে দিতে। আমাদের স্বাধীনতার পর থেকে গত ৪০ বছরে ভারত আমাদেরকে উল্লেখিত উপায়ে শোষণ করে গেছে আর দিন দিন এই প্রবণতা বেড়েই চলেছে।
খেয়াল করে দেখুন বাংলাদেশের প্রতি ভারতের আচরণ দেখে মনে হয় যে এই দেশ ভারতের কোন অঙ্গরাজ্য। কিন্তু মজার ব্যাপার হলো যদি এই দেশ প্রকৃতই ভারতের কোন অঙ্গরাজ্য হত তাহলে কিন্তু বাংলাদেশের ১৬ কোটি মানুষের দায়িত্বও ভারতের উপরে বর্তাতো। কিন্তু যেখানে কোন দায়িত্ব না নিয়েই ভারত আমাদের দেশ থেকে সব ধরনের সুবিধা আদায় করে নিতে পারছে সেখানে নিজের অঙ্গরাজ্য বানিয়ে অতিরিক্ত ১৬ কোটি মানুষের বোঝা নেয়ার মত বোকামী ভারতের মত কুটবুদ্ধি সম্পন্ন দেশ কেন করবে? সম্ভবতঃ একারনেই ভৌগলিক ভাবে এখনো বাংলাদেশ কে দখল করে নেয়নি বন্ধুরূপী শত্রু ভারত।
চলবে………………….