DMCA.com Protection Status
title=""

মালদ্বীপ থেকে ফেরার অপেক্ষায় হতভাগ্য ৪০ হাজার বাংলাদেশী শ্রমিক

Paradise-Island-Resort-Spaপ্রায় ৪০ হাজার অবৈধ বাংলাদেশী কর্মী দেশে ফেরার অপেক্ষায় রয়েছে সার্কের অন্তর্ভুক্ত ক্ষুদ্র দেশ মালদ্বীপে। মালদ্বীপের নতুন সরকার সে দেশে বসবাসরত প্রায় এক লাখ বিদেশী অবৈধ অভিবাসীকে স্ব-স্ব দেশে ফেরার জন্য চলতি বছরের ৩০ জানুয়ারি পর্যন্ত সময়সীমা বেঁধে দেয়। এসময় তারা নিজ নিজ দেশের দূতাবাসের মাধ্যমে অবৈধ কর্মীদের সাধারণ ক্ষমায় স্ব স্ব দেশে ফেরার নির্দেশ দেয়। পরবর্তীতে এই সময় আরও এক মাস বাড়িয়ে ১৪ ফেব্রুয়ারির মধ্যে নিজ খরচে দেশে ফেরার জন্য নাম তালিকাভুক্তির সর্বশেষ ও দ্বিতীয় দফা সময়সীমা নির্ধারণ করে দেয়। মালদ্বীপ সরকারের নির্দেশ উপেক্ষা করে যেসব অবৈধ কর্মী স্ব-স্ব দেশে ফিরবে না তারা ঐদেশের আইনানুযায়ী শাস্তি ভোগ করবে। এক শ্রেণীর অসাধু রিক্রুটিং এজেন্সি ও ট্রাভেলস এজেন্টের মাধ্যমে চাকরি ও ট্যুরিষ্ট ভিসায় মালদ্বীপে গিয়ে এসব বাংলাদেশী কর্মী অবৈধভাবে নানা পেশায় কাজ করছে। আবার কেউ কেউ বেশি বেতনে কাজের সন্ধান করতে গিয়ে কোম্পানী পরিবর্তন করে অবৈধ হয়ে গেছে। সাধারণ ক্ষমার মেয়াদ শেষ হওয়ায় মালদ্বীপে কর্মরত হাজার হাজার প্রবাসী কর্মী এখন চরম উৎকন্ঠায় দিন কাটাচ্ছে। বিএমইটি’র এক শ্রেণীর অসাধু কর্মকর্তা যাচাই-বাছাই না করেই মালদ্বীপ গমনেচ্ছু কর্মীদের দেদারসে ছাড়পত্র দিচ্ছে। অসাধু কর্মকর্তারা ছাড়পত্র ইস্যুর ক্ষেত্রে রিক্রুটিং এজেন্সিগুলোর কাছ থেকে মালদ্বীপগামী কর্মীদের কাছ থেকে মোটা অংকের বকশিস হাতিয়ে নিচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। ২০১৩ সনে মালদ্বীপ গমনেচ্ছু কর্মীদের ছাড়পত্র ইস্যুতে বিএমইটি’র এক অসাধু কর্মকর্তা প্রকাশ্যে ঘুষ নিতে শুরু করলে সংশ্লিষ্ট রিক্রুটিং এজেন্সি’র প্রতিনিধিরা বিএমইটিতে কড়া প্রতিবাদে ফেটে পড়েছিল। ঐ সময়ে এব্যাপারে দৈনিক ইনকিলাবে খবরও প্রকাশিত হয়েছিল। ঘুষ বন্ধের লক্ষ্যে বিএমইটি’ ভবনের বিভিন্ন স্থানে সিসি ক্যামেরা স্থাপন করা হলেও ছাড়পত্র ইস্যুতে এখনো ঘুষের লেন-দেন তেমন একটা কমেনি। নাম প্রকাশ না করার শর্তে ফকিরাপুলের একটি রিক্রুটিং এজেন্সি’র মালিক এ মতামত ব্যক্ত করেছেন। বিভিন্ন রিক্রুটিং এজেন্সি’র উদ্যোগে মালদ্বীপে কর্মী নিয়োগের চাহিদাপত্র সঠিক আছে কিনা অথবা যারা মালদ্বীপে গিয়েছে তারা চুক্তি অনুযায়ী কাজ পাচ্ছে কিনা বিএমইটি কর্তৃপক্ষ তার প্রতিবেদন এখনো হাতে পাচ্ছে না বলে জানা গেছে । গতকাল বিএমইটি’র সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার সাথে টেলিফোনে যোগাযোগ করে তাকে পাওয়া যায়নি। মালদ্বীপে সাধারণ ক্ষমার সময়ের মধ্যে দেশে ফেরার জন্য প্রায় ৫ হাজার বাংলাদেশী কর্মী দূতাবাসের মাধ্যমে নাম তালিকাভুক্ত করেছে। এদের মধ্যে প্রতিদিন কিছু কিছু শ্রমিক বর্তমানে দেশে ফিরতে শুরু করছে। ফ্লাইট সংকটের দরুণ অনেক অবৈধ বাংলাদেশী কর্মী মালদ্বীপ দেশে ফিরতে পারছে না। হযরত শাহজালাল (রহ.) আর্ন্তজাতিক বিমান বন্দর সূত্র জানায় , প্রতি মাসেই বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে ৩ হাজার ৫শতাধিক প্রবাসী কর্মী আউট পাস নিয়ে খালি হাতে দেশে ফিরছে। গত জানুয়ারী মাসে বিভিন্ন দেশে মারা যাওয়া ২শ’৫২জন কর্মীর লাশ দেশে এসেছে। গত ফেব্রুয়ারী মাসে বিদেশে মারা যাওয়া কর্মীর লাশের সংখ্যা ছিল ২শ’ ১৭টি। মালদ্বীপ সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, স্বেচ্ছায় দেশে ফেরত আসা কর্মীরা পুনরায় সেদেশে যাবার সুযোগ পাবে। কিন্তু যারা নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সাধারণ ক্ষমার সুযোগ গ্রহণ করে দেশে ফিরবে না তাদের আর কখনোই মালদ্বীপ প্রবেশের সুযোগ দেয়া হবে না। মালদ্বীপের রাজধানী মালেস্থ বাংলাদেশ দূতাবাসের হেড অব চ্যান্সরি ওয়াহিদুজ্জামান লিটন গতকাল ইনকিলাবের সাথে টেলিফোনে আলাপকালে বলেন, স্বেচ্ছায় দেশে ফেরার মেয়াদ গত ৩০ জানুয়ারী শেষ হয়েছে। সাধারণ ক্ষমার আওতায় নিজ খরচে দেশে ফেরার জন্য এযাবত সাড়ে ৪ হাজার অবৈধ বাংলাদেশী কর্মী তালিকাভুক্ত হয়ে ফরম নিয়েছে। ফ্লাইট সংকটের দরুণ অনেক প্রবাসী কর্মী স্বেচ্ছায় দেশে ফিরতে পারছে না বলে তিন্ িউল্লেখ করেন। এক প্রশ্নের জবাবে হেড অব চ্যান্সরি বলেন, মালদ্বীপ সরকার অবৈধ বাংলাদেশীদের দেশে ফিরে যেতে প্রেসার দিচ্ছে না। ধরপাকড়ও শুরু হয়নি। তিনি বলেন, যাদের পাসপোর্ট নেই অথবা অবৈধ হয়ে পালিয়ে পালিয়ে কাজ করছে তারা দেশে চলে গেলে পুনরায় মালদ্বীপে আসার সুযোগ পাবে। হেড অব চ্যান্সেরি বলেন, মালদ্বীপে প্রায় ৭০ হাজার বাংলাদেশী কর্মরত রয়েছে। উল্লেখ্য, বর্তমানে মালদ্বীপের জনসংখ্যা সাড়ে তিন লাখ আর সেদেশে বাংলাদেশী কর্মী রয়েছে প্রায় এক লাখ। দেশটির আয়ের উৎস পর্যটন ও মাছ শিকার। বাংলাদেশী কর্মীরা মূলত: হোটেলে ও সমুদ্রে মাছ শিকারে নিয়োজিত ট্রলারে বোটম্যান হিসেবে কর্মরত। এদের মাসিক আয় প্রায় এক হাজার মার্কিন ডলার। অতি সম্প্রতি গ্লোবাল ইকোনমিস্ট ফোরামের প্রেসিডেন্ট ডক্টর এনায়েত করিম মালদ্বীপ সফর শেষে ঢাকায় ফিরে ইনকিলাবকে জানান, অনেক সম্ভাবনা থাকা সত্বেও মালদ্বীপে বাংলাদেশী কর্মীদের ভাগ্য বিপর্যয় ঘটেছে। তিনি বলেন, দেশটিতে বাংলাদেশী কর্মীদের ব্যাপক চাহিদাও রয়েছে। কিন্তু পূর্বে থেকে বাংলাদেশ সরকার সতর্ক না থাকায় এই বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। তিনি বলেন, যেসব অবৈধ কর্মী ঐ দেশে পালিয়ে থেকে যাবে তাদেরকে ঐ দেশের আইনানুযায়ী শাস্তি ভোগ করতে হবে। বাংলাদেশী ন্যাশনাল ব্যাংক তাদের নিজস্ব রেমিটেন্স হাউজের মাধ্যমে সরাসরি প্রবাসী আয় দেশে প্রেরণের উদ্যোগ নেবার পর মালদ্বীপে খুবই ভাল অবস্থানে ছিলেন বাংলাদেশী কর্মীরা। কিন্ত মালদ্বীপ সরকারের সাম্প্রতিক পদক্ষেপ ভাগ্য হনন করে নিল প্রবাসী বাংলাদেশীদের। ডক্টর এনায়েত করিম বলেন, মালদ্বীপ সফরকালে তিনি বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি কর্মকর্তাদের এবং ভুক্তভুগি বাংলাদেশী কর্মীদের সাথে কথা বলেছেন। উভয় পক্ষই মালদ্বীপ সরকারের এই পদক্ষেপে উদ্বিগ্ন। তিনি বলেন, মালদ্বীপের শ্রম বাজার ধরে রাখতে জরুরী ভিত্তিতে বাংলাদেশ সরকারের কূটনৈতিক পদক্ষেপ গ্রহণ করা উচিত।

Share this post

scroll to top
error: Content is protected !!