বৃহস্পতিবার ভোরে সোনাগাছির যৌন পল্লিতে হানা দিয়ে চোখ কপালে আয়কর অফিসারদের! গ্রাহকদের মধ্যে কদর বেশি, এমন এক-এক জন যৌনকর্মী মাসে দেড় থেকে দু’লক্ষ টাকা রোজগার করেন। ঘর ভাড়া দেন মাসে ৪০ থেকে ৬০ হাজার টাকা।
কিন্তু হঠাৎ আয়কর হানা কেন?
দফতর সূত্রের খবর, যৌন পল্লিতে আয়করের হানা সম্ভবত এই প্রথম। কারণ, সেখানে বিশাল অঙ্কের টাকার লেনদেন হচ্ছে নিয়মিত, অথচ আয়কর দফতরের কাছে তার কোনও হিসেব নেই। অফিসারদের কথায়, যাঁরা মাসে ১৫ লক্ষ টাকা ভাড়া পাচ্ছেন, তাঁদের তো আয়কর দেওয়া উচিত! কিন্তু বছর বছর তা ফাঁকি দিয়ে আসছেন তাঁরা।
এমনই ন’জন বাড়িওয়ালার ঘর তল্লাশ করে আয়কর দফতর এ দিন প্রায় দেড় কোটি নগদ টাকা বাজেয়াপ্ত করেছে। ঘরের কুলুঙ্গি থেকে শুরু করে, আলমারিতে কাপড়ের ভাঁজে রাখা ছিল নোট। সেই টাকা কার্যত বস্তাবন্দি করে অফিসারেরা যখন ওই সব বাড়ি থেকে বেরোলেন, হাঁ করে দেখেছিলেন এলাকার বাসিন্দারা।
তল্লাশির সময় প্রতিরোধ আসতে পারে, এমন আশঙ্কায় ব্যাপক আয়োজন করেছিল আয়কর দফতর। প্রায় ২৫টি গাড়িতে ৭০ জন অফিসার সকাল ৫টায় জড়ো হন ওই যৌন পল্লিতে। সঙ্গে ছিলেন লালবাজারের পুলিশ। কী ভাবে অভিযান চালানো হবে, তা নিয়ে নিজেদের মধ্যে দীর্ঘ আলোচনা সেরে নেন তাঁরা। কাজ শুরু করেন সাড়ে ৬টায়। এক অফিসার বলেন, “যৌনকর্মীদের ঘরে হানা দেওয়া আমাদের উদ্দেশ্য ছিল না। আমাদের নিশানা ছিলেন বাড়ির মালিকেরাই।” কিন্তু মালিকদের খুঁজতে হিমশিম খেতে হয়েছে অফিসারদের।
বিপদ আঁচ করে বাড়ির মালিকেরা লুকিয়ে পড়েন যৌনকর্মীদের ঘরে। তখন তল্লাশি চলে ঘরে ঘরে। অনেক খুঁজে পাওয়া যায় মালিকদের। আয়কর দফতর সূত্রের খবর, তাঁরা প্রায় সকলেই উত্তরপ্রদেশের বাসিন্দা। ঘরে নগদ টাকা ছাড়াও অনেক নথিও মিলেছে। তা থেকে বোঝা গিয়েছে, বেসরকারি ও রাষ্ট্রায়ত্ত মিলিয়ে প্রায় ২০টি ব্যাঙ্কে অ্যাকাউন্টে টাকা আছে তাঁদের। লকারও ভাড়া নিয়েছেন অনেকে। ওই সব অ্যাকাউন্ট ও লকার পরে তল্লাশ করা হবে।
হিসাব-বহির্ভূত টাকা ও সোনার গয়নার তথ্য পেলেই হানা দেওয়ার জন্য নির্বাচন কমিশন সম্প্রতি আয়কর দফতরকে নির্দেশ দিয়েছে। নজরদারি চলছে বিমানবন্দর, রেল স্টেশনে। যৌন পল্লিতেও আয়কর হানা কি সেই নির্দেশ মেনেই? অফিসারেরা সরাসরি তা বলতে নারাজ। এক অফিসার বলেন, “এই টাকা ভোটের ময়দানে গিয়ে পড়ছে কি না, তা জানা নেই। তবে বিপুল আয় করেও ওই মালিকেরা আয়কর দেন না। তাই এই অভিযান।”
দুপুরে সোনাগাছির অবিনাশ কবিরাজ স্ট্রিটে গিয়ে দেখা যায়, কয়েকটি বাড়ির সামনে পুলিশ পাহারা দিচ্ছে। তখনও তল্লাশি চলছে পুরোদমে। বাড়িগুলির সামনে স্থানীয় বাসিন্দাদের জটলা। এক যৌনকর্মী বললেন, “ঘরভাড়া বাবদ এক-এক জন যৌনকর্মীকে ৮০ হাজার, এমনকী দেড় লক্ষ টাকাও দিতে হয়।” তিনি জানান, ঘরের প্রতিটি আসবাব, টিভি, সিডি-প্লেয়ার, মোবাইল ফোনের জন্যও তাঁদের ভাড়া দিতে হচ্ছে।
এলাকাবাসীরা জানান, আয়কর বিভাগ যে-সব বাড়িতে হানা দিয়েছিল, সেখানকার যৌনকর্মীদের গ্রাহকেরা ধনী। তাই তাঁদের আয় বেশি। তবে এ দিন সাতসকালে অভাবিত আয়কর হানায় যৌন পল্লির প্রতিদিনের রুটিনে কিছু ব্যাঘাত ঘটেছে। কয়েক জন যৌনকর্মী এই নিয়ে আক্ষেপও করেন।