জাতিগত সংঘাতে অস্থিতিশীল রাখাইন রাজ্য সংলগ্ন সীমান্তে নতুন কিছু তল্লাশি চৌকি (চেক পয়েন্ট) বসানোর ঘোষণা দিয়েছে মিয়ানমার। ভয়েস অব আমেরিকা এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, গত বৃহস্পতিবার মিয়ানমারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সংসদকে জানান, ওই অঞ্চলে বাংলাদেশ সীমান্তের সঙ্গে তারা বেড়া নির্মাণের কাজ আবার শুরু করবেন।
পার্লামেন্ট সদস্য খিন সো ওয়াই সম্প্রতি রাখাইন রাজ্যে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করার জন্য সরকারকে তাগিদ দিয়ে আসছেন। তিনি ভয়েস অব আমেরিকার বার্মিজ সার্ভিসকে বলেন, ‘বাংলাদেশ থেকে বহু লোক স্বেচ্ছায় মিয়ানমারে প্রবেশ করছে। সীমান্তে নিরাপত্তা যথেষ্ট না থাকায় এমন ঘটছে।’
তিনি আরো বলেন, ‘যদিও পশ্চিমের প্রবেশপথে বাংলাদেশ ও আমাদের রাখাইন রাজ্যের মংগদু এলাকার মধ্যে বার্মার একটি বেড়া আছে কিন্তু এটা অবৈধ অনুপ্রবেশ ঠেকাতে পারছে না। বাঙালি জনসংখ্যা ব্যাপক হারে বেড়েছে। আমরা শুধু অবৈধ অনুপ্রবেশ প্রত্যক্ষ করছি কিন্তু এটা বন্ধ করার কোনো কার্যকর ব্যবস্থা নেই। এ কারণে আমরা চাই সরকার এ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ব্যবস্থা নিক। রাখাইন রাজ্যে নিরাপত্তা জোরদার করার জন্য আমি পার্লামেন্টে প্রস্তাব উত্থাপন করেছি। এখন আমি খবর পেলাম, সীমান্তের আরো ১৫টি নিরাপত্তা চৌকি নির্মাণ করা হবে। কিন্তু আমি জানি না ঠিক কোথায় এগুলো নির্মাণ করা হবে।’
সরকারের মুখপাত্র ইয়ে হতুত সরকারের নতুন নিরাপত্তা পরিকল্পনার কথা নিশ্চিত করেছেন। কিন্তু তিনি এও বলেছেন যে, এ ব্যাপারে রাখাইন রাজ্যের স্থানীয় কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলাপ করে চূড়ান্ত করা হবে।
তিনি বলেন, ‘আগে যেমন কেন্দ্রীয় সরকার এ ব্যাপারে সরাসরি পদক্ষেপ নিত এখন তা করা হবে না। কারণ কেন্দ্রীয় সরকার একাই সব নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে না। নিজেদের নিরাপত্তার জন্য রাজ্য সরকার এ উদ্যোগ নেবে। তারা এরমধ্যে তাদের পুলিশ বাহিনীর সঙ্গে এ ব্যাপারে আলোচনা করে দিয়েছে।’
তবে রাখাইন রাজ্যের নিরাপত্তা কর্মকর্তারা এ ব্যাপরে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
উল্লেখ্য, রাখাইন রাজ্যে (পূর্বে আরাকান) ২০১২ সালে প্রথম বৌদ্ধ ও রোহিঙ্গা মুসলিমদের মধ্যে জাতিগত সংঘাতের সূত্রপাত হয়। এর পর এ সংঘাত সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ে। এ সংঘাতে এ পর্যন্ত ২৪০ জন নিহত এবং ১ লাখ ৪০ হাজার মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে যাদের বেশিরভাগই রোহিঙ্গা মুসলিম। আর সরকারও বিষয়টিকে প্রশ্রয় দিচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে। তারা একটি নৃগোষ্ঠীকে উচ্ছেদ করার পরিকল্পনা করছে- নানা সময়ে সরকারি কর্মকর্তাদের বক্তব্যে তা উঠে এসেছে।
এমনকি মিয়ানমার সরকার রোহিঙ্গাদের সে দেশের নাগরিক বলে স্বীকৃতি দিতেও অস্বীকৃতি জানিয়েছে। তারা বলে, ১৮২৩ সালে ব্রিটিশরা রাখাইনে অভিযান পরিচালনার আগে রোহিঙ্গাদের পূর্বপুরুষরা সেখানে বসবাস করতো এটা আগে প্রমাণ করতে হবে।
গত মাসে বিমসটেক শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দিতে মিয়ানমার যান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেখানে আঞ্চলিত বিষয়ে একটি সাইডলাইন বৈঠকে মিয়ানমার প্রেসিডেন্ট থেইন সিন এবং শেখ হাসিনা রোহিঙ্গা ইস্যুতে কোনো সমঝোতায় পৌঁছতে পারেননি।