চলতি ২০১৩-১৪ অর্থবছরের প্রথম আট মাসে (জুলাই-ফেব্রুয়ারি) কৃষিঋণ বিতরণে প্রবৃদ্ধি হয়েছে প্রায় ১৫ শতাংশ। তবে আলোচ্য সময়ে কৃষিখাতকে প্রাধান্য দিয়ে ব্যবসা করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে রাজনৈতিকভাবে অনুমোদন পাওয়া নতুন নয়টি ব্যাংকের আটটিই এখন পর্যন্ত এ খাতে কোনো ঋণ বিতরণ করেনি। তাই আগামী চার মাসে এসব ব্যাংক যদি কৃষিঋণ বিতরণে তাদের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে না পারে তাহলে তাদের নতুন শাখা খোলার অনুমোদন দেবে না কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এমনটিই জানিয়েছেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আতিউর রহমান।
বাংলাদেশ ব্যাংকের কৃষিঋণ ও আর্থিক সেবাভুক্তি বিভাগের হালনাগাদ প্রতিবেদনে দেখা গেছে, চলতি অর্থবছরের প্রথম আট মাসে কৃষিখাতে ঋণ বিতরণ ও আদায় বেড়েছে। দেশে তফসিলি ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে গত আট মাসে কৃষি খাতে প্রায় ১০ হাজার ১০৮ কোটি টাকা বা ৬৯ শতাংশ ঋণ বিতরণ করা হয়েছে। গত অর্থবছরের একই সময়ে বিতরণকৃত ঋণের পরিমাণ ছিল প্রায় আট হাজার ৭শ কোটি টাকা। এক বছরের ব্যবধানে কৃষিঋণ বিতরণ বেড়েছে প্রায় এক হাজার ৩২২ কোটি টাকা। প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৫ শতাংশ।
অপরদিকে একই সময়ে কৃষিঋণ আদায় হয়েছে প্রায় ৫৭ শতাংশ। গত বছরের একই সময়ে আদায় হয়েছিল ৬০ শতাংশ। তবে নয়টি নতুন ব্যাংকের মধ্যে এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংক ছাড়া বাকি আটটি ব্যাংক এখনো কোনো কৃষিঋণ বিতরণ করেনি। এগুলো হলো- মেঘনা, মিডল্যান্ড, দ্য ফার্মার্স, ইউনিয়ন, এনআরবি, এনআরবি গ্লোবাল, মধুমতি এবং সাউথ বাংলা এগ্রিকালচার অ্যান্ড কমার্স ব্যাংক লিমিটেড।
এ ব্যাপারে গভর্নর ড. আতিউর রহমান বলেছেন, ‘এখনো যেসব ব্যাংক কৃষিখাতে ঋণ বিতরণে পিছিয়ে আছে বা আদৌ কোনো কৃষিঋণ বিতরণ করেনি তাদের নতুন শাখার অনুমোদন দেয়া হবে না।’
বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা যায়, এসব নতুন ব্যাংকে অনুমোদন দেয়ার সময় শর্ত দেয়া হয়েছিল তাদের মোট বিতরণকৃত ঋণের ৫ শতাংশ কৃষি খাতে ঋণ বিতরণ করতে হবে। এই শর্তে গত বছরের প্রথম দিকেই রাজনৈতিক বিবেচনায় ধাপে ধাপে নতুন অনুমোদন পাওয়া নয়টি ব্যাংক যাত্রা করে। এর মধ্যে রয়েছে দেশীয় উদ্যোক্তাদের প্রতিষ্ঠিত ছয়টি ও প্রবাসীদের অর্থায়নে তিনটি ব্যাংক।
সূত্র মতে, গত অর্থবছরে ব্যাংকগুলো কৃষিঋণ বিতরণ করে লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় বেশি ১০৪ শতাংশ । ফলে চলতি অর্থবছরে ৫৬টি ব্যাংকের মাধ্যমে ১৪ হাজার ৫৯৫ কোটি টাকা কৃষিঋণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। রাজনৈতিক অস্থিরতার পরও চলতি বছরের প্রথম থেকেই এ ঋণ বাড়তে শুরু করে। যা গত ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত অব্যাহত আছে।
গত আট মাসে বিতরণকৃত ঋণের পরিমান হচ্ছে ১০ হাজার ১০৭ দশমিক ৮৫ কোটি টাকা। যা লক্ষ্যমাত্রার ৬৯ দশমিক ২৬ শতাংশ। গত বছরের একই সময়ে বিতরণ করা হয়েছিল আট হাজার ৭৮৬ দশমিক ০৫ কোটি টাকা বা ৬২ দশমিক ১৮ শতাংশ।
প্রতিবেদন দেখা যায়, ব্যাংকগুলো সবচেয়ে বেশি ঋণ বিতরণ করেছে ফসল উৎপাদন খাতে চার হাজার ৬০৬ দশমিক ৫৫ কোটি টাকা। এরপর দারিদ্র্য বিমোচনে এক হাজার ২২২ দশমিক ২৮ কোটি টাকা, প্রাণিসম্পদ ও পোলট্রি খাতে ১ হাজার ১৬৩ দশমিক ৯৫ কোটি টাকা এবং মৎস্য খাতে ৮১৫ দশমিক ৪০ কোটি টাকা ঋণ বিতরণ করেছে।
আট মাসে রাষ্ট্র মালিকানাধীন ছয়টি ব্যাংক কৃষিখাতে ঋণ বিতরণ করেছে ছয় হাজার ৪৯৪ দশমিক ৮০ কোটি টাকা বা ৭৩ দশমিক ৮৯ শতাংশ। আগের বছরে ঋণ বিতরণ করেছিল পাঁচ হাজার ১৩৮ দশমিক ৯২ কোটি টাকা বা ৫৯ দশমিক ৭১ শতাংশ।
প্রতিবেদনে দেখা গেছে, বরাবরের মতো চলতি অর্থবছরের গত আট মাসে সবচেয়ে বেশি ঋণ বিতরণ করেছে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক। এই ব্যাংকের বিতরণ করা ঋণের পরিমাণ হলো তিন হাজার ৭৬০ দশমিক ৯৩ কোটি টাকা বা ৮১ দশমিক ৭৬ শতাংশ। এরপরে রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক কৃষিঋণ বিতরণ করেছে ৮৪৮ কোটি টাকা বা ৫৮ দশমিক ৪৮ শতাংশ। আর কম ঋণ দিয়েছে রূপালী ব্যাংক ৫৪ দশমিক ৩৭ কোটি টাকা বা ৩৬ দশমিক ২৫ শতাংশ ।
বেসরকারি ৩৮টি ব্যাংক কৃষিখাতে ঋণ বিতরণ করেছে তিন হাজার ৩৫২ দশমিক ৮৬ কোটি টাকা বা ৬২ দশমিক ৪১ শতাংশ। এর মধ্যে রবাররের মতো ইসলামী ব্যাংক সবচেয়ে বেশি ঋণ দিয়েছে ৯৭৭ দশমিক দশমিক ২৭ কোটি টাকা বা ১২৯ দশমিক ৪৪ শতাংশ।
এছাড়া বিদেশি নয়টি ব্যাংকের মধ্যে ন্যাশনাল ব্যাংক অব পাকিস্তান, স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়া এবং উরি ব্যাংক এখনো কোনো কৃষিঋণ বিতরণ করেনি। বাকি ছয়টি ব্যাংক কৃষিখাতে ঋণ বিতরণ করেছে ২৬০ দশমিক ১৯ কোটি টাকা বা ৬০ দশমিক ০৯ শতাংশ।
এ ব্যাপারে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কৃষিঋণ ও আর্থিক সেবাভূক্তি বিভাগের মহাব্যবস্থাপক প্রভাষ চন্দ্র মল্লিক বাংলামেইলকে বলেন, ‘রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে প্রথম দিকে কৃষিখাতে ঋণ বিতরণে কিছুটা প্রভাব পড়লেও গত আট মাসে যে কৃষিঋণ বিতরণ হয়েছে তা সন্তোষজনক।’ এখনো আটটি নতুন ব্যাংক ঋণ বিতরণ না করলেও লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে পারবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
এর কারণ হিসেবে তিনি বলেন, ‘যে সব বিদেশি ও বেসরকারি ব্যাংক ঋণ বিতরণ করতে পারেনি তাদের তাগিদ দেয়ার জন্য ওই সব ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট নির্বাহীদের নিয়ে সম্প্রতি বৈঠক করা হয়েছে। তারা লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে সক্ষম হবেন বলে বৈঠকে প্রতিশ্রতি দেন।’