আফগানিস্তানে শনিবার কড়া নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে ঐতিহাসিক প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ভোট গ্রহণ শুরু হয়েছে। দেশের ৫ হাজার বছরের ইতিহাসে এবারই প্রথম গণতান্ত্রিক উপায়ে সরকার প্রধান নির্বাচিত করা হচ্ছে। সবমিলিয়ে আট জন প্রার্থী নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করছেন।তবে জঙ্গি গোষ্ঠি তালেবান নির্বাচন নসাৎ করার ঘোষণা দেয়ায় ভোটে গোলযোগের আশঙ্কা করা হচ্ছে।
এদিকে নির্বাচনের মাত্র একদিন আগে শুক্রবার পুলিশের গুলিতে খ্যাতনামা জার্মান আলোকচিত্রী আনজা নিয়েড্রিংহৌস নিহত হয়েছেন এবং তার এক সহকর্মী কানাডার নারী সাংবাদিক ক্যাথি গ্যানন আহত হয়েছেন। তারা দুজনেই অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস বা এপি’র সাংবাদিক। আফগানিস্তানের খোস্ত শহরে নির্বাচনী কর্মীদের সাথে গাড়িতে করে যাবার সময় হঠাৎ করে এক পুলিশ কর্মকর্তা তাদের ওপর গুলি চালায়।
আফগানিস্তানে শনিবার সকাল থেকে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ভোট গ্রহণ শুরু হয়েছে। প্রেসিডেন্ট পদের জন্য নির্বাচনে আটজন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বীতা করছেন। এদের মধ্যে আলোচিত তিনজন হলেন, সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবদুল্লাহ আব্দুল্লাহ ও জালমাই রাসুল এবং সাবেক অর্থমন্ত্রী আশরাফ গনি আহমাদজাই।
আফগানিস্তানের বর্তমান প্রেসিডেন্ট হামিদ কারজাই সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতার কারণে তৃতীয় দফায় আর প্রেসিডেন্ট হতে পারছেন না। ২০০১ সালে তালেবানের পতনের পর থেকে ক্ষমতায় আছেন হামিদ কারজাই ।
দেশের সংবিধান অনুযায়ী বিজয়ী প্রার্থীকে ৫০ ভাগের বেশি ভোট পেতে হবে। নইলে আগামী ২৮ মে সবচেয়ে বেশি ভোট পাওয়া দুই প্রার্থীর মধ্যে পুনরায় ভোট অনুষ্ঠিত হবে। এই নির্বাচনে বৈধ ভোটারের সংখ্যা হচ্ছে সবমিলিয়ে এক কোটি বিশ লাখ। সারা দেশে ভোট কেন্দ্র রয়েছে সাড়ে আটাশ হাজার।
এদিকে তালেবান গোষ্ঠি নির্বাচন বানচাল করার হুমকি দেয়ায় সারা দেশে কঠোর নিরাপত্তা আরোপ করা হয়েছে। বিশেষ করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, নির্বাচন কমিশন এবং কাবুলের জনপ্রিয় পাঁচ তারা হোটেল সেরেনায় অতিরিক্ত পুলিশ ও সেনা মোতায়েন করা হয়েছে। ইতিমধ্যে দেশের বিভিন্ন স্থানে মোতায়েন করা হয়েছে ৩ লাখ ৫২ হাজার সেনা ও পুলিশ। সম্ভাব্য সন্ত্রাসী হামলা ঠেকাতে পাকিস্তানের সীমান্ত সংলগ্ন এলাকাগুলো আগামী ৪৮ ঘণ্টার জন্য বন্ধ করে দেয়া হয়েছে বলে বিবিসি জানিয়েছে।
এছাড়া হামলা ঠেকাতে রাজধানী কাবুলে কোনো ধরণের যানবাহন প্রবেশ করতে দেয়া হচ্ছে না। মোড়ে মোড়ে বসানো হয়েছে তল্লাশি চৌকি। এছাড়া সাধারণ জনগণের জন্য শনিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত মোবাইল ফোনে বার্তা পাঠানো নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
তবে নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষরা। আফগানিস্তানে জাতিসংঘ মিশনের প্রধান নিকোলাস হাইসম আল জাজিরাকে বলেছেন, ‘আফগানিস্তানে এর আগে কোনো নির্বাচনেই এতটা চমৎকাভাবে প্রস্তুতি নিতে দেখা যায়নি।’ তিনি আরো বলেন,‘ দেশের সব স্থানে এমনকি সাত হাজার ঝুঁকিপূর্ণ ভোট কেন্দ্রেও ব্যালট পেপার, ব্যালট বক্সসহ সবকিছু সময়মতো বিতরণ করা হয়েছে।’
আফগানিস্তানের ফ্রি এন্ড ফেয়ার ইলেকশন নামক প্রতিষ্ঠানের এক জরিপে দেখা যায়, এ নির্বাচনে ৭৫ ভাগ ভোটার ভোট দেয়ার পরিকল্পনা করেছে