DMCA.com Protection Status
title="৭

চট্টগ্রামঃদু’নম্বর গেটে সেপটিক ট্যাংকে দু’বন্ধুর হাত-পা বাঁধা লাশ

01.tow-friendsনগরীর খুলশী থানার দুই নম্বর গেট এলাকায় নির্মাণাধীন ভবনের একটি সেপটিক ট্যাংক থেকে গতকাল সোমবার সকালে  দুই বন্ধুর লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। তাদের একজন ওমরগণি এমইএস কলেজের ছাত্র অপরজন পুলিশের সোর্স। এমইএস কলেজ ছাত্রলীগের একাংশের নেতারা দাবি করেছেন নিহতরা ছাত্রলীগের রাজনীতির সাথে জড়িত। পুলিশ জানিয়েছে, তাদেরকে হাত-পা বেঁধে পায়ের রগ কেটে এবং শ্বাসরোধ করে  নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়েছে।
গতকাল সোমবার সকাল ১১টায় দু’জনের লাশ উদ্ধারের পর এমইএস কলেজ ছাত্রলীগের একাংশের কর্মীরা জড়ো হয়ে দু’নম্বর গেট ও মেয়র গলি এলাকায় ব্যাপক যানবাহন ভাঙচুর করেছে। এসময় বায়েজিদ বোস্তামী সড়কে এক ঘণ্টা যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকে।
খুন হওয়া কুমিল্লার ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আবদুল হাকিমের ছেলে কামরুল ইসলাম (২০) এমইএস কলেজের উচ্চ মাধ্যমিকের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র। নগরীর তুলাতলি এলাকায় শামসুদ্দিন সড়কের মতিনের ভাড়া বাসায় থাকতেন। অপরজন পটিয়ার আবদুস শুক্কুরের ছেলে মো. ফোরকান উদ্দিন (২১) একই এলকায় লিটন জমিদারের ভাড়া বাসায় মায়ের সাথে থাকতেন। স্বজনেরা জানিয়েছেন, নিহত ফোরকান ইপিজেড এলাকায় একটি কারখানায় শ্রমিক হিসেবে কাজ করতেন।
ফোরকানের মা খুরশিদা বেগম বলেন, রবিবার বিকেলে ফোরকান ঘর থেকে বের হয়। রাত নয়টার সময় মুঠোফোনে তার সাথে কথা হয়।  মাকে  জানায় সে দু’নম্বর গেট এলাকায় রয়েছে। রাতে বাসায় চলে আসবে। এরপর থেকে তার মুঠোফোন বন্ধ পাওয়া যায়। খুরশিদা বলেন, সকাল ( সোমবার) আটটায় ফোরকানের মুঠোফোন থেকে অজ্ঞাতনামা এক ব্যক্তি  তাঁর  মুঠোফোনে  ফোন করে। তাকে বলে, তোমার  ছেলের লাশ  দুই নম্বর গেট কবরস্থানের পাশে ট্যাংকের   ভেতরে আছে, সেখানে যাও। দারোয়ানের কাছে গেটের চাবি রয়েছে। বললে তালা খুলে দেবে।  খবর পেয়েই কবরস্থান এলাকায় ছুটে আসেন ফোরকানের মা। বিভিন্ন জায়গায় খোঁজাখুঁজি করে তারপর সুন্দরবন কুরিয়ার সার্ভিসের পাশে সীমানা  দেয়াল ঘেরা ওই স্থানে যান। ততক্ষণে পুলিশও ঘটনাস্থলে ছুটে আসে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পুলিশের একজন কর্মকতা বলেন, দুজনকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে। তাদের শরীরে অসংখ্য ছুরির আঘাতের ক্ষতবিক্ষত  চিহ্ন রয়েছে। হাত ও পায়ের রগ কেটে দেয়া হয়েছে। সাধারণত নেশাগ্রস্ত  লোকেরা এ ধরনের খুনের ঘটনা ঘটিয়ে থাকে।
পুলিশ জানায়, সকাল ৯টার দিকে খুলশী থানার এক উপ-পরিদর্শকের কাছেও একটি কল আসে। তাকেও একইভাবে সেপটিক ট্যাংকের  ভেতরে দুটি লাশ আছে বলে জানানো হয়।
কামরুলের মা জোসনা  বেগম জানান, ফোরকানের মায়ের কাছ থেকে তিনি খবর পেয়ে দ্রুত কামরুলে চাচী ও খালাকে নিয়ে ঘটনাস্থলে আসেন। তিনি জানান, শনিবার রাত ১০টার দিকে মায়ের কাছ থেকে ২০ টাকা নিয়ে চা খাওয়ার কথা বলে বের হয় কামরুল। ঘণ্টাখানেক পরও বাসায় ফিরে না আসায় তার মা ফোন আবার করে। সে বলে, ফিরে আসছি। এরপর রাতভর কামরুল আর ফিরেনি। তার মোবাইলও বন্ধ পান তার মা।
কামরুলের মা জোসনা বেগম জানায়, তারা তুলাতলী এলাকায় ভাড়া বাসায় থাকেন। তার স্বামী আব্দুল হাকিম চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের পরিচ্ছন্ন বিভাগে চাকুরি করেন। তিন  ছেলের মধ্যে সবার বড় কামরুল কয়েক বছর আগে গ্রামে দাদা-দাদির কাছ থেকে এনে এমইএস কলেজে ভর্তি করা হয়। তিনি জানান, টানাটানির সংসারে কষ্ট করে ছেলেকে কলেজে  লেখাপড়া করাচ্ছিলেন।
ঘটনাস্থলে পিতা আব্দুল হাকিম নিজেই পুলিশকে সাহায্য করে ট্যাংক  থেকে লাশ বের করে আনেন। ঘটনার আকস্মিকতায়  বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েন আব্দুল হাকিম।খুলশী থানার পরিদর্শক (ওসি) মইনুল ইসলাম বলেন, নিহত কামরুল এমইএস কলেজে এইচএসসি দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র। ফোরকান পুলিশের সোর্স হিসেবে কাজ করতো। প্রাথমিকভাবে ধারনা করা হচ্ছে টাকা পয়সার ভাগভাটোয়রা সংক্রান্ত ঘটনায় তাঁরা খুন হয়েছে। আশা করছি শীঘ্রই  খুনের ঘটনার রহস্য উদঘাটন হবে।যেভাবে পাওয়া যায় দুটি লাশ : ষোলশহর দু’নম্বর  গেটে সুন্দরবন কুরিয়ার সার্ভিসের পাশে আনুমানিক ৭ থেকে ৮ ফুট উঁচু  লোহার পাত দিয়ে  ঘেরা একটি জায়গা। সেখানে নালার পাশে সেপটিক ট্যাংকের কয়েক ফুট ভেতরে ছিল ফোরকান। তার উপরে ছিল কামরুল।সকাল ১১টার দিকে প্রথমে কামরুলের লাশ বের করে পুলিশ। কামরুলের দু’পায়ের রগ কাটা অবস্থায় ছিল। দু’হাত রশি দিয়ে বাঁধার কারণে সেখানে মারাত্মক জখম দেখা গেছে। মুখ এবং গলাও বাঁধা ছিল। সারা শরীর রক্তাক্ত। তার পরণে ছিল জিনসের প্যান্ট এবং টি শার্ট।আরো আধাঘণ্টা পর  ফোরকানের লাশ  বের করা হয়।  ফোরকানের দু’পায়ের রগও কাটা অবস্থায় দেখা গেছে। সারা শরীর রক্তাক্ত এবং হাত, মুখ বাঁধা অবস্থায় ছিল। তার পরণেও জিনসের প্যান্ট এবং  গেঞ্জি ছিল।  ফোরকানের রক্তমাখা শার্ট  লোহার পাতের সীমানায় ঝুলন্ত অবস্থায় ছিল। রক্তমাখা শার্টটি উড়ছিল বাতাসে।লাশ উদ্ধারের আগে ঘটনাস্থলে সেই শার্ট  দেখে ফোরকানের মা বুঝতে পারেন তার ছেলের লাশ আছে ট্যাংকে। চিৎকার করে কান্নায়  ভেঙ্গে পড়েন  ফোরকানের মা খুরশিদা বেগম। নিহত কামরুলের চাচী রমিজা বেগম বলেন, লাশগুলো একটার উপর আরেকটা চাপা ছিল। পা উপরের দিকে তোলা ছিল। দু'জনকে এমনভাবে কোপানো হয়েছে হাত দিতেই উঠে যাচ্ছিল চামড়া।

Share this post

scroll to top
error: Content is protected !!