পুলিশ কর্মকর্তা মাহফুজুর রহমান ও তার স্ত্রী স্বপ্না রহমানকে হত্যার ঘটনায় তাদের একমাত্র মেয়ে ঐশী রহমানসহ চারজনকে আসামি করে দুটি চার্জশিট দিয়েছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। একটি অভিযোগপত্রে ঐশীর সঙ্গে তার বন্ধু জনি ও রনিকে আসামি করা হয়েছে। আর অপ্রাপ্তবয়স্ক হওয়ায় কিশোর আদালতে বিচারের সুপারিশ করে গৃহকর্মী সুমীর বিরুদ্ধে দেয়া হয়েছে আলাদা অভিযোগপত্র। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ডিবির পরিদর্শক আবু আল খায়ের জানান, গতকাল রবিবার সকালে ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে তিনি অভিযোগপত্র জমা দিয়েছেন। এদিকে সামনে পরীক্ষা, তাই কারাগারে ঐশীকে পাঠ্যবই দিয়ে গেছেন তার চাচা। সেই বই নিয়ে ঐশী রহমান এখন পড়াশোনায় ব্যস্ত বলে জানিয়েছেন কাশিমপুরের কারা কর্মকর্তারা।
গত বছরের ১৬ আগস্ট রাজধানীর চামেলীবাগের একটি ফ্ল্যাট থেকে পুলিশের বিশেষ শাখার পরিদর্শক মাহফুজ ও স্বপ্নার লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। পরে তাদের স্কুলপড়ুয়া মেয়ে ঐশী থানায় আত্মসমর্পণ করেন। এরপর পুলিশ ঐশীদের বাড়ির গৃহকর্মী খাদিজা খাতুন সুমী (১১) এবং ঐশীর বন্ধু মিজানুর রহমান রনি ও আসাদুজ্জামান জনিকে গ্রেফতার করে। ও লেভেলের ছাত্রী ঐশীকে গ্রেপ্তারের পর তার বয়স নিয়ে আলোচনা উঠলে আদালতের নির্দেশে ঢাকা মেডিক্যালে পরীক্ষা করে পুলিশ জানায়, ঘটনার সময় তার বয়স ১৯ এর কাছাকাছি, আর সুমীর ১১। ঐশী ও তার বন্ধুরা বর্তমানে কারাগারে রয়েছেন। সুমী রয়েছে গাজীপুরে কিশোরী উন্নয়ন কেন্দ্রে। পুলিশ বলছে, সুমী খুনের সঙ্গে জড়িত না হলেও ঐশীকে সহায়তা করেছে। আর রনি ও জনি তাদের আশ্রয় দিয়ে সহযোগিতা করেছেন। গোয়েন্দা কর্মকর্তা খায়ের বলেন, সুমী অপ্রাপ্তবয়স্ক বলে কিশোর আদালতে তার বিচারের সুপারিশ করা হয়েছে। পুলিশ কর্মকর্তা মাহফুজ স্ত্রী, দুই সন্তান ও গৃহকর্মীকে নিয়ে চামেলীবাগের ওই ফ্ল্যাটে থাকতেন। যেদিন তাদের লাশ পাওয়া গিয়েছিল, তার আগের দিন বাড়ি থেকে ভাই ও গৃহকর্মীকে নিয়ে বেরিয়ে যান ঐশী। পরদিন ভাইকে বাড়িতে ফেরত পাঠালেও নিজে আসেননি ঐশী। পরে সুমীকে নিয়ে থানায় ধরা দেন তিনি। ঐশীর কাছে পাওয়া গয়না এবং বাসায় খুলে রেখে যাওয়া তার রক্তমাখা পোশাকে পাওয়া নমুনার ডিএনএ পরীক্ষায় হত্যাকাণ্ডে তার সম্পৃক্ততার প্রমাণ পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
এদিকে সামনে পরীক্ষা, তাই কারাগারে পড়াশোনা করছে ঐশী। ঢাকার অক্সফোর্ড ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের 'ও' লেভেলের ছাত্রী ঐশী অপ্রাপ্তবয়স্ক বিবেচনায় প্রথমে তাকে সংশোধনাগারে পাঠানো হয়েছিল, পরে বয়সের প্রমাণ পেয়ে তাকে কাশিমপুর কারাগারে নেয়া হয়। কারা তত্ত্বাবধায়ক মো. জাহাঙ্গীর কবির জানান, সামনে ঐশীর পরীক্ষা। ইতিপূর্বে আদালত তাকে পাঠ্যবই সরবরাহের নির্দেশ দিলে গত শনিবার দুপুরে তার চাচা লুত্ফর রহমান কিছু পাঠ্যবই দিয়ে গেছেন। ঐশী এখন ওইসব বই পড়ছে। লেখাপড়ার ফাঁকে ক্যারাম ও লুডুও খেলছে। ঐশী যে কারাগারে রয়েছে সেখানে বন্দীর সংখ্যা ২৬৯ জন বলে কারাধ্যক্ষ আমজাদ হোসেন জানিয়েছেন। এর মধ্যে ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি ১২ জন এবং যাবজ্জীবন দণ্ডপ্রাপ্ত ২০/২৫ জনের মতো।