DMCA.com Protection Status
title="৭

কী আশায় বাঁধি খেলাঘর, বেদনার বালুচরে- নিয়তি আমার ভাগ্য লয়ে যে, নিশিদিন খেলা করেঃ

images (2)images (3)প্রয়াত জনপ্রিয় শিল্পী কিশোর কুমারের ততোধিক জনপ্রিয়  এই আধুনিক বাংলা গানটি কি বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের জন্য প্রযোজ্য নয়? গলার ফাঁস হয়ে ওঠা সুপার টেনে তারা আশার তরী কম ভাসাননি। কিন্তু সেখানে কি কখনও পূর্ণতা এনে দিতে পেরেছেন? পূর্ণতার বদলে ছিল রাশি রাশি ব্যর্থতার ডালি। যে ব্যর্থতার ভারে মুশফিকুর রহীমের দল এমনই নিমজ্জিত হয়েছেন যে তাদের নিয়ে দেশবাসী আর কোন আশাই দেখেন না।

কোনোরকম প্রতিযোগিতা শেষ হলেই তারা বাঁচেন। কিন্তু সেই শেষও তো হচ্ছে না। বিপদে পড়লে সময় যেমন সহজে শেষ হতে চায় না, বাংলাদেশ দলের অবস্থা হয়েছে অনেকটা সেরকমই। হারের লজ্জা ডুবতে ডুবতে মেরুদণ্ড ভেঙে যাওয়া মুশফিকুর রহীমের দলকে আজও মাঠে নামতে হবে। প্রতিপক্ষ অস্ট্রেলিয়া। দলপতি কিন্তু আশার ভেলা এখানেও ভাসাতে চান।

 

পাকিস্তানের কাছে আরেকটি শোচনীয় হারের পর ম্যাচ শেষে তিনি অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে শেষ ম্যাচে ভালো একটা কিছু করে দেখানোর ইচ্ছে প্রকাশ করেছেন! এ রকম কথা প্রতিটি ম্যাচেই হারের পর বলে এসেছেন। আজ অবশ্য একটা কিছু হবে। তা হোক অস্ট্রেলিয়ার কিংবা বাংলাদেশের। যে কোনো দল পাবে জয়ের স্বাদ। কারণ সুপার টেনে বাংলাদেশ যেমন জয়শূন্য। তেমনি অস্ট্রেলিয়াও।

কিন্তু তারপরও দুটি দলকে আজ একই পাল্লায় রাখা যাচ্ছে না। কারণ অস্ট্রেলিয়া বাংলাদেশের মতো লাগাতার বাজে খেলেনি। তা ছাড়া শুধু এই আসরেই অসিরা ভালো করতে পারেননি। যদিও তারা ছিল শিরোপার দাবিদার। সেখানে বাংলাদেশের লক্ষ্য কী ছিল, আর কী তারা করেছে, নিকট অতীতে তাদের ফল কী ছিল তা সবারই নখদর্পণে।

২০১১ সালের দুটি কোয়ার্টার ফাইনালসহ বাংলাদেশের ছয়টি খেলা নিয়ে দেশবাসীর যেরকম আগ্রহের পারদ চূড়ায় ছিল, এবার গোটা একটি বিশ্বকাপের আয়োজক হওয়ার পর আগ্রহের পারদ সেখানে আরও বেশি বেড়ে যাওয়ার কথা, অথচ সেখানে আশ্চর্য রকমের পতন হয়েছে। আগে যেখানে সন্ধ্যাবাতি জ্বলে উঠতে না উঠতেই মানুষজন হুমড়ি খেয়ে পড়তেন শেরেবাংলা জাতীয় স্টেডিয়ামে, যান চলাচল বন্ধ হয়ে যেত, সেখানে এবার মানুষের কোনো সরব উপস্থিতিই নেই। এমনকি বাংলাদেশ খেলছে তা নিয়েও বাড়তি আগ্রহ নেই।

এ রকমটি হওয়ার কারণ আর কিছুই নয়, বাংলাদেশ দলের লাগাতার ব্যর্থতা। দলের এক একটি হারে দেশবাসী যেখানে মুষড়ে পড়েছেন, সেখানে ক্রিকেটারদের কোনো প্রতিক্রিয়াই নেই। এ রকম হার যেন তাদের কাছে কোনো ব্যাপারই না। তবে লোক দেখানো কৃত্রিম অনুশোচনাবোধ দেখাতে আবার তারা ভুল করেন না। আজ অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ম্যাচে বাংলাদেশ দল যদি ঘুরে দাঁড়াতে পারে অন্তত কিছুটা হলেও সান্ত্বনা খুঁজে পাওয়া যাবে যে, না বাংলাদেশও ঘুরে দাঁড়াতে পারে। বাজে সময়কে পিছনে ফেলতে পারে। কিন্তু বাংলাদেশ দল কি তা করে দেখাতে পারবে? প্রতিপক্ষ অস্ট্রেলিয়া। যাদের মুঠোতে আছে একদিনের চারটি বিশ্ব চ্যাম্পিয়নের খেতাব। কিন্তু সংক্ষিপ্ত পরিসরের ক্রিকেটে নিজেরা এখনও তার স্বাদ নিতে পারেননি। শিরোপা জিততে না পারলেও কিংবা এবারের আসরে জয়শূন্য থাকলেও তাদেরকে খাটো করে দেখার কোনো সুযোগ নেই।

অথচ কী আশ্চর্য বাংলাদেশ দল ম্যাচের আগের দিন স্টেডিয়ামমুখীই হয়নি। তাহলে কি তারা অস্ট্রেলিয়াকে হালকা করে দেখছে। তাই-বা কী করে হয়। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে দুবারের মুখোমুখিতে দুবারই বাংলাদেশ হেরেছে। তাহলে কি বাংলাদেশ দল হাল ছেড়ে দিয়েছে? মনে মনে ভাবছে গলার ফাঁস হয়ে ওঠা এবারের আসরে যখন মান-ইজ্জত সবই গেছে, বাকি নেই অবশিষ্ট কিছুই, সেখানে আর অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে হাড়ভাঙা খাটুনি খেটে লাভ কী। অনুশীলন করলেও যা, না করলেও তা হবে। চৈত্রের কাঠফাটা রোদে গা পুড়িয়ে আর লাভ কী? তাহলে ঘরে বসে দিন পার করে দেয়াই ভালো! ক্রিকেটারদের সেই ঘরে বসে দিন কাটানো ছিল পাঁচতারকা হোটেলে বসে পার করা। শুধু সুইমিং করেছেন।

আর নিজেদের মাঝে কিছু আলাপ-আলোচনা সেরে নিয়েছেন। এখন যদি এভাবে কিছু হয়। কে জানে কোনো মিরাকল ঘটেও যেতে পারে। খেলার আগের দিন বাংলাদেশ দল স্টেডিয়ামমুখী না হওয়াতে নিরাপত্তাকর্মীদের তোড়জোড়ও ছিল না। অনেকেরই ব্যস্ততা কমে গেছে। এর মাঝে অন্যতম একটা চাহিদা কমেছে বাংলাদেশের খেলা দেখার জন্য টিকিটের কোনো হাহাকার নেই। তবে সোমবার আসলেই মিরপুরের চিত্র ছিল সম্পূর্ণ ভিন্ন। আজ দুটি খেলা। অথচ কী আশ্চর্য বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ অস্ট্রেলিয়াও অনুশীলন করেনি। এমনকি ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সেমিফাইনালে ওঠার মতো গুরুত্বপূর্ণ খেলা থাকার পরও পাকিস্তানও অনুশীলন করেনি। শুধু ওয়েস্ট ইন্ডিজের ক্রিকেটাররা আসায় মনে হয়েছে যে টি-২০’র বিশ্ব আসর শেষ হয়ে যায়নি! কিছুটা হলেও প্রাণচাঞ্চ্যলতা ছিল। এদিকে আজকের ম্যাচে ভালো করে দুর্গতি কাটিয়ে ওঠার যে চেষ্টা

বাংলাদেশ দল করবে সেখানেও বাধা আসছে। দুর্গতি যেন পিছুই ছাড়ছে না। দলের ব্যর্থতার সঙ্গে ক্রিকেটারদের ইনজুরিও পিছু নিয়েছে। দলের বৃহত্তর স্বার্থে পুরোপুরি সুস্থ না হয়ে খেলে যাওয়া মাশরাফি আজ আর খেলতেই পারছেন না। তার জন্য এবারের আসর শেষ হয়ে গেছে। তার পরিবর্তে তরুণ পেসার তাসকিনকে দলে নেয়া হয়েছে। তাই আজকের ম্যাচেও সেরা একাদশে পরিবর্তন আসছেই। দেখার বিষয় সে পরিবর্তনের সংখ্যা কয়টিতে গিয়ে দাঁড়ায়। ব্যাটিং লাইনে পরিবর্তন আসছে। অবস্থার পরিবর্তনের জন্য শামসুর রহমান শুভকে সুযোগ দেয়া হয়েছিল। কিন্তু তিনি যাচ্ছেতাইভাবে ব্যর্থ হয়েছেন। তবে তার চেয়েও বড় ব্যর্থতার নাম তামিম ইকবাল। হংকং ট্র্যাজেডি দিয়ে শুরু।

এরপর খেলা চারটি ম্যাচে তিনি দু অঙ্কের রানই করতে পারেননি। আউটও হয়েছেন বাজেভাবে। তার এ রকম আউট হওয়া পরে দলের ওপরও নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। যা পরে আর কাটিয়ে উঠতে পারেননি। পাকিস্তানের কাছে হারের পর তামিমকেও বাদ দেয়ার প্রশ্ন উঠেছে। যদিও দলপতি আশ্চর্যরকমভাবে তামিমের পক্ষ নিয়েছেন। তাকে রক্ষা করতে গিয়ে বলেছেন, একজন তামিম, সাকিব, মুশফিক বা মাশরাফিকে পেতে ১০ বছর সময় লাগে।’ যে তামিমের ব্যর্থতার ভারে ন্যুব্জ গোটা দল।

সেখানে তার মতো একজন ফর্মে না থাকা ব্যাটসম্যানের পক্ষ কী করে অধিনায়ক নেন। তাহলে কি ধরে নেয়া হবে অধিনায়ক যাদের নাম উল্লেখ করেছেন তারা যতই বাজে খেলেন না কেন, সেরা একাদশে তাদের রেখেই বাকিদের অবস্থান নির্ধারণ। তারা সবকিছুর ঊর্ধ্বে! অধিনায়কের চোখে সবাই কিন্তু সমান হওয়া উচিত। কিন্তু মুশফিকের কথায় তা মনে হচ্ছে না। দলের ব্যর্থতার জন্য কী এটিও কোনো ভূমিকা রেখেছে কি না তাও ভাবার আছে। 

Share this post

scroll to top
error: Content is protected !!