DMCA.com Protection Status
title="৭

ব্যর্থতার ঊর্ধ্বে তামিম!

Untitled-6kjl.সাফল্য আসুক বা না আসুক, পরিবর্তনের জোয়ারে ভাসছে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল। সুপার টেনে একটি ম্যাচেও বাংলাদেশ অপরিবর্তিত দল নিয়ে খেলতে নামেনি। সর্বনিম্ন দুটি থেকে সর্বোচ্চ চারটি পরিবর্তন হয়েছে। যাদের বাদ দেয়া হয়েছে সবাই ভালো করতে না পারার কারণে।

কিন্তু এই নীতি সবার ক্ষেত্রে সমানভাবে প্রযোজ্য হচ্ছে না। সেরা একাদশ গঠন করে থাকেন কোচ-অধিনায়ক মিলে। এখানে প্রচণ্ড রকমের স্বেচ্ছাচারিতা দেখিয়ে চলেছেন তারা। ব্যর্থতার কারণে শামসুর, জিয়াউর, মুমিনুল, সোহাগ গাজী, রাজ্জাক, ফরহাদ রেজা বাদ পড়লেও লাগাতার ব্যর্থতার পরও তামিম ইকবালকে বাদ দেয়া হয়নি। কিন্তু কেন? কেন এই তামিমপ্রীতি?

তামিম ইকবাল কি দলের আর সবার মতোই একজন না? তিনি দলের সেরা ক্রিকেটার। কিন্তু একজন সেরা ক্রিকেটারের মাপকাঠি কী? যদি তার সাফল্যকে বিবেচনা করা হয়ে থাকে তাহলে তামিম ইকবালকে বিশ্ব টি-২০ আসরে সে কাতারে ফেলা যায় না। তার থেকে অনেক ভালো খেলছেন এনামুল হক বিজয়। এই আসরে যদি বাংলাদেশের সেরা ক্রিকেটার কেউ হয়ে থাকেন তাহলে এনামুল হক বিজয়ই হবেন।

তামিম ইকবালের অবস্থান সেখানে বাংলাদেশের সবচেয়ে ব্যর্থ ক্রিকেটারের তালিকার তলানিতে থাকবে। গত পাঁচটি ম্যাচে তার রান ছিল ০, ৫, ৬, ১৬ ও ৫। এর আগের দুটি ম্যাচে নেপাল ও আফগানিস্তানের বিপক্ষেও যে তিনি খুব ভালো করেছেন তা কিন্তু নয়। নেপালের বিপক্ষে ৩০ ও আফগানিস্তানের বিপক্ষে ২১ রান।

পাকিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচ শেষে সংবাদ সম্মেলনে দলের অন্যসব খেলোয়াড়কে ব্যর্থতার কারণে বাদ দেয়া হলেও একই কারণে তামিমকে কেন বাদ দেয়া হচ্ছে না— অধিনায়ক মুশফিকুর রহীমের কাছে এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে মুশফিক নগ্নভাবে তামিমের পক্ষ নিয়েছিলেন। তার কথায় ছিল দম্ভোক্তিও।

তামিমের মতো ক্রিকেটারকে ১০ বছরে পাওয়া যায় না বলে জানিয়েছিলেন অধিনায়ক। যদিও পরে বলেছিলেন টিম ম্যানেজমেন্ট প্রয়োজন মনে করলে বাদ দিতেও পারে। কিন্তু অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ম্যাচে তামিমকে বাদ দেয়া হয়নি। তামিমও নিজেকে প্রমাণ করতে পারেননি। ব্যর্থতার পাল্লা ভারী করেছেন মাত্র পাঁচ রানে আউট হয়ে। মুশফিক যেভাবে তামিমের পক্ষ নিয়েছেন এর আগে তিনি একইভাবে অবস্থান নিয়েছিলেন মাহমুদউল্লাহরও।

লাগাতর ব্যর্থতার পর অবশেষে মাহমুদউল্লাহ নিজেকে ফিরে পেয়েছেন। এভাবে সুযোগ পেতে থাকলে তামিম ইকবালও এক সময় নিজেকে হয়তো ফিরে পাবেন। তাহলে এ রকম দৃষ্টি শামসুর, জিয়াউর বা বাদপড়া অন্যদের ক্ষেত্রে কেন পড়বে না। শামসুর সুযোগ পেয়ে দুটি ম্যাচ খেলে ০ ও ৪ রান করে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ম্যাচে বাদ পড়েন। জিয়াউর স্কোয়াডেই ছিলেন না। রুবেলের ইনজুরিতে সুযোগ পেয়ে তিনটি ম্যাচ খেলেন। তিনিও ভালো করতে না পারায় অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ম্যাচে ঝরে পড়েন। মুমিনুল ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ম্যাচে সুযোগ পেয়ে ১৬ রান করায় অধিনায়কের মনঃপূত না হওয়াতে পরের দুটি ম্যাচে বাদ পড়েন।

পরে আবার অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সুযোগ পান। অথচ টেস্ট ও একদিনের ম্যাচে মুমিনুলই বাংলাদেশের সবচেয়ে ধারাবাহিক সফল ব্যাটসম্যান। কিন্তু তার এসব নৈপুণ্য টিম ম্যানেজমেন্টের মন গলাতে পারেনি। সোহাগ গাজী অভিষেকের পর থেকেই দলের আস্থার প্রতীক হয়ে উঠেছিলেন। বল হাতে হ্যাটট্রিক আর ব্যাট হাতে সেঞ্চুরিও করেছেন টেস্টে। একদিনের ও টি-২০ ম্যাচে মোটামুটি সফল। কিন্তু তিনিও ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও ভারতের বিপক্ষে ম্যাচে ভালো করতে না পারার দায় নিয়ে পাকিস্তানের বিপক্ষে বাদ পড়েন। পরে আবার অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সুযোগ পান।

এক সময় ‘দক্ষ ফিনিশার’ হয়ে ওঠা নাসির হোসেনকেও ব্যর্থতার দায় মাথায় নিয়ে বাদ পড়তে হয়েছে। পরে আবার ফিরেও এসেছেন। এরা সবাই যদি ব্যর্থতার ‘বলি’ হতে পারেন তাহলে তামিম কেন পার পাবেন? ভারতের বীরেন্দ্র শেওয়াগের চেয়ে কি তামিম বড় ব্যাটসম্যান? ট্রিপল সেঞ্চুরিও আছে। কিন্তু ফর্ম হারানোর কারণে তাকেও বাদ পড়তে হয়েছে। আবার সুযোগ পেয়েছেন, আবার বাদ পড়েছেন।

কিন্তু তামিম ইকবালের জন্য তার স্থানটি কি পাকাপোক্তই? যেখানে শত ব্যর্থতাও দল থেকে বাদ দেয়া যাবে না। শেওয়াগের উদাহরণ চলে আসাতে অনেকেই বলবেন ভারতে ব্যাটসম্যানের অভাব নেই। তাই শেওয়াগের ব্যর্থতা মোচন সম্ভব হয়েছে। বাংলাদেশে সেরকম ব্যাটসম্যান কোথায় যা দিয়ে তামিমের বিকল্প খেলানো হবে। এখানে আবারও প্রশ্ন— শেওয়াগের মানের নয় তামিম। তেমনি বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে পড়তি ফর্মের তামিমের বিকল্প ব্যাটসম্যানের অভাব নেই। অভাব শুধু আন্তরিকতার। আর প্রয়োজন ‘প্রীতি’ একাদশ না গড়ে ‘সেরা’ একদশ গড়া।

তামিম ইকবালের কপাল ভালো সহসাই বাংলাদেশের কোন খেলা নেই। পরবর্তী কোনো ম্যাচের আগে তামিমের এ ব্যর্থতা হয়তো সংশ্লিষ্টরা বেমালুম ভুলে যাবেন। দেখা যাবে এবারের আসরের ব্যর্থতার কারণে অনেকেই দলে নেই। কিন্তু তামিম ইকবাল ঠিকই দলে আছেন। তাতে করে ব্যক্তি তামিম ইকবাল লাভবান হলেও দেশ কিন্তু লাভবান হবে না। তামিম এখন দলের বোঝা। বিষয়টি উপলব্ধি করতে হবে প্রথমে নির্বাচক থেকে শুরু করে অধিনায়ককেও।

যদিও অধিনায়ক মুশফিক তা মনে করেন না। তিনি বলেন, ‘তামিমের এখনও দেয়ার মতো অনেক কিছু আছে। এ টুর্নামেন্টে সে ভালো করতে পারেনি। সামনে অনেক সুযোগ আছে। তার আগে দেখতে হবে তার কী কী ভুল আছে। সেগুলো নিয়ে কাজ করতে হবে।’ অধিনায়কের এ দৃষ্টি কি সব ক্রিকেটারের ক্ষেত্রে সমান হওয়া উচিত নয়? 

Share this post

scroll to top
error: Content is protected !!