বাংলাদেশের পোশাক কারখানাগুলোতে নিরাপত্তাজনিত বিভিন্ন ধরনের ত্রুটির সন্ধান পেয়েছে আন্তর্জাতিক ক্রেতা ও ট্রেড ইউনিয়নের জোট অ্যাকর্ড । সাভারে রানা প্লাজা ধসের প্রায় এক বছর পর দেশের বিভিন্ন পোশাক কারখানা পরিদর্শন শেষে তারা এ রিপোর্ট প্রকাশ করেছে। গত বছরের এপ্রিল মাসে ওই ভবনটি ধসে ১১শ শ্রমিক প্রাণ হারানোর পর তারা কারাখানাগুলোতে পরিদর্শন শুরু করে।এ পর্যন্ত তারা আশিটির মতো কারখানা পরিদর্শন করেছে বলে জানা গেছে।
মঙ্গলবার প্রকাশিত প্রতিবেদনে অ্যাকর্ড বলছে, কাঠামোগত ত্রুটি ছাড়াও কারখানাগুলোতে তারা অগ্নি নিরাপত্তাজনিত নানা ধরনের সমস্যা দেখতে পেয়েছেন।এসব ত্রুটি সংশোধনের জন্যে এসব কারখানাকে তিন থেকে ছ'মাস পর্যন্ত সময় বেঁধে দেওয়া হয়েছে।
অ্যাকর্ড প্রকাশিত প্রতিবেদনে বাংলাদেশের ১০টি পোশাক কারখানার নাম উল্লেখ করে প্রত্যেক কারখানার ভবন কাঠামো, অগ্নি ও বৈদ্যুতিক নিরাপত্তা ব্যবস্থার ত্রুটিগুলো আলাদা করে চিহ্নিত করা হয়েছে এবং সমস্যা সমাধানের জন্য প্রয়োজনীয় সুপারিশ করা হয়েছে। দশটি কারখানার ওপর দেওয়া ওই প্রতিবেদনে অ্যাকর্ড বলছে, কাঠামোগত ত্রুটি ছাড়াও কারখানাগুলোতে তারা অগ্নি-নিরাপত্তাজনিত নানা ধরনের সমস্যা দেখতে পেয়েছেন।
অ্যাকর্ডের প্রধান নিরাপত্তা পরিদর্শক ব্র্যাড লোয়েন সংবাদ সম্মেলনে বলেন,‘ ভবনের অবকাঠামোগত দিক, অগ্নি ও বৈদ্যুতিক নিরাপত্তাব্যবস্থা পর্যবেক্ষণ করে নিরাপত্তার জন্য হুমকি এমন ত্রুটি চিহ্নিত করা হয়েছে এবং প্রত্যেক কারখানার জন্য আলাদা তিনটি করে মোট ত্রিশটি প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে। সব কারখানার ত্রুটি প্রায় একই রকম পাওয়া গেছে। ভবনের কাঠামোগত সমস্যা আছে। সক্ষমতার চেয়ে বেশি ওজনের পণ্য ও যন্ত্রপাতি আছে অনেক কারখানায়। বৈদ্যুতিক তারের সংযোগগুলোও নিরাপদ নয়। ফায়ার অ্যালার্ম নেই। দ্রুত বহির্গমন সিঁড়ি যথেষ্ট প্রশস্ত নয়। এমনকি কিছু ফ্যাক্টরিতে ফায়ার ডোর নেই।’
প্রতিবেদনে কারখানাগুলোর সমস্যা অনুযায়ী সংস্কারের জন্য যে পদক্ষেপগুলোর কথা বলা হয়েছে সেগুলোতে গুরুত্ব বিবেচনায় তিন থেকে ছয় মাস পর্যন্ত সময়সীমার সুপারিশ করা হয়েছে । তবে কারখানা মালিকের সাথে আলোচনা করে এই সময়সীমা বাড়ানো কমানো সম্ভব বলে উল্লেখ করেন লোয়েন।
তবে সমস্যাগুলো দ্রুত সমাধানের বিষয়ে তাগিদ দিয়েছে অ্যাকর্ড।
নিরাপত্তা ঝুঁকিতে থাকা কারখানাগুলো সম্পর্কে সংবাদ সম্মেলনে অ্যাকর্ডের নির্বাহী পরিচালক রব ওয়েজ বলেছেন, সমস্যা সমাধানের ব্যয়ভার মালিকদেরই প্রাথমিকভাবে জোগাতে হবে। তিনি বলেন,‘নিরাপত্তা ঝুঁকিতে থাকার কারণে যদি কোন কারখানা সাময়িকভাবে বন্ধ করতে হয় তাহলে শ্রমিকদের বেতনভাতা পরিশোধের দায়িত্ব মালিককেই নিতে হবে। এমনকী সমস্যা সমাধানে ভবন সংস্কার বা স্থানান্তরের খরচও মালিকদেরকেই প্রাথমিকভাবে বহন করতে হবে। তবে মালিকপক্ষ যদি দায়িত্ব নিতে ব্যর্থ হয় তাহলে আলোচনা সাপেক্ষে অ্যাকর্ড সহায়তা করবে।’
অ্যাকর্ড পরিদর্শনে সোয়েটার কারখানা সফটেক্সে ভয়াবহ কাঠামো জনিত ক্রুটি ধরা পরার পর কারখানাটি চলতি সপ্তাহে সাময়িকভাবে বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। এ কারখানাটিতে সবমিলিয়ে তিন হাজারের বেশি শ্রমিক কাজ করত।
প্রসঙ্গত, বাংলাদেশ অ্যাকর্ড ফাউন্ডেশন হচ্ছে দেড়শটি পোশাক ব্রান্ড ও খুচরা বিক্রিতা প্রতিষ্ঠানের একটি গোষ্ঠি। এতে ২০টির বেশি দেশের প্রতিনিধি রয়েছে। রানা প্লাজা ভবন ধসে এক হাজারেরও বেশি শ্রমিক নিহত হওয়ার প্রেক্ষিতে বাংলাদেশের পোশাক কারখানার ভবন নিরাপত্তা ও অগ্নি নির্বাপন ব্যবস্থার উন্নয়নে ২০১৩ সালের ১৩ই মে অ্যাকর্ড চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। অ্যাকর্ড আগামী সেপ্টেম্বরের মধ্যে বাংলাদেশের ১৫শ কারখানা পরিদর্শন করার পরিকল্পনা করেছে। গ্রুপের পরিদর্শক দলের প্রধান ব্রাড লোয়েন বলেন,‘আমাদের পরিদর্শন কর্মসূচি পুরোদমে এগিয়ে চলছে। এটি আমাদের জন্য অনেক বিরাট ব্যাপার।’
অ্যাকর্ডের পরিদর্শন দলে দেশি বিদেশি মিলিয়ে প্রকৌশলী এবং টেকনিশিয়ানদের ৩৮টি গ্রুপ রয়েছে। তাদের প্রতি মাসে ২৫০টি ফেক্টরি পরিদর্শনের পরিকল্পনা রয়েছে।
এখন পর্যন্ত ঢাকা ও চট্টগ্রাম শহরের ৫ তলার উপরের ভবনে থাকা ঝুঁকিপূর্ণ কারখানাগুলো পরিদর্শন করছে অ্যাকর্ড। সংবাদ সম্মেলনে অ্যাকর্ড জানায় সোমবার পর্যন্ত ৭৮টি কারখানা পরিদর্শন শেষ হয়েছে এবং মঙ্গলবারের মধ্যে ৯০টি কারখানা পরিদর্শন শেষ হয়ে যাবে বলে ধারণা করছে তারা।
শ্রমিকদের প্রতিনিধি হিসেবে থাকা অ্যাকর্ডের স্টিয়ারিং কমিটির সদস্য রায় রমেশচন্দ্র বলেন, অ্যাকর্ডের এই উদ্যোগে যেসব মালিকেরা আতংকিত হচ্ছেন তাদের উচিত এই উদ্যোগকে স্বাগত জানানো। তিনি আরো বলেন বাংলাদেশের পোশাক খাতকে সারা বিশ্বে নিরাপদ ও টেকশই খাত হিসেবে পরিচিত করে তুলতে দেশি-বিদেশি সব পক্ষগুলোকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে।