ইউক্রেনের ক্রিমিয়া প্রশ্নে বাংলাদেশের অবস্থান এখনও স্পষ্ট হয়নি। তবে বাংলাদেশ ক্রিমিয়া পরিস্থিতি সতর্কতার সাথে পর্যবেক্ষণ করছে বলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র জানায়। পররাষ্ট্র সচিব শহীদুল হক এ ব্যাপারে সংবাদ মাধ্যমকে জানিয়েছেন যে, বাংলাদেশ ইউক্রেনের ক্রিমিয়া নিয়ে সৃষ্ট বর্তমান পরিস্থিতি অত্যন্ত সতর্কতার সাথে পর্যবেক্ষণ করছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা জানান, রুশ ফেডারেশনের অন্তর্ভুক্ত হওয়া এবং এর আগের ঘটনাপ্রবাহে বাংলাদেশের অবস্থান কী হবে তা নিয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্টরা বিষয়টি পর্যালোচনা করছেন। বাংলাদেশের অবস্থান কি হবে- সেই উত্তর জানতেও আরও কিছু দিন অপেক্ষার পরামর্শ দিয়েছেন এ কর্মকর্তা। তিনি জানান, একটি চিঠির মাধ্যমে ক্রিমিয়া ইস্যুতে বাংলাদেশের সমর্থন চাইছে ওয়াশিংটন। তবে সব দেশই এ ধরনের বিষয়ে জাতীয় স্বার্থকে প্রাধান্য দিয়েই সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকে এবং বাংলাদেশও এ ধারণার বাইরে নয়। সম্প্রতি জাতিসংঘে ক্রিমিয়া নিয়ে একটি রেজুলেশনে ভোটদানে বিরত থাকে চীন। যাতে রাশিয়া ভেটো প্রয়োগ করে। অপরদিকে রাশিয়ার বিরুদ্ধে ইইউ ও মার্কিন নেতৃত্বাধীন অবরোধে ভারত সমর্থন করবে না বলে জানা গেছে। তবে নয়াদিল্লী গতকাল (বুধবার) দুপুর পর্যন্ত সরকারিভাবে এ ব্যাপারে নিজেদের অবস্থান ঘোষণা করেনি। তবে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম সরকারি সূত্র উদ্ধৃত করে জানিয়েছে, এই আর্থিক ও বাণিজ্যিক অবরোধের সরাসরি বিরোধিতা নয়াদিল্লী করছে না। তবে সমর্থনও করছে না। এই ইস্যুতে সরকারি ঘোষণা হতে পারে যেকোনো সময়।
কারণ গত মঙ্গলবার রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিন নিজে ফোন করে প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংকে গোটা ব্যাপারটি বুঝিয়ে বলেছেন। তারপর নিজেদের সুবিধে বুঝে রাশিয়ার দিকে ঝুঁকেই অবস্থান নিয়েছে সাউথ ব্লক। ভারতের সাফ কথা, অবরোধ যদি জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ চাপাত বা তাতে জাতিসংঘের সিলমোহর থাকত তাহলে সমর্থনের প্রসঙ্গ উঠতো। তবে ভারত জাতিসংঘের সাধারণ সভায় আলোচনার দিকে তাকিয়ে রয়েছে। কূটনৈতিক সূত্রে জানা গেছে, ক্রিমিয়া নিয়ে এই ঘটনাপ্রবাহে বাংলাদেশের কপালে কিছুটা ভাঁজ রয়েছে। কারণ এর আগে ইউরোপের নয়া দেশ কসোভোকে স্বীকৃতি দিতে বাংলাদেশের ওপর বেশ কূটনৈতিক চাপ দেয় যুক্তরাষ্ট্র। সে সময় মুসলিম দেশ হলেও কসোভোকে স্বীকৃতি দেয়নি বাংলাদেশ। এবার ক্রিমিয়া নিয়ে উল্টো পরিস্থিতির মুখে পড়তে পারে বাংলাদেশ। কারণ ক্রিমিয়ার পিছনে পূর্ণ সমর্থন দিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে রাশিয়া। বাংলাদেশে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর গঠিত সরকারকে প্রথম সমর্থন দিয়েছিল রাশিয়া। সে হিসেবে এবার যদি ক্রিমিয়া প্রশ্নে বাংলাদেশকে রাশিয়ার পক্ষে ভূমিকা নিতে কূটনৈতিক অনুরোধ জানানো হয়, তাহলে বাংলাদেশের জন্য একটি উভয় সঙ্কট তৈরি হতে পারে বলেও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা জানান।
বিশেষজ্ঞদের মতে, বিশ্বের সবচেয়ে বড় সামরিক সম্ভার ও অস্ত্র আমদানিকারী দেশ হলো ভারত। ভারতে বিপুল সমরাস্ত্র বিক্রি করে রাশিয়া। তারপর আমেরিকা। ক্রিমিয়া নিয়ে নয়াদিল্লী চায় ভারসাম্যের কূটনীতি বজায় রাখতে। পররাষ্ট্র দপ্তর বলছে, পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে ঢাকা। যদিও রাশিয়ার ওই হস্তক্ষেপের বিরুদ্ধে পশ্চিমা দুনিয়ার সঙ্গে থাকতে যুক্তরাষ্ট্রের তরফে বাংলাদেশকে অনুরোধ করা হয়েছিল। কিন্তু বাংলাদেশ এখনও তাতে সাড়া দেয়নি। ক্রিমিয়া পরিস্থিতির ওপর তীক্ষ নজর রয়েছে- পররাষ্ট্র দপ্তরের এমন এক কর্মকর্তার কাছে ঢাকার সর্বশেষ অবস্থান সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, প্রতি মুহূর্তে পরিস্থিতি বদলাচ্ছে। এ অবস্থায় ঢাকা কোন পক্ষে অবস্থান গ্রহণের চেয়ে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণকেই শ্রেয় মনে করছে। তাছাড়া অতীতের রেওয়াজও তাই। কোন দেশের অভ্যন্তরীণ সঙ্কটে বাংলাদেশ আগ বাড়িয়ে কোন অবস্থান প্রকাশ করে না। একটি স্থিতিশীল অবস্থায় না আসা পর্যন্ত পর্যবেক্ষণ চলবে জানিয়ে ওই পেশাদার কূটনীতিক বলেন, এসব ক্ষেত্রে বিশ্ব জনমতের বিষয়টিও বিবেচনায় নেয়া হয়। বাংলাদেশের অবস্থান কি হবে- সেই উত্তর জানতেও আরও কিছু দিন অপেক্ষার পরামর্শ দিয়েছেন ঢাকার কর্মকর্তারা।