মোবাইল, ট্যাব, ল্যাপটপ এসব এখন মানুষের নিত্যদিনের সার্বক্ষণিক সঙ্গী। বেশিরভাগ মানুষ অ্যালার্ম ঘড়ি হিসেবেও মোবাইল ফোনটি বালিশের কাছেই রাখেন। কিন্তু এই অভ্যাস যে কতোটা ক্ষতিকর তা জানলে হয়ত ফোনটি শোবার ঘরের আশেপাশেও রাখতে চাইবেন না।
প্রথম সমস্যাটা হলো ‘অতিসচেতনতা’। ফোনটা পাশে থাকলেও সব সময়ই একটা অস্থিরতা কাজ করে। এই কখন ফোন আসে, কী ম্যাসেজ এল, অথবা হয়ত প্রিয়জনের একটা কল আশা করতে পারেন। এসব চিন্তার কারণে মস্তিষ্কে চাপ পড়ে ফলে ঘুমানোর জন্য যে একটা নিরুদ্বেগ, শান্ত পরিবেশ দরকার সেটা বাইরে থাকলেও মনে থাকে না। বিশেষজ্ঞরা একে বলছেন ‘hypervigilance’।
ব্রিটেনের ঘুম বিশেষজ্ঞ ড. নিল স্টেনলি বলছেন, সুন্দর ঘুমের জন্য অত্যন্ত নিরাপদ ও নিরুদ্বেগ একটা অনুভূতি খুব জরুরি। কিন্তু ফোনটা মাথার কাছে থাকলে অবচেতনভাবেই আপনার মস্তিষ্ক ফোনের প্রতি সজাগ থাকবে। মস্তিষ্ক সার্বক্ষণিক সজাগ থাকার কারণে আপনার ঘুম হবে অত্যন্ত পাতলা।
তবে ঘুম পাতলা হওয়ার জন্য আরো বড় কারণ হচ্ছে আপনার ডিভাইসটি থেকে বের হওয়া আলো। এ আলো আপনার শরীরের ছন্দ নষ্ট করবে। এমন একটা ধারণা দেবে যেন এটা দিন। হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটির মেডিসিনের অধ্যাপক চার্লস জেসলার এমন ব্যাখ্যাই দিয়েছেন।
ডিভাইস থেকে বের হওয়া আলোটা মূলত রেটিনায় সংবেদ তৈরি করে তা মস্তিষ্কে পাঠিয়ে দেয়। আর বেশিরভাগ ডিভাইস স্ট্যান্ডবাই মুডে থাকলে সাধারণত নীল আলো বিকিরণ করে। এই রঙয়ের আলো রাতে খুব বেশি সংবেদ তৈরি করে। ফলে এটি আপনার দেহঘড়ির ছন্দপতন ঘটায়। এছাড়া রেটিনার মেলানোপসিন রঞ্জক নীল আলোর প্রতি অতিমাত্রায় সংবেদনশীল।
সুতরাং মাঝরাতে ঘুম ভেঙে গেলে কখনো মোবাইল ফোনের আলো জ্বালাবেন না। এটা আপনার বাকি রাতটা মাটি করে দেবে। আর ঘুম আসবেই না।
সম্প্রতি এ সংক্রান্ত একটি গবেষণা প্রতিবেদন অরগানাইজেশনাল বিহেভিয়ার অ্যান্ড হিউম্যান ডিসিশন প্রোসেস সাময়িকীতে প্রকাশিত হয়েছে।
এতে দেখা গেছে, যেসব ব্যবহারকারী রাত ৯টার পরেও স্মার্টফোন সঙ্গে রাখেন তাদের ঘুম ক্রমেই কমে যায়। আর এভাবে ঘুম কমে যাওয়ার ফলে তাদের কর্মক্ষমতাও কমতে থাকে।
একই সমস্যা তৈরি করতে পারে আপনার শখের ট্যাব, ল্যাপটপটিও। সুতরাং ঘুমানোর আগে যতোটা সম্ভব এসব ডিভাইস দূরে রাখুন অথবা একেবারে বন্ধ করে রাখুন।