রাজনৈতিক সংঘাত আর সহিংসতা সর্বোপরি অস্থিতিশীলতা দেশের একটি স্বাভাবিক ঘটনায় পর্যবসিত হলেও অন্য যে কোনো সময়ের তুলনায় নির্বাচনের সময়টা থাকে সবচেয়ে বেশি উত্তপ্ত। ফলে এ সময়টায় ক্ষতির সম্মুখীন হন নানা শ্রেণী পেশার মানুষ। দেশের চলচ্চিত্র শিল্পও এ সময়টায় বলতে গেলে মুখ থুবড়ে পড়ে। চলচ্চিত্র মুক্তি আর নির্মাণে হিমশিম খেতে হয় প্রযোজক পরিচালকদের।
আবার আসছে নির্বাচন। দেশের মানুষ নির্বাচন উপলক্ষ্যে নানা উৎকণ্ঠা আর উদ্বেগে অতিবাহিত করছে। দেশের প্রধান দুই রাজনৈতিক জোট সংঘাতের পুনরাবৃত্তি করছে । রাজপথ উত্তপ্ত সেই সঙ্গে অশান্ত সাধারণ মানুষের মন। এমন অবস্থায় দেশের চলচ্চিত্র শিল্পের খোঁজখবর নিতে চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে বাংলামেইল।
চলচ্চিত্র পরিচালক কাজী হায়াৎ এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘রাজনৈতিক অস্থিরতা মানেই দেশের ক্ষতি, আর চলচ্চিত্রে তো অবশ্যই। কারণ দেশে রাজনৈতিক অস্থিরতা দেখা দিলে দর্শকদের মনেও অস্থিরতা দেখা দেয়। ফলে ছবি দেখার মানসিকতা থাকে না, দর্শক হল বিমুখ হয়। বর্তমানে আমাদের চলচ্চিত্র শিল্প সুদিনের পথে হাঁটছে। তাই হরতাল থাকলেও অ্যাম্বুলেন্সে করে শ্যুটিং ইউনিটে গিয়ে ছবির কাজ শেষ করি।’
পরিচালক সাফি উদ্দিন সাফি বলেন, ‘হরতাল সহিংসতা মানেই চলচ্চিত্রের চরম ক্ষতি। তাছাড়া যেকোনো রাজনৈতিক অস্থিরতাতেও এ শিল্পে নেমে আসে দুর্যোগ। গতকাল ২৫ অক্টোবর বিরোধী জোটের সমাবেশকে কেন্দ্র করে যে উৎকন্ঠা তৈরি হয় তাতে দেশের বিভিন্ন প্রেক্ষাগৃহের রাত্রিকালীন প্রদর্শনী বন্ধ রাখা হয়। যার মধ্যে আমার ছবিও আছে। অন্যদিকে রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে সবচেয়ে বেশি সমস্যা হয় তারকাদের শিডিউল মেলাতে। কারণ, কোনো কারণে নির্দিষ্ট দিনে শ্যুটিং না হলে পরবর্তীতে সেই তারকার সিডিউল মেলানো কঠিন হয়ে পড়ে। পাশাপাশি চলচ্চিত্রে বিনিয়োগকারীরাও আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে।’
পরিচালক মালেক আফসারী বলেন, ‘রাজনৈতিক অস্থিরতা মানেই চলচ্চিত্র শিল্পে অস্থিরতা। কারণ, রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে এই শিল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সকলেই আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হই। তাছাড়া হরতালের মতো কর্মসূচির কারণে অনেক ছবির সিডিউল ফেঁসে যায়। ফলে বিপাকে পড়েন তারকা নির্মাতা উভয়েই।’
পরিচালক শাহ আলম কিরণ বলেন, ‘চলচ্চিত্র একটা শিল্প, যেখানে কোটি কোটি টাকা বিনিয়োগ করা হয়। রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে সেই শিল্প ঝুঁকির মুখে পড়ে। অন্যদিকে রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যেও আমাদেরকে শ্যুটিং করতে হয় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে।’
পরিচালক শাহ মোহাম্মদ সংগ্রাম বলেন, ‘রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে চলচ্চিত্রের ব্যয় বৃদ্ধি পায়। অনেক সময় ছবির প্রযোজকরা এই বাড়তি ব্যয় বহন করতে গড়িমসি করে। পাশাপাশি শিল্পীরাও বাড়তি সম্মানী দাবি করে যা দেয়া আমাদের জন্য কষ্টকর।’
এদিকে প্রদর্শক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মিঞা আলাউদ্দিন বাংলামেইলকে জানান, নির্বাচনের সময়ে চলচ্চিত্র মুক্তি না দেয়াই উচিৎ। এটি আমার ব্যক্তিগত অভিমত। কেননা এসময়টায় মানুষের মন মানসিকতা নিরবাচনমুখী থাকে। তাছাড়া রাজনৈতিক সহিংসতার কারণে এসময় সিনেমা মুক্তি দেয়া এক ধরনের নিজের পায়ে নিজে কুড়াল মারাই হয় বলে জানি। ব্যক্তিগতভাবে আমার নিজের হাতে ২০০১ সালের পহেলা অক্টোবরে নির্বাচনের আগের সপ্তাহে একটি ছবি মুক্তি দেয়া হয়েছিল। আমি দেখেছি এতে পুরো সিনেমাটাই ব্যবসায়িকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। অথচ সেটা খুবই ভালো সিনেমা ছিলো।
তিনি বলেন, ‘এসময়টাতে অন্যান্য সময়ের তুলনায় ৬০ ভাগ ব্যবসায়িক সাফল্য থেকে বঞ্চিত হয় দেশের প্রযোজক এবং প্রদর্শকগণ। এসব নিরসনে আসলে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা দরকার। তা না হলে এ তিন মাসের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে অনেক বেগ পেতে হয় চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্টদের।’