DMCA.com Protection Status
title="শোকাহত

এরশাদের নামে অর্ধকোটি টাকার চাঁদাবাজি!

9685কড়াইল বস্তি থেকে সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের নামে অর্ধকোটি টাকা চাঁদাবাজি করা হয়েছে। বিষয়টি তদন্তে প্রমাণিত হলেও চাঁদাবাজির অভিযোগে অভিযুক্ত জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য এসএম ফয়সল চিশতী বহাল তবিয়তে এরশাদের সঙ্গেই রয়েছেন।

 

হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ ঘটনা জানার পর জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) কাজী মাহমুদ হাসানকে তদন্তের দায়িত্ব দিয়েছিলেন। তদন্ত কমিটি চাঁদাবাজির সত্যতা পায়। সে অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ দেয়। কিন্তু বিষয়টি আর আলোর মুখ দেখেনি।

 

এমনকি সরকারি টিআর কাবিখা লুটপাটেরও প্রমাণ পায় তদন্ত কমিটি। ত্রাণ মন্ত্রণালয় তদন্তের উদ্যোগ নিলেও পরে তা পিছিয়ে যায়।

 

জাতীয় পার্টির সূত্র জানায়, স্বয়ং এরশাদ বিষয়টি অবগত রয়েছেন। কিন্তু চাঁদার ভাগ পাওয়ায় আর উচ্চবাচ্য করছেন না।

 

সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছে, কড়াইল বস্তি এলাকায় পপুলার লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি জমি কেনে। কিন্তু ওই জমি দখলে বাধা হয়ে দাঁড়ান ওই জাপা নেতা। পপুলার লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি বাধ্য হয়ে দারস্থ হন তৎকালীন স্থানীয় সংসদ সদস্য হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের। এমপি হিসেবে এরশাদের সবকাজের দেখভাল করতেন প্রেসিডিয়াম সদস্য এসএম ফয়সল চিশতী।

 

চিশতী পরে বিষয়টি মধ্যস্থতার দায়িত্ব নেন। আর এরশাদকে দেওয়ার জন্য এক কোটি টাকা চাঁদা দাবি করেন। কিন্তু পপুলার লাইফ ইন্স্যুরেন্স শেষ পর্যন্ত ৫১ লাখ ৫০ হাজার টাকা তুলে দেন চিশতীকে। 

 

এই টাকা পুরোটাই গ্রহণ করেন ফয়সল চিশতী। বিষয়টি জানাজানি হলে গুলশান থানার তৎকালীন ওসিকে ১ লাখ ৭০ হাজার টাকা ও জাপার কয়েকজন নেতাকে ২০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকা করে দেন ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার জন্য।

 

চাঁদাবাজির ঘটনা প্রকাশ হয়ে পড়লে স্বয়ং এরশাদ তদন্তের দায়িত্ব দেন ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) কাজী মাহমুদ হাসানকে। তিনি সংশ্লিষ্ট সবার সঙ্গে কথা বলে রিপোর্ট তৈরি করেন।

 

তদন্ত রিপোর্ট হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের হাতে তুলেও দেন। কিন্তু রহস্যজনক কারণে কোনোই ব্যবস্থা নেন নি এরশাদ। কেউ কেউ বলেন, এরশাদ নিজেও ভাগ পাওয়ায় আর বিষয়টি নিয়ে কথা বলেন নি।

 

তদন্ত কমিটির কাছে যুব সংহতির নেতা হাসিবুল ইসলাম জয় নিজেই স্বীকার করেছেন চাঁদাবাজির কথা। ৫১ লাখ ৫০ হাজার টাকা ফয়সল চিশতীকে দেওয়ার সময় উপস্থিত ছিলেন বলে স্বীকার করেন। তিনি জানান, রাজধানীর বনানীতে অবস্থিত ‘সুইট ড্রিম’ হোটেলে এই টাকা লেনদেন হয়। 

 

অন্যান্য সাক্ষীও এরশাদের নামে চাঁদাবাজির বিষয়টি স্বীকার করেছেন। তদন্ত সম্পন্ন হওয়ার পর জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ ব্যবস্থা নেওয়ার কথা ঘোষণা করেছিলেন। কিন্তু পরে আর সেদিকে পা বাড়ান নি এরশাদ।

 

মাঝখানে কিছু দিন এরশাদের বাসায় আসা-যাওয়াও বন্ধ করে দিয়েছিলেন চিশতী।পরে আবার  রহস্যজনক কারণে ফয়সল চিশতীকে কাছে টেনে নেন এরশাদ। এ কারণে নেতাকর্মীদের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে।

 

কড়াইল বস্তির পাশাপাশি এরশাদের সংসদীয় এলাকা ঢাকা-১৭ আসনে উন্নয়ন কাজের জন্য বরাদ্দ বেশকিছু অর্থ আত্মসাতেরও প্রমাণ পায় তদন্ত কমিটি। ক্যান্টনমেন্ট থানা জাতীয় পার্টির সভাপতি মাহমুদুল হক খান দীপু তদন্ত কমিটিকে জানান, ২০০৯ সালের মে মাসে সরকারিভাবে ২৫০ টন চাল বরাদ্দ আসে।

 

মোট ৫৩টি প্রকল্প তৈরি করা হয়। ব্যাপ্টিস্ট চার্চের নামে ৪ টন চাল বরাদ্দ ছিল। কিন্তু কোনো কাজ করা হয় নি। ভূয়া প্রকল্প দেখিয়ে ওই ৪ টন চাল আত্মসাৎ করা হয়। একই কায়দায় সামছুদ্দিনের বাড়ির মাটি কাটা থেকে এইচএম মজুমদারের বাড়ির ড্রেন পরিষ্কারের নামে ৫ টন, গুলশান-১ এর ৪৪, ৩৫ ও ৩৭ নম্বর রোডের ড্রেন পরিষ্কার ও সংস্কার কাজের নামে ৫ টন চাল আত্মসাৎ করেছেন ফয়সল চিশতী।

 

এছাড়া ওই সময়ে প্রতিটন চালের বাজারমূল্য ছিলো ১৮ হাজার টাকা। কিন্তু প্রকল্পগুলিতে প্রতিটন চালের বিপরীতে মাত্র ১২ হাজার করে টাকা দেওয়ার কথা জানান মাহমুদুল হক খান দিপু।

 

জাপার এই নেতা তদন্ত কমিটিকে আরও জানান, ওই ঘটনার পরের মাস অর্থাৎ ২০০৯ সালের জুনে ৮৭ টন চাল বরাদ্দ হয়। সেখানে ভুয়া প্রকল্প দাখিল করে ১২ টন চাল আত্মসাৎ করেন ফয়সল চিশতী। 

 

শতাধিক প্রকল্পে নানা অনিয়মের প্রমাণ পায় তদন্ত কমিটি। কমিটি প্রধান ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) কাজী মাহমুদ হাসান তদন্ত রিপোর্ট জমা দেওয়ার পর জানিয়েছিলেন, কয়েক কোটি টাকা আত্মসাতের প্রমাণ পাওয়া গেছে।

 

ফয়সল চিশতী বলেন, আমার কোনো মন্তব্য নেই। আমি কিছু জানি না। আপনারা যা খুশি লেখেন।


একথা ক’টি বলেই ফোন রেখে দেন তিনি। 

 

Share this post

scroll to top
error: Content is protected !!