আবার চরম স্ববিরোধী কর্মকান্ড করতে যাচ্ছে বর্তমান সরকার। মুখে মুখে জামাত ইসলামী কে যুদ্ধাপরাধী দল আখ্যা দিয়ে দলটি নিষিদ্ধ ঘোষনা সহ জামাতের আর্থিক প্রতিষ্ঠান সমূহ বন্ধ করার কথা বললেও আদতে তা যে কেবল রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে বিএনপিকে বেকায়দায় ফেলার কৌশল মাত্র ,তা বুঝতে দেশবাসীর আর বেশী বাকি নাই।এসব বিতর্কিত কর্মকান্ডে খোদ আওয়ামী লীগের অন্দরমহলে নিন্দার ঝড় উঠেছে।
২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবসে লাখো কণ্ঠে জাতীয় সংগীত গাওয়ার বিশ্বরেকর্ড গড়ার উদ্যোগ নিয়েছে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়। এদিন জাতীয় প্যারেড স্কোয়ারে ৩ লাখ মানুষ একসঙ্গে জাতীয় সংগীত গাইবে। আর এ আয়োজন সফল হলে গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ড বুকে উঠে যাবে বাংলাদেশের নাম।
বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর সহযোগিতায় এতো বড় আয়োজনে আর্থিক সহায়তা দিয়েছে বিভিন্ন বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান। তবে এই আয়োজনে ইসলামী ব্যাংকের অর্থায়ন নিয়ে উঠেছে প্রশ্ন। ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগের অন্যান্য মাধ্যমে এ নিয়ে চলছে তুমুল আলোচনা সমালোচনা। অনেকে এই কর্মসূচি বর্জনেরও ঘোষণা দিয়েছে।
ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেডের ভাইস চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ার মুস্তাফা আনোয়ার লাখো কণ্ঠে জাতীয় সংগীত আয়োজনের জন্য গত ১৪ মার্চ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতে তিন কোটি টাকা অনুদানের চেক তুলে দেন। বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে এই খবর প্রকাশিত হয়। এমন একটি আয়োজনে ইসলামী ব্যাংকের অর্থায়ন অনেকেই ভালোভাবে নিচ্ছেন না।
একাত্তরে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে গত বছরের ৫ ফেব্রুয়ারি শাহবাগে গড়ে ওঠে গণজাগরণ মঞ্চ। সেখান থেকে জামায়াতে ইসলামীর আর্থিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে ইসলামী ব্যাংক বন্ধ অথবা জাতীয়করণের দাবি ওঠে। একই সঙ্গে ইসলামী ব্যাংক বর্জনের জন্য দেশের মানুষদের প্রতি আহ্বান জানানো হয়। শুধু তা-ই নয় ইসলামী ব্যাংকের বিরুদ্ধে এর আগে জঙ্গি অর্থায়ন ও অর্থায়নে সহযোগিতা করারও অভিযোগ ওঠে। গণজাগরণ মঞ্চের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে সরকার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইন সংশোধন করে যুদ্ধাপরাধের জন্য সংগঠন ও প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধেও মামলা করার বিধান যুক্ত করে। সে অনুযায়ী খুব শিগগিরই জামায়াতে ইসলামীর বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনালে মামলা হতে যাচ্ছে বলে জানা গেছে। স্বাধীনতা বিরোধী ও যুদ্ধাপরাধী সংগঠন হিসেবে দলটিকে নিষিদ্ধ করারও দাবি উঠেছে। এমন সময়ে লাখো কণ্ঠে জাতীয় সংগীত গাওয়ার মতো একটি আয়োজনে জামায়াতের প্রত্যক্ষ উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত ও পরিচালিত আর্থিক প্রতিষ্ঠান ইসলামী ব্যাংকের আর্থিক সহযোগিতা নেয়া একাত্তরের চেতনার সঙ্গে সাংঘর্ষিক বলে মনে করছেন অনেকে।
এ প্রসঙ্গে গণজাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র ইমরান এইচ সরকার বলেন, ‘ইসলামী ব্যাংকের অর্থায়নে জাতীয় সংগীত গাইবার আদৌ প্রয়োজন ছিল না। যে ব্যাংকটির বিরুদ্ধে ইতোমধ্যেই জঙ্গি অর্থায়নের অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে। যারা যুদ্ধাপরাধী ও জামায়াত-শিবিরকে রক্ষায় সর্বশক্তি নিয়োগ করেছে। সেই ব্যাংকের টাকায় জাতীয় সংগীতের রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠান করা জনগণের সঙ্গে প্রতারণা। একদিকে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জঙ্গি-সন্ত্রাস দমনের অঙ্গীকার এবং এই অপশক্তির বিরুদ্ধে ব্যক্তি শেখ হাসিনার দীর্ঘ সংগ্রামের ইতিহাস, আরেকদিকে জঙ্গি-সন্ত্রাসের অর্থদাতা ইসলামী ব্যাংককে সরকার পুনঃপ্রতিষ্ঠার চেষ্টা করছে। একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে এই দ্বৈত নীতির তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি। আমি ব্যক্তিগতভাবে বিশ্বাস করি ইসলামী ব্যাংকের এই ৩ কোটি টাকা ছাড়াও লাখো শহীদ এবং বীরাঙ্গনার ত্যাগে অর্জিত বাংলায় আমার প্রাণের জাতীয় সংগীত গাইবার এই অনুষ্ঠান খুব ভালোভাবেই সম্পন্ন হতে পারে। তাই আশা করি, অবিলম্বে সরকার এই অমার্জনীয় ভুল সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসবে।’
গণজাগরণ মঞ্চের অন্যতম সংগঠক ছাত্রনেতা বাপ্পাদিত্য বসু বলেন, ‘রেকর্ড গড়ার জাতীয় সংগীত গাওয়ার প্রয়োজনে তহবিলের কি এতটাই সঙ্কট পড়ে গেল? ইসলামী ব্যাংকের কাছ থেকে ৩ কোটি টাকা গ্রহণ না করলেই হতো না? তাও আবার খোদ প্রধানমন্ত্রী নিজে হাতে ইসলামী ব্যাংকের ভাইস চেয়ারম্যানের হাত থেকে সেই অর্থ গ্রহণ করলেন। ইসলামী ব্যাংকসহ জামায়াতের সকল আর্থিক প্রতিষ্ঠান জাতীয়করণ করার দাবি ছিল আমাদের। সে কাজটি না করে তার থেকে আর্থিক সহযোগিতা গ্রহণ করার মধ্য দিয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কী বার্তা আমাদেরকে দিলেন? আবার যে তরুণেরা এতো বড় গণজাগরণ সৃষ্টি করল, তারাই আবার লাল-সবুজের বাংলায় সেই চাঁদ-তারা খচিত পাকিস্তানের পতাকা ওড়ায় খেলার ছলে।’
অবশ্য, ইসলামী ব্যাংকের কাছ থেকে সরকারের আর্থিক সহযোগিতা নেয়ার ঘটনা এটাই প্রথম নয়। এর আগে ২০১১ সালে ক্রিকেট বিশ্বকাপে প্রধান স্পন্সর ছিল এ আর্থিক প্রতিষ্ঠানটি। এরপর মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরও টাকা নিয়েছিল কিন্তু সমালোচনার মুখে পড়ে সে অর্থ ফেরত দিতে বাধ্য হয়।
এদিকে আয়োজনে লোক সঙ্কট নয় বরং অতিরিক্ত মানুষের স্থান সঙ্কুলান নিয়ে চিন্তিত বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনী। এই আয়োজনের জনশক্তি ব্যবস্থাপনা কমিটির উপদেষ্টা ও সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের গোয়েন্দা পরিদপ্তরের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম আহমেদ বলেন, ‘আমাদের সকল প্রস্তুতি সুন্দরভাবেই এগিয়ে যাচ্ছে। জনসমাগম নিয়ে মোটেও চিন্তিত নই। মানুষের যাতায়াতের জন্য পরিবহণ নিয়ে সমস্যারও সমাধান হয়েছে। বিভিন্ন পরিবহণ মালিক সমিতি অল্প খরচে গাড়ি সরবরাহ করার কথা দিয়েছে। আমাদের এই আয়োজনে পাবলিক ও প্রাইভেট বিশ্ববিদালয়ের ৫০ হাজার শিক্ষার্থী, বিজেএমইএ তাদের তালিকাভুক্ত প্রতিষ্ঠান থেকে পৌনে দুই লাখ কর্মী দেবে। এছাড়াও বিজিবি, র্যাব, পুলিশ, আনসার ও সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরা তো থাকছেই।’
উল্লেখ্য, এর আগে ১ লাখ ২২ হাজার ভারতীয় একসঙ্গে জাতীয় সংগীত গেয়ে গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ড গড়েছিল। ২৬ মার্চ মহান স্বাধীনতা দিবসে বেলা ১১টায় বিভিন্ন শ্রেণীর পেশার ৩ লাখ বাঙালি একসঙ্গে কণ্ঠ মিলিয়ে জাতীয় প্যারেড স্কোয়ারে জাতীয় সংগীত গেয়ে ভাঙবে সেই রেকর্ড।দেশের চলমান গনতন্ত্রের সংকট থেকে জনসাধারনের দৃষ্টি অন্য দিকে ফেরানোর উদ্দেশ্যেই সরকার জাতীয় পতাকা ও জাতীয় সংগিতের বিশ্ব রেকর্ড,ইত্যাদির আয়োজন করছে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন।