বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘আজকে আওয়ামী লীগ জোর গলায় কথা বলছে। তারা বলছে, পাঁচ বছরই ক্ষমতায় থাকবে। কিন্তু বাংলাদেশের মানুষ উপজেলা নির্বাচনে বলে দিয়েছে, আওয়ামী লীগকে আমরা পছন্দ করি না। আওয়ামী লীগ তুমি যাও, বিদায় হও।’
ফখরুল বলেন, ‘যারা জানে পাঁচ বছর থাকতে পারবে না, তারাই জোর গলায় কথা বলে। আওয়ামী লীগের বিদায় ঘনিয়ে এসেছে। এই বিদায়কে নিশ্চিত করতে আমাদের সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।’
বৃহস্পতিবার বিকেলে জাতীয় প্রেসক্লাব মিলনায়তনে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ৮ম কারাবন্দি দিবস উপলক্ষ্যে আয়োজিত আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন। ‘বাংলাদেশ ছাত্র ফোরাম ও উত্তরাঞ্চল ছাত্র ফোরাম’ যৌথভাবে এ সভার আয়োজন করে।
তারেক রহমানকে বাংলাদেশের ভবিষ্যত নেতা আখ্যায়িত করে তিনি বলেন, ‘তারেক রহমান কোন প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতি ছিলেন না, কিন্তু তারপরও এক এগারোর সময় তারেক রহমানকে বন্দি করলেন কেন। কারণ তারেক রহমান মানুষের স্বপক্ষের রাজনীতি করেন, যে রাজনীতি মানুষকে স্বাতন্ত্র দিয়েছেন, সে রাজনীতি তিনি করতেন।’
তিনি বলেন, ‘তারেক রহমান বিদেশে নির্বাসিত রয়েছেন দেশে আসার কোন পরিবেশ নেই। কিন্তু সেখানে বসে তিনি বাংলাদেশ নিয়ে ভাবেন। অনেকেই আছেন যারা তারেক রহমানের বিরুদ্ধে কথা বলতে পারলেই নিজেকে ধন্য মনে করেন। একটি মামলাও এখনো প্রমাণিত হয়নি। মানি লন্ডারিং মামলায় বেকসুর খালাস দেয়া হয়েছে। যেই বিচারক খালাস দিয়েছেন তিনি জীবনের ভয়ে বিদেশে পালিয়ে গেছেন।’
আওয়ামী লীগকে গণবিরোধী দল ও সরকার আখ্যা দিয়ে তিনি বলেন, আজকে আওয়ামী লীগের বক্তব্যে মনে হয় তারা যেন আজীবন ক্ষমতায় থাকতে এসেছে। তাদের পরিকল্পনাও সেটাই। আওয়ামী লীগের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যই হচ্ছে গণতন্ত্রে লেবাস পরে একদলীয় শাষণ ব্যবস্থা কায়েম করা। আজকে সেই ব্যবস্থাই চলছে। গণতন্ত্রের উপর, কথা বলা, স্বাধীনতা, স্বাধীন চিন্তার উপর বাকশালী নিয়ন্ত্রণ আবার চেপে বসেছে।
ফখরুল অভিযোগ করেন, আওয়ামী লীগ দখলদার বাহিনীর মতো জনগণের উপর চেপে বসেছে। তারা বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের হত্যা করে আর বলে বন্দুকযুদ্ধে মারা গেছে। এই দেশের তরুণ যুবকরা বেওয়ারিশ লাশ হয়ে যাচ্ছে। গত তিন মাসে ৬১ জনকে গুম করা হয়েছে। শুধুমাত্র ঢাকায় ২২ জনকে গুম করা হয়েছে তাদের কোন খবর নেই, তারা নিখোঁজ হয়ে গেছে। ৭১ থেকে ৭৫ সাথে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বেই হাজার হাজার হত্যা করা হয়। আজকে আবার তার পুনরাবৃত্তি হচ্ছে।
বাংলাদেশ এখন একটি ফ্যাসিবাদী একটি রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে উল্লেখ করে ফখরুল বলেন, ‘বিরোধী দলকে নিশ্চিহ্ন করতে সবরকম ব্যবস্থা করা হয়েছে। জাতির অস্তিত্ব বিপন্ন, স্বাধীনতা বিপন্ন, আওয়ামী লীগ রাষ্ট্র যন্ত্রের সবকিছু দখল করে বসে আছে, আমরা বিচার পাই না। পুলিশের কাজ হচ্ছে বিরোধী দলকে দমন করা। এর বিরুদ্ধে যদি আমরা প্রতিরোধ না গড়ে তুলি তা হলে আমরা দেশের স্বাধীনতা ও গণতন্ত্রকে রক্ষা করতে পারবো না। আজকে আমাদের লড়াই মানুষের গণতন্ত্র ও অধিকারকে রক্ষা করার লড়াই।’
বর্তমান সরকারের অপশাসন রুখতে দেশের তরুণ ও যুবকদেরকে সংঘবদ্ধ হয়ে সংগ্রাম করার আহ্বান জানিয়ে এসময় তিনি তারেক রহমানকে দেশে ফিরিয়ে আনার জন্য, খালেদা জিয়ার নেতৃত্বকে শক্তিশালি করার জন্য, জিয়াউর রহমানের স্বপ্নকে বাস্তবায়িত করার জন্য সকলকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান।
সভায় যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবীর রিজভী বলেন, ‘আমাদের যে হীরের খানি আছে বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ তার উপরে আধিপত্যবাদের একটি দানব ঘুমিয়ে আছে তাকে সরাতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘মনমোহন সিং এদেশে সেকুল্যার সরকার চান। এদেশে মনমোহন সিং সোনিয়া গান্ধি ও রাহুল গান্ধির ইচ্ছার দাম আছে। আমাদের জনগণের ইচ্ছার কোন দাম নেই। সেজন্য আমরা পানি পাচ্ছি না। আমাদের মধ্যে কিছু লোক তাদের মোসাহেবী করছেন।’
তিনি বলেন, ‘এই দেশে সাংস্কৃতিক আগ্রাসন চালিয়ে সার্বভৌমত্ব দুর্বল করতে, দিল্লির কথা শুনতে, দিল্লির চশমা দিয়ে সারা বিশ্বকে দেখতে, তারেক রহমানের উপর নির্যাতন চালানো হয়েছে।’
আলোচনা সভায় ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. পিয়াস করিম বলেন, ‘দেশ ইতিহাসের চরম ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে। নব্য বাকশালী শাসন কায়েমে দেশের স্বাধানতা, সার্বভৌমত্ব হুমকির মুখে পড়েছে। কারণ আজ দেশের নীতি ‘নির্ধারণ’ হয় পাশ্ববর্তী একটি দেশের রাজধানীতে বসে। এজন্য দেশ স্বাধীন হয়নি, শহীদরা রক্ত দেয়নি।’
বিজেপির চেয়ারম্যান আন্দালিব রহমান পার্থের সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও ড্যাব (ডক্টর অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ) সাধারণ সম্পাদক এ জেড এম জাহিদ হোসেন, বিএনপির মানবাধিকার বিষয়ক সম্পাদক নাসির উদ্দিন অসীম, সাংস্কৃতিক বিষয়ক সম্পাদক গাজী মাযহারুল আনোয়ার, চেয়ারপারসনের বিশেষ সহকারী অ্যাডভোকেট শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব হেলাল খান, রিজিয়া পারভীন প্রমুখ।