বিদেশ ভ্রমণের হিড়িক পড়েছে নির্বাচন কমিশনে। বর্তমানে প্রধান নির্বাচন কমিশন ও ভারপ্রাপ্ত সচিব বিদেশে রয়েছেন। ফলে সাংবিধানিক এই প্রতিষ্ঠানটি অভিভাবক শূন্য। একই অবস্থা ভোটার প্রকল্পেরও। বাকিদের যাওয়ার অপেক্ষা।দেশের অন্যতম প্রধান নির্বাচন, উপজেলা নির্বাচন চলাকালে এভাব গুরূত্বপূর্ন দ্বায়ীত্বে নিয়োগপ্রাপ্ত পদস্থ কর্মকর্তাদের এভাবে বিদেশ ভ্রমন অভূতপূর্ব।
চলতি এপ্রিল থেকে শুরু হচ্ছে কমিশনার ও সব পর্যায়ের কর্মকর্তাদের বিদেশ সফর। আগামী মে পর্যন্ত তা অব্যাহত থাকবে। এ তালিকায় খোদ ইসি সচিবালয়, জাতীয় পরিচয়পত্র ও নিবন্ধন অনুবিভাগ এবং জেলার কর্মকর্তারা রয়েছেন।
আইডেন্টিফিকেশন সিস্টেম ফর অ্যানহেন্সিং অ্যাকসেস টু সার্ভিসেস (আইডিয়া) ও জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি (ইউএনডিপি)—এ দুটি প্রকল্পের অধীনে বিদেশ সফরে ব্যয় হবে প্রায় দুই কোটি টাকা। খবর ইসির কর্মকর্তা সূত্রের।
জানা গেছে, ডাটাবেজ রক্ষণাবেক্ষণ, স্থাপন (তৈরি) ও বিতরণ, নাগরিকদের ডাটাবেজে ব্যক্তিগত তথ্য সংরক্ষণ এবং সরকারের নাগরিক সুবিধা আদান-প্রদান অবাধ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের পদ্ধতি—এসব বিষয় সম্পর্কে সম্যক ধারণা পাওয়াই মূলত ওই সফরের উদ্দেশ্য। যা ইউএনডিপি ও আইডিয়া প্রকল্পের অর্থায়নে বাস্তবায়িত হচ্ছে।
ইসির কর্মকর্তারা জানান, এপ্রিল ও মে মাস জুড়ে ঘুরেফিরেই বিদেশে থাকবেন ভারপ্রাপ্ত সচিব ও ভোটার প্রকল্পের মহাপরিচালকসহ কিছু কর্মকর্তা
।
গত ৩ মার্চ চলমান উপজেলা নির্বাচন ফেলে সস্ত্রীক মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে যান প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী রকিবউদ্দীন আহমেদ। তফসিল ঘোষিত উপজেলা নির্বাচন পাঁচ ধাপে শেষ হয়েছে গত ৩১ মার্চ। গত ১৯ ও ২৭ ফেব্রুয়ারি ছাড়া পরবর্তী ধাপের নির্বাচনগুলো সিইসির অনুপস্থিতিতে শেষ হয়। পরবর্তী ধাপগুলোতে ব্যাপক সহিংসতা, প্রার্থীদের ভোটবর্জন, জালভোটসহ নানা অনিয়মের মধ্যে এই নির্বাচন সম্পন্ন হওয়ায় গণমাধ্যমসহ সুশীল সমাজের পক্ষ থেকে সিইসিকে নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা হয়।
এদিকে, গত মঙ্গলবার রাতে আমেরিকায় গেছেন ইসির ভারপ্রাপ্ত সচিব মো. সিরাজুল ইসলাম ও ভোটার প্রকল্পের ডিজি ব্রি. জে. সুলতানুজ্জামান মো. সালেহ উদ্দিন। এ দু’জন যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানরত সিইসির সঙ্গে মিলিত হবেন। সিইসির নেতৃত্বে বিশ্বব্যাংক ও তথ্য-প্রযুক্তির প্রতিষ্ঠান ‘ওরাকলের’ একটি সেমিনারে অংশ নেবেন। এরপর ১৪ এপ্রিল সিইসিসহ প্রতিনিধি দলটি দেশে ফিরে আসবেন বলে জানা গেছে।
সিইসির দেশের আসার পর পরই নির্বাচন কমিশনার ব্রি. জে. (অব.) মো. জাবেদ আলীর নেতৃত্বে আরেকটি প্রতিনিধি দল সিঙ্গাপুর ও অস্ট্রেলিয়া সফরে যাচ্ছেন। আগামী ১৮ এপ্রিল থেকে মে পর্যন্ত প্রায় এক মাস ইসির বাইরে থাকার কথা রয়েছে তার। এই কমিশনারের সফরসঙ্গী হচ্ছেন ইসির যুগ্ম-সচিব জেসমিন টুলী ও আইডিয়া প্রকল্পের উপ-প্রকল্প (উপ-সচিব) পরিচালক মো. আবদুল বারী।
অপর নির্বাচন কমিশনার মোহাম্মদ আবু হাফিজ প্রায় দশ দিনের সফরে যুক্তরাজ্য ও সুইজারল্যান্ড যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। ইতিমধ্যে এ সংক্রান্ত জিও জারি হয়েছে। আগামী ২ মে যুক্তরাজ্যের উদ্দেশে ঢাকা ত্যাগ করবেন সাবেক আমলা ও নির্বাচন কমিশনার আবু হাফিজ। তার নেতৃত্বে চার সদস্যের প্রতিনিধি দলের অন্য সদস্যরা হলেন, কমিশনের ভারপ্রাপ্ত সচিব মো. সিরাজুল ইসলাম, আইডিয়া প্রকল্পের পরিচালক (অপারেশন) মো. মহসীন আলী ও ইসির উপ-সচিব ড. মো. আমজাদ হোসেন। এই প্রতিনিধি দল সুইজারল্যান্ড হয়ে ওই মাসের ১১ তারিখ দেশে ফেরার কথা রয়েছে।
চার সদস্যের প্রতিনিধি দল নিয়ে যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্সে যাবেন কনিষ্ঠ নির্বাচন কমিশনার মো. শাহ নেওয়াজ। এই প্রতিনিধি দলটি আগামী ১৫ মে ঢাকা ত্যাগ করে দেশে ফিরবেন ওই মাসের ২৬ তারিখ। নির্বাচন কমিশনার ছাড়াও এই সফরে থাকবেন কমিশনের অতিরিক্ত সচিব মো. মোখলেছুর রহমান, ভোটার প্রকল্পের ডিজি ব্রি. জে. সুলতানুজ্জামান মো. সালেহ উদ্দীন ও সিনিয়র সহকারী প্রধান মো. সাইফুল হক চৌধুরী।
আর জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচির (ইউএনডিপি) অর্থায়নে ছয় দিনের সফরে জর্দান যাচ্ছেন ঢাকা জেলার সিনিয়র জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো. শাহআলম। জর্দানের উদ্দেশে আগামী ৬ এপ্রিল ঢাকা ত্যাগ করে ১২ এপ্রিল দেশে ফিরবেন। অবাধ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন পদ্ধতি সংক্রান্ত ওয়ার্কশপে ইসির প্রতিনিধিত্ব করবেন তিনি।