DMCA.com Protection Status
title="৭

এশিয়ান গেমস হকির বাছাই পর্বঃ বাংলাদেশ অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন

 
image_118072বিশাল আকৃতির একটা জাতীয় পতাকা নিয়ে বাংলাদেশের হকি খেলোয়াড়রা মাঠ প্রদক্ষিণ করলেন। ফটো সাংবাদিকরা ছুটলেন খেলোয়াড়দের পেছনে পেছনে। চ্যাম্পিয়ন হওয়ার আনন্দে উল্লাস করে পুরো মাঠ মাতিয়ে তুললেন খেলোয়াড়রা। আনন্দে কারো কারো চোখ ভিজলো। ফাইনালে ৬-১ গোলে ওমানকে হারিয়ে বাংলাদেশের পাকিস্তানী কোচ নাভিদ আলম অধিনায়ক মামুনুর রহমান চয়নকে জড়িয়ে ধরলেন। ছুটে গিয়ে আবার কৃষ্ণা, নিলয়কে আলিঙ্গন করলেন। মাইকে ততক্ষণে ডাক পড়ল খেলোয়াড়দের। ডাক পড়ল পুস্কর খিষা মিমোর। দুর্দান্ত ম্যাচ খেলে বাংলাদেশকে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পথে এগিয়ে দেয়া মিমো পেলেন ম্যাচ সেরার পুরস্কার। 



প্রায় চার বছর আগে ২০১০ সালে পঞ্চম স্থান পেয়ে গুয়াংজু এশিয়ান গেমস হকির চূড়ান্ত পর্বে উঠেছিল বাংলাদেশ। দক্ষিণ কোরিয়ার ইঞ্চিয়নে সেপ্টেম্বরে অনুষ্ঠেয় এবারের এশিয়ান গেমসের চূড়ান্ত পর্ব আগেই নিশ্চিত করেছিল চয়নরা। তবে এবার তারা যাচ্ছে বাছাইয়ে অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন হয়ে। 



অধিনায়ক চয়নের দল গতকাল রবিবার ফাইনালে দারুণ খেলে ওমানকে হারিয়েছে। বাংলাদেশের হকি দর্শকরা অতটা আশা না করলেও চ্যাম্পিয়ন হয়েই বাংলাদেশের খেলোয়াড়রা দেখাতে চেয়েছিল তারা বিকল্প কিছু ভাবছে না। টুর্নামেন্টের শুরুতে কথাটা প্রকাশ না করলেও মনে-প্রাণে শিরোপা জয়ের শপথ নিয়ে দলের কোচ নাভিদ আলম এশিয়ান গেমস হকির বাছাই টুর্নামেন্ট অভিযান শুরু করেন। 



কোচ মুখে বলেছিলেন- একটা করে ম্যাচ জিতে এগিয়ে যেতে চান। তার কাছে প্রত্যেকটি ম্যাচই ফাইনাল। অনেকেই এই কোচের কথা কানে তুলেনি। কারণ দলে রয়েছে ৬ জন অনভিজ্ঞ খেলোয়াড় যারা খেলেনি কোনো অনুশীলন ম্যাচ। দেখা হয়নি দলের আসল প্রস্তুতি। কঠিন চ্যালেঞ্জ নিয়ে মাঠে নামা খেলোয়াড়রা গ্রুপ পর্বের প্রত্যেকটি ম্যাচ জিতেছে। বি গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। ফাইনালে আবার সেই ওমানকে পেয়েছিল বাংলাদেশের খেলোয়াড়রা। এশিয়া কাপ হকিতে যে ওমানের কাছে হেরে (৪-০) বাংলাদেশকে লজ্জায় পড়তে হয়েছিল। বাংলাদেশকে কটূ কথা শুনতে হয়েছিল। সেই ওমানকে কাল নিজেদের মাঠে পেয়ে ৬ গোল দিল স্বাগতিকরা। খেলা শেষে কোচ নাভিদ আলম তার খেলোয়াড়দের কাছে ডেকে জড়ো করে বললেন, ওমানকে দেয়া ফাইনালে প্রথম চার গোল হচ্ছে এশিয়া কাপ হকির গোল ফিরিয়ে দেয়া। আর শেষ দুই গোল হচ্ছে ওমানকে আমাদের উপহার।' তিনি শিরোপা উত্সর্গ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং হকি ফেডারেশনের সভাপতি এয়ার মার্শাল ইনামুল বারীকে। 



ইসলামী ব্যাংক এশিয়ান গেমস বাছাই হকির ফাইনালে নিলয় ও মিমো দুইটি করে গোল দেন। অপর দুইটি গোল করেন চয়ন এবং নান্নু। ওমানের বাসিম খাতার গোল করেন। ফাইনালে কিছু ভুল-ভ্রান্তি ছাড়া সবাই ভালো খেলেছেন। অনেক দিন পর মিমো জ্বলে উঠলেন। নিলয়কে অলস বলা হলেও তার খেলা নজর কেড়েছে। পরিশ্রমী নান্নু সুযোগ-সন্ধানী কৌশিক, পেনাল্টি কর্নার স্পেশালিস্ট অধিনায়ক মামুনুর রহমান চয়ন, চতুর গোলকিপার অসীম গোপ, ফাইনাল জেতার জন্য ওমানের বিরুদ্ধে যা যা করা দরকার সেটাই করেছেন। ম্যাচটা স্লো দরকার হলে সেটাও কৌশলে করে নিয়েছেন। যেটা মালয়েশিয়ান এবং চীনা আম্পায়ারদের চোখ ফাঁকি দিয়ে করেছেন গোলকিপার অসীম গোপ। ওমানের আক্রমণ ঠেকিয়েছেন চয়ন। নিশ্চিত গোল ফিরিয়েছেন তিনি। 



ওমান আটটি পেনাল্টি কর্নার পেলেও গোল করতে পারেননি চয়ন আর গোলকিপার অসীম গোপের দক্ষতায়। কোনো না কোনো রকমে ওমানের আক্রমণ ব্যর্থ করে দিয়েছেন তারা। ১৩ মিনিটে চয়ন পেনাল্টি থেকে গোল করেন ১-০। ২৪ মিনিটে ওমানের বাসিম খাতার সমতা আনেন ১-১। ৩৩ মিনিটে নান্নু গোল করান নিলয়কে দিয়ে। এগিয়ে যায় বাংলাদেশ ২-১। মিমো ম্যাচের তৃতীয় গোল করার (৩-১) পর বাংলাদেশ খেলাটা স্লো করে নিজেরা দম নিতে গিয়ে ওমান পেনাল্টি কর্নার পায় চারটি; কিন্তু গোল হলো না। শেষ ৫ মিনিটে আবার তেড়ে উঠল বাংলাদেশ। ওমানকে গুঁড়িয়ে দিলেন সারোয়ার, মিমো, নান্নু, নিলয়রা। ৬৫ মিনিটে মিমোর পাস থেকে নিজের দ্বিতীয় গোল করেন নিলয় ৪-১। ৬৯ মিনিটে নিলয় থেকে বল নিয়ে মিমো গোলকিপার কাসিমকে ডজ দিয়ে তার নিজের দ্বিতীয় গোল করেন ৫-১। ৭০ মিনিটে সারোয়ার থেকে বল পেয়ে নান্নু ষষ্ঠ গোল করেন ৬-১। 



চূড়ান্ত পর্বের দলগুলো



ঢাকায় এশিয়ান গেমস হকির আট দলের বাছাই পর্ব শেষে চূড়ান্ত পর্বে উঠেছে ছয় দল। এর মধ্যে বাংলাদেশ চ্যাম্পিয়ন, ওমান রানার্সআপ, সিঙ্গাপুর তৃতীয়, শ্রীলংকা চতুর্থ, ইরান পঞ্চম, চায়নীজ তাইপে ষষ্ঠ হিসেবে যোগ্যতা অর্জন করলো। অপর দুই দল কাতার সপ্তম, হংকং চায়না অষ্টম স্থান পেয়ে বাদ পড়ে। এছাড়াও ভারত, পাকিস্তান, চীন, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া এবং মালয়েশিয়া চূড়ান্ত পর্বে খেলবে। 



ফাইনালের আগে একটা জেদ ধরেছিলাম



-মিমো



ফরোয়ার্ড পুরস্কার খিসা মিমো ম্যাচ সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কার পাওয়ার পর বলছিলেন, 'প্রথম ম্যাচ থেকে গোল মিস করছিলাম। ফাইনালের আগে একটা জেদ ধরেছিলাম কিছু একটা করতে হবে।' টুর্নামেন্ট নিয়ে মিমো বলেন, 'দলে অনেক জুনিয়র খেলোয়াড় রয়েছে। যাদের সাথে এখনো কম্বিনেশন হয়নি। বল কমিউনিকেশনটা সঠিক হচ্ছিল না। এটা খেলতে খেলতে গড়ে উঠবে। ফাইনাল ম্যাচ নিয়ে মিমো বলেন, এশিয়া কাপ হকিতে যখন ওমানের কাছে হেরে গিয়েছিলাম। তখন মন খারাপ হয়েছিল। চিন্তা করেছিলাম যদি কখনো সুযোগ পাই তাহলে ওদেরকে বুঝিয়ে দেব। আজ সেটা করতে পেরেছি বলে ভালো লাগছে।'

Share this post

scroll to top
error: Content is protected !!