বিয়ের আগে বলেছিল চট্টগ্রামে পরিবহনসহ একাধিক ব্যবসা রয়েছে। বিয়ের পর জানলাম সবটাই মিথ্যা। ব্যবসা একটা করতো ঠিকই, তবে তা ছিল দুই নম্বরি। সব যখন জানলাম তখন ফেরার আর কোন পথ ছিল না। বাধ্য হয়েই নিরবে দুষ্ট স্বামীর কথা মানতে হয়েছে। আর তার কথা মানতে গিয়ে তার প্রতারণার বদনামী হলাম আমি। চট্টগ্রাম মেট্রোপিলটন পুলিশের (সিএমপি) গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের জিজ্ঞাসাবাদে এমনটাই বলেছিলেন প্রতারক চক্রের সদস্য কুলসুমা আক্তার তানিয়া (২৭)। মোবাইল ফোনে প্রেমের ফাঁদ পেতে প্রতারণা করে অর্থ হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগে পুলিশ গত বৃহস্পতিবার গভীর রাতে চান্দগাঁও এলাকা থেকে তাকে ও তার স্বামী মুন্না কামালসহ চারজনকে গ্রেফতার করে। গ্রেফতার অপর দু'জন হচ্ছে রবি ও আব্দুস সাত্তার। গোয়েন্দা পুলিশ গতকাল শনিবার তাদেরকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছে।
সিএমপির অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (গোয়েন্দা) বাবুল আক্তার বলেন, গ্রেফতারকৃত তানিয়া কখনো ছাত্রী, কখনো মডেল আবার কখনো প্রবাসীর স্ত্রী পরিচয় দিয়ে মোবাইল ফোনে বিভিন্ন লোকের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তুলতো। এরপর সুবিধামত সময়ে তাদেরকে বাসায় ডেকে আনত। তানিয়ার স্বামীসহ অন্যরা জোর করে টার্গেট ব্যক্তির সঙ্গে তানিয়ার ছবি তুলে ভয়ভীতি দেখিয়ে টাকা হাতিয়ে নিত। এ ধরনের বেশ কয়েকটি অভিযোগ পাওয়ার পর গোয়েন্দা পুলিশ অনুসন্ধান শুরু করে। এরই ধারাবাহিকতায় তানিয়া ও তার স্বামীসহ চারজনকে গ্রেফতার করা হয়। তিনি আরও বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃতরা স্বীকার করেছে, চট্টগ্রাম নগরীতে এ ধরনের আরও কয়েকটি চক্র রয়েছে।
বাবুল আক্তার বলেন, এ চক্রের পুরুষ সদস্যরা ব্যবসায়ী, ব্যাংকারসহ বিভিন্ন পেশার লোকদের টার্গেট করে তাদের মোবাইল নম্বর সংগ্রহ করে। এরপর নারী সদস্যদের সেসব মোবাইল নম্বর দিয়ে প্রেমের নামে প্রতারণার ফাঁদ পাতে। এক পর্যায় দেখা করার প্রস্তাব দেয়। আর দেখা করতে গেলেই আটকে (ভাড়া করা ঘরে) রেখে ছবি তোলে। পরবর্তীতে ওই ব্যক্তির পরিবার বা বন্ধু বান্ধবদের কাছে ফোন করে বিকাশের মাধ্যমে টাকা সংগ্রহ করে। তাদের রয়েছে একাধিক বিকাশ নম্বর। আবার অনেক সময় এ চক্রের মহিলারা টার্গেটকৃত ব্যক্তির সাথে রিকশায় ওঠার সঙ্গে সঙ্গে দলের অন্য সদস্যরা তাকে ধরে জোরপূর্বক তার কাছ থেকে টাকা-পয়সা ও মোবাইল ছিনিয়ে নেয়।
পুলিশের এই গোয়েন্দা কর্মকর্তা বলেন, তানিয়া জানিয়েছে, লোক বুঝে সে প্রেমের অভিনয় করতো। তবে অধিকাংশ সময় নিজেকে প্রবাসীর স্ত্রী বলে পরিচয় দিত। আর বলতো, সে তার কন্যা সন্তানসহ একা বসবাস করে।
বাবুল আক্তার বলেন, জিজ্ঞাসাবাদে এসএসসি পাস তানিয়া জানায়, তার গ্রামের বাড়ি চট্টগ্রাম জেলার রাঙ্গুনিয়া থানার সন্দ্বীপপাড়ায়। পাঁচ বছর আগে ফেনী জেলার দাগনভুঞা থানার বারইকুনি গ্রামের মুন্না কামালের সঙ্গে তার বিয়ে হয়। তবে মুন্না আগেই থেকে চট্টগ্রামে বসবাস করছে। বিয়ের পর জানতে পারে মুন্না আগেই দুটি বিয়ে করেছিল। তার কোন নির্ধারিত ব্যবসা নেই। মুন্না এক সময় ঘরভাড়া নিয়ে নারীদের দিয়ে দুই নম্বরি ব্যবসা করতো। মাঝে টেম্পু চালাতো। বিয়ের পর স্বামী তাকে জোর করে প্রতারণার সঙ্গে যুক্ত করে। গত তিন বছর ধরে প্রতারণার সঙ্গে যুক্ত থাকলেও পুলিশের হাতে তাকে ধরা পড়তে হয়নি।
অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার বাবুল আক্তার বলেন, প্রতারকদের প্রতিটি দলেই রয়েছে একজন করে নারী সদস্য। অন্য নারীরা হচ্ছে বগার বিল এলাকার জেসি, ইস্পাহানি এলাকার শারমিন ও স্টিলমিল এলাকার সুমি। পুরুষ সদস্যরা হচ্ছে জাফর, নূরুদ্দিন, ফারুক, সিলেটি আনোয়ার, বস্তি শাহাবুদ্দিন, সেলিম, সুমি, জুয়েল। তাদেরকে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।
জিজ্ঞাসাবাদে মুন্নাও প্রতারণার সঙ্গে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে জানিয়েছে, আগে সে টেম্পু চালালেও কয়েক বছর ধরে স্ত্রী তানিয়া ও ভাগিনা নূরুউদ্দিনকে নিয়ে এভাবে প্রতারণা করে মানুষের কাছ থেকে অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে।
গ্রেফতারকৃত মোহাম্মদ রবি জানায়, গত তিন বছর আগে মোবাইল ফোনে তানিয়ার সঙ্গে তার পরিচয়। পরিচয়ের এক পর্যায় তানিয়া তাকে মোবাইল ফোনে বাকলিয়ার একটি ঘরে ডেকে নেয়। এসময় তার কাছ থেকে তানিয়া মোবাইল ফোন ও ১২ হাজার টাকা নিয়ে নেয়। পরবর্তীতে একদিন রাস্তায় তানিয়ার সঙ্গে তার দেখা হয়। তানিয়ার কথামত তাদের দলে সে যোগ দেয়। তার গ্রামের বাড়ি চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া থানার গুচ্ছগ্রামে। গ্রেফতারকৃত আব্দুস সাত্তার তার ঘনিষ্ঠ বন্ধু।