অবশেষে বিশ্বকাপ ফাইনালের অভিশাপ ঘোচালো শ্রীলঙ্কা। ভারতের বিপক্ষে তীরে এসে তরী ডোবানোর জ্বালা জুড়ালো তারা। অধ্যাবসায়ে রবার্ট ব্রুসের বিখ্যাত আদর্শ কাহিনীর ন্যায় রেকর্ড পাঁচবারের প্রচেষ্টার পর বিশ্বজয়ের স্বাদ পেলো লাসিথ মালিঙ্গা-নুয়ান কুলাসেকারারা।
২০০৭ সালের বার্বাডোজ, ২০০৯ সালের লর্ডস, ২০১১ সালের মুম্বাই কিংবা ২০১২ সালের কলম্বোর পর ২০১৪ সালে ঢাকায় এসে বিশ্বকাপের ফাইনাল হারের কুফা কাটলো লঙ্কার সোনালী প্রজন্ম। রোববার বিশ ওভারী ক্রিকেট থেকে দুই মহারথী কুমার সাঙ্গাকারা ও মাহেলা জয়বর্ধনের বিদায় মঞ্চে চিরচেনা প্রতিপক্ষ ভারতকে ৬ উইকেটে হারালো শ্রীলঙ্কা। তাও ১৩ বল বাকি থাকতেই।
অথচ মিরপুরীয় মহারণের আগে লঙ্কানদের যেন গ্রাহ্যসীমার মধ্যেই আনতে চাইছিল না ভারত! কারণ, গ্রুপ পর্বে টানা তিন ম্যাচ জিতে নক আউট পর্বে নাম লেখায় তারা। সেমিতেও দুর্বার সেই ‘টিম ইন্ডিয়া’। সেরা চারে দক্ষিণ আফ্রিকার ওপর বুলডোজার চালায় মহেন্দ্র ধোনির দল। সে জন্য ফাইনালে হট ফেভারিট ছিল ভারতই।
কিন্তু লাসিথ মালিঙ্গার সুচতুর অধিনায়কত্ব ও দুই রথীর (সাঙ্গাকারা ও জয়বর্ধনে) বিদায় মঞ্চকে বৃথা যেতে দেয়নি লঙ্কার প্রতিশ্রুতিশীল ক্রিকেটাররা। তাই সাম্প্রতিক সময়ে বিশ্বকাপের চারটি ফাইনাল খেলে নিজেদের যোগ্যতার ছাপ রাখতে সমর্থ না হলেও ঢাকায় আর ডাব্বা মারলো না শ্রীলঙ্কা। নিজেদের টি-টোয়েন্টির ইতিহাসে প্রথম আর দেশের ক্রিকেট ইতিহাসে দ্বিতীয়বার বিশ্বকাপ জয়ের কৃতিত্ব দেখালো রাবনের দেশের ছেলেরা।
আসলে ভাগ্য এদিন প্রথম থেকেই সুপ্রসন্ন ছিলো শ্রীলঙ্কার পক্ষে। মুখ গোমড়া সন্ধ্যায় বৃষ্টির পর টস নামক ভাগ্য পরীক্ষায় জয় পায় লঙ্কানরাই। তারপর এই ম্যাচে শ্রীলঙ্কার দলপতি লাসিথ মালিঙ্গা ফিল্ডিংয়ের যে সিদ্ধান্ত নিলেন রাত গড়ার সাথে সাথে তা যেন যথার্থ রুপে ধরা দিতে থাকলো। শুধু কী তাই? এরপর উইকেটের ২২ গজে রঙ্গনা হেরাথ, সচিত্র সেনানায়েক ও লাসিথ মালিঙ্গাদের দাপট সেই ভাগ্য রেখাকেই যেন আরো মূর্ত করে তোলে। যাতে ভারতের বিখ্যাত ব্যাটিং লাইন আপ পুরো বিশ ওভার ব্যাটিং করেও চার উইকেট হারিয়ে ১৩০ রানের বেশি তুলতে পারেনি। যেখানে আবার বিরাট কোহলিরই অবদান ঝড়ো ৭৭টি রান।
এরপর ব্যাটিংয়ে নেমে আর কোনো দূর্ঘটনার উপহার দেয়নি শ্রীলঙ্কা। ১৩১ রানের পাহাড়ে চড়তে ইনিংসের শুরুতে উইকেট হারালেও ত্রিফলার (জয়বর্ধনে, দিলশান ও সাঙ্গাকারার) স্বচ্ছ্বন্দ্য ব্যাটিংয়ে ছয় উইকেট হাতে রেখেই অভিষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছে যায় তারা। দেশকে মাতায় উৎসবের রঙে। ফাইনালে শ্রীলঙ্কার পক্ষে সাঙ্গাকারা সর্বোচ্চ ৫২ রান করেন। এছাড়া জয়বর্ধনে ২৪, দিলশান ১৮ ও পেরেরা ২১ রান করেন। ভারতের মোহিত শর্মা, রবিচন্দন অশ্বিন, রবীন্দ্র জাদেজা ও অমিত মিশ্র একটি করে উইকেট নেন।
লঙ্কার এই বিশ্ব জয়ের ফলে মহেন্দ্র ধোনির অমরত্ব লাভের একটা নিশানা ভণ্ডুল হয়ে গেলো। কারণ, মিরপুরের ফাইনালে জিতে ওয়েস্ট ইন্ডিজের ক্লাইভ লয়েড ও অস্ট্রেলিয়ার রিকি পন্টিংকে ছাড়িয়ে যাওয়ার একটু সুযোগ এসেছিল রাঁচির যুবরাজের সামনে। কিন্তু শেষ ধাপে তা আর ঠিকভাবে হলো না। ফলে ধোনিরও লয়েড ও পন্টিংকেও ছাড়ানো হলো না। তারা তিন জনেই থাকলেন একই কাতারে। দুটি করে বিশ্বকাপ জয়ের কৃতিত্ব নিয়ে। প্রসঙ্গত, বাংলাদেশে সদ্য শেষ হওয়া এই বিশ্বকাপের ফাইনালে ম্যান অফ দ্য ম্যাচ হন কুমার সাঙ্গাকারা। আর ম্যান অব দ্য সিরিজ বিরাট কোহলি।