দলটির নেতাকর্মীদের মতে, অতীতের যে কোনো সময়ের চেয়ে বিএনপি এখন কঠিন সময় পার করছে। নেতাকর্মীদের মধ্যে ‘অতিমাত্রায়’ প্রতিযোগিতা, প্রতিপক্ষ দলের আক্রমণাত্মক কৌশল সব মিলিয়ে এই রাজনৈতিক সংগঠনটির স্বাভাবিক কার্যক্রম মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। সঙ্গত কারণেই বিক্ষোভ, বিবৃতি আর প্রেস ব্রিফিংই তাদের ‘সুবিধাজনক’ কর্মসূচি হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট এবং জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া এবং সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ বেশ কয়েকজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের প্রক্রিয়া নিয়ে দলটির পক্ষ থেকে সমালোচনা করা হয়েছে। বিএনপির শীর্ষ নেতাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের প্রায় ২৪ ঘণ্টা পর বৃহস্পতিবার বিকেলে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানায় বিএনপি।
অভিযোগ গঠনের প্রক্রিয়ার বিরোধিতা করে দলটির দপ্তরের দায়িত্বে থাকা যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী আহমেদ দাবি করেন, বেগম খালেদা জিয়াকে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত ও রাজনৈতিকভাবে হেয় করার জন্যই দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) পক্ষ থেকে এই মামলা করা হয়েছে। যা জাতীয়তাবাদী শক্তিকে নির্মূল করার একটি চক্রান্ত।
এ নিয়ে বিএনপি কোনো কর্মসূচি ঘোষণা করবে কি না জানতে চাইলে সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘আইনগত লড়াই এবং রাজনৈতিক সংগ্রাম অব্যাহত থাকবে।’
খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন নিয়ে বিএনপিপন্থি বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে ক্ষোভ প্রকাশ করা হচ্ছে। বিএনপি এবং অঙ্গ সংগঠনগুলোর অপেক্ষায় না থেকে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল তাৎক্ষণিভাবেই সারাদেশে বিক্ষোভ কর্মসূচির ঘোষণা দেয়। সংগঠনটির নেতাকর্মীরা বৃহস্পতিবার দেশের বিভিন্ন জায়গায় বিক্ষোভ মিছিল করেছে।
রিজভী আহমেদের আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়ার পর জাতীয়াতাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দল এবং জাতীয়তাবাদী যুব দলের পক্ষ থেকেও দেশব্যাপী কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে।
স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় সহ-দপ্তর সম্পাদক এ কে এম আকরামুজ্জামান খান টুকনের সই করা প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ‘বিএনপি চেয়ারপারসন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া এবং দলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান জনাব তারেক রহমান এর নামে দুদক কর্তৃক মিথ্যা মামলায় চার্জ গঠনের প্রতিবাদে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দলের উদ্যোগে আগামীকাল ২১ মার্চ শুক্রবার দেশব্যাপী (জেলা ও মহানগর) কালো পতাকা মিছিলের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক দল।’
এই কর্মসূচি যে কোনো মূল্যে সফল করার জন্য সংগঠনটির সভাপতি হাবিব উন নবী খান সোহেল, সাধারণ সম্পাদক মীর সরাফত আলী সপু এবং সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল বারী বাবুর পক্ষ থেকে সবাইকে অনুরোধ করা হয়েছে।
কখন এই কর্মসূচি পালন করা হবে এবং ঢাকার কর্মসূচি কোথায় অনুষ্ঠিত হবে জানতে চাইলে আকরামুজ্জামান খান টুকন দৈনিক প্রথম বাংলাদেশকে বলেন, ‘দেশব্যাপী কর্মসূচি স্থানীয় নেতারা তাদের সুবিধামতো ঠিক করবেন। তাদের সুবিধামতো জায়গায় সুবিধা মতো সময়ে এই কর্মসূচি তারা পালন করবেন।’
জাতীয়তাবাদী যুব দলের দপ্তর সম্পাদক কাজী রফিকের সই করা বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট এবং জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট এর মিথ্যা, সাজানো ও ষড়যন্ত্রমূলক মামলায় বিএনপি চেয়ারপার্সন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া এবং বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান এর বিরুদ্ধে এ অবৈধ সরকার প্রতিহিংসামূলক চার্জ গঠনের প্রতিবাদে কেন্দ্রীয় যুবদল আগামী শনিবার সারাদেশের জেলা ও মহানগর সমূহে বিক্ষোভ সমাবেশ এর কর্মসূচী ঘোষনা করেছে। সংগঠনের এক জরুরী সিদ্ধান্তে আজ এ কর্মসূচী ঘোষনা করা হয়।’
সময় এবং ঢাকার কর্মসূচির স্থানের ব্যাপারে কাজী রফিক দৈনিক প্রথম বাংলাদেশকে বলেন, ‘স্থানীয় নেতারা সুবিধাজনক সময়ে, সুবিধা জনক স্থানে দিনের মধ্যে কর্মসূচি পালন করলেই হলো।’
বিএনপির অঙ্গসহযোগী সংগঠনের সূত্রগুলো বলছে, অনেকটা গা বাঁচিয়ে চলার জন্য সুবিধাজনক কর্মসূচি দেয়া হচ্ছে। বিবৃতি, ব্রিফিং আর বিক্ষোভের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকা হচ্ছে।
বিএনপির শীর্ষ নেতাদের বিরুদ্ধে মামলা, ক্ষমতাসীন নেতাকর্মীদের আচরণসহ সার্বিক পরিস্থিতিতে বিএনপির স্বাভাবিক কার্যক্রম মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে বলে জানিয়েছেন বিএনপির সর্বোচ্চ নীতি নির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া। দৈনিক প্রথম বাংলাদেশকে তিনি বলেন, ‘সরকার আমাদের শীর্ষ নেতাদের নামে মিথ্যা এবং হয়রানিমূলক মামলা দিচ্ছে। এতে স্বাভাবিক দলের স্বাভাবিক কার্যক্রম মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে।’