বাংলাদেশের পক্ষে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান তার; দ্বিতীয় সর্বোচ্চ উইকেটও তার। এই দুটো পরিসংখ্যানই এটা বোঝাতে যথেষ্ট যে, বাকী সব ফরম্যাটের মতো এই ফরম্যাটেও বাংলাদেশের সেরা ভরসা সাকিব আল হাসান।
মাঝে নিষেধাজ্ঞার কারণে দুটো ম্যাচ মাঠে থাকতে না পারলেও ফিরে নিজের ঝলকটা দেখিয়েছেন। আর গতকাল বিশ্বকাপের সূচনালগ্নে দলের হয়ে শোনালেন আশার কথা। 'ওপেন সেশন' নামে এই কথোপকথনে বলা সাকিবের কথাবার্তার নির্বাচিত অংশ—
বিশ্বকাপে কেমন করবে বাংলাদেশ?
ভালো করবো আমরা। আমি মনে করি, ভালো করবো।
ঠিক কোন্ ফলাফলকে আমরা ভালো বলে মানবো?
ভালো করা বলতে, প্রথম পর্বে তিন ম্যাচ জেতাই এখন পর্যন্ত আমার মনে হয় আমাদের জন্য ভালো রেজাল্ট। তার পরেরটা পরে। আপাতত তিন ম্যাচ জিতলেই তো ভালো রেজাল্ট।
বাস্তবতাটা কী? কতোদূর যাওয়া সম্ভব আমাদের?
যেহেতু টি-টোয়েন্টি কোন কিছুই হতে পারে। আমাদের কাছে নেপালও একটা বড় দল। আমরাও পাকিস্তান বলেন, ইন্ডিয়া বলেন, অস্ট্রেলিয়া বলেন, ওদের কাছেও আমরা বড় দল। যেহেতু টি-টোয়েন্টি এটা দুই বলের খেলা, দুই ওভারের খেলা, এক ওভারের খেলা, এমনকি একটা বলও ম্যাচ বদলে দিতে পারে। স্বাভাবিকভাবেই কেউ আগে থেকে বলতে পারবে না এরা ফেভারিট। ফেভারিট একটা থাকতে পারে তাদের অতীত রেকর্ড হিসেবে। ম্যাচে নামার পর কেউ ফেভারিট থাকে না। যারা ১২০ আর ১২০ মিলিয়ে ২৪০টা বল ভালো খেলবে তারাই জিতবে।
আফগানিস্তানই নিশ্চয়ই প্রথম রাউন্ডে মূল চ্যালেঞ্জ?
আমার কাছে মনে হয় না, আফগানিস্তানকে নিয়ে বেশি চিন্তা করা উচিত। আমরা কতটা উন্নতি করতে পারি সেটা গুরুত্বপূর্ণ। আমরা যদি আমাদের সেরা ক্রিকেটটা খেলতে পারি আমার মনে হয় আমরা খুবই ভালো দল বিশ্বের অনেক বড় বড় দলকে হারানোর জন্য। আমার কাছে মনে হয়, আমাদের ওই ভাবে চিন্তা করা উচিত যে, আমরা কতটা বেটার পরফর্ম করতে পারি মাঠে। আর আফগানিস্তান ছাড়াও কিন্তু আরও দুটো দল আছে। ফলে এক জায়গাতে চিন্তা আটকে রাখা ঠিক হবে না।
শ্রীলংকা সিরিজ, এশিয়া কাপের ব্যর্থতা কতটা ভোলা সম্ভব?
আমার তো মনে হয়, সবাই ভুলে গেছে। কারও মনে আছে বলে তো আমার কাছে মনে হয় না। এটা টি-২০ খেলা। ওগুলো ছিলো ওয়ানডে। সম্পূর্ণ ভিন্ন।
টানা বেশ কিছু হার, কিছু বিতর্ক নিয়ে ঘরের মাটিতে বড় টুর্নামেন্ট শুরু করতে যাওয়া। একটু কি বাড়তি চাপ?
আমার কাছে না। অন্যদের কাছে কি জানি না। যেহেতু ২০১১ বিশ্বকাপেও আমাদের মাটিতে খেলা হয়েছে। আমরা সব ম্যাচ এখানে খেলছি। আমরা জানি যে, কি ধরনের চাপ আসতে পারে।
দেশের মাটিতে বিশ্বকাপকে স্মরণীয় করে রাখার কোনো পরিকল্পনা আছে?
আমরা সবাই আশাবাদী যে, আমরা ভালো করবো। সবার ইচ্ছাও আছে ভালো করার। দেশের মাটিতে খেলা। সুযোগ বার বার আসবে না। আর কবে দেশের মাটিতে বিশ্বকাপ হবে। স্বাভাবিকভাবে আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
গত টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে পাকিস্তানের বিপক্ষে অসাধারণ একটা ইনিংস খেলেছিলেন। ওটার পুনরাবৃত্তি চান?
আমার কাছে ম্যাচ জেতা গুরুত্বপূর্ণ। ওরকম ইনিংস খেলে পরাজয়ের চেয়ে অনেক ভালো ৫ রান করেও দলের জয় পাওয়া। সেটা হলেই আমি খুশী।
সব মিলিয়ে কী একটু দুশ্চিন্তা আছে?
মনে হয় না কারও দুশ্চিন্তা আছে। সবাই গতকাল এসেছে। একটা টিম মিটিং হইছে। সবাই ফোকাসড।
দেশের মানুষের তো অনেক প্রত্যাশা…
সেটা ঠিক আছে। তবে আমার কাছে মনে হয় প্রত্যাশা—আশা এসব না করে সমর্থন করা উচিত। এটা গুরুত্বপূর্ণ।
এই দর্শকের উপস্থিতি তো আপনাদের জন্য ইতিবাচকও বটে।
হ্যাঁ। আমার কাছে মনে হয় এই সাপোর্টটাই করা উচিত আশা-প্রত্যাশা না করে। অনেকে বলে না, 'কাপ আসছে আর যেতেই দিব না।' এত কিছু চিন্তা না করে সাপোর্ট করুক দলকে তখন দল আরও ভালো করবে।
এই সাপোর্টটা নিশ্চয়ই খারাপ সময়ে বেশী দরকার?
অবশ্যই। সাপোর্ট করার জন্য ক্রিকেট বুঝতে হবে এর কোন মানে নেই। যে কোনো দর্শকের সমর্থনই গুরুত্বপূর্ণ।
বিগ ব্যাশ খেলেছেন, আইপিএল খেলছেন, অভিজ্ঞতাগুলো এখানে কাজে লাগবে?
তা তো কিছুটা লাগবেই। দলে বাকী যারা আছে তারা এরকম বাইরে না খেললেও দেশের ভেতর অনেক টি-টোয়েন্টি খেলেছে। দুইটা বিপিএল অনেক হেল্প করবে খেলোয়াড়দের। সবার ভেতরে এই ধারণা আছে কিভাবে টি-টোয়েন্টি খেলতে হয়। প্রথম যখন শুরু করেছিলাম তখন হয়তো ওই ধারণাটা ছিল না।
ড্রেসিংরুমের অবস্থা কি?
সত্যি কথা এখনও প্র্যাকটিস শুরু হয়নি। আজ থেকে প্র্যাকটিস। কালকে একটা মিটিং হয়েছে। বেশ কয়েকজন নতুন আছে যারা এশিয়া কাপের দলে ছিল না। বেশ কয়েকজন ফিট ছিল না, ওরাও আসছে। আমি যেটা বললাম এশিয়া কাপে কি হয়েছে ওটা শেষ হয়ে গেছে। একটা দিক থেকে ভালো হয়েছে যে, আমাদের রিকভারি করার সময় আছে। ছয়টা দিন আছে প্র্যাকটিস করার, বিশ্বকাপে ভালো করার।