
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, জামায়াত নিষিদ্ধ হওয়া নিয়ে খুব বেশি মাথাব্যথা নেই শীর্ষ নেতাদের। তাদের বিশ্বাস, আইনগতভাবে জামায়াতকে নিষিদ্ধ করার কোনো সুযোগ নেই। তাদের মতে, নিবন্ধন বাতিলসহ জামায়াতের বিরুদ্ধে আনা সব অভিযোগ আইনি লড়াইয়ের মাধ্যমে সমাধান করা সম্ভব। জামায়াত নেতারা মনে করেন, নির্বাহী আদেশে নিষিদ্ধ করারও অদূরদর্শী কোনো পদক্ষেপ সরকার হয়তো নেবে না। সম্প্রতি উপজেলা নির্বাচনের ফল দেখে জামায়াতকে নতুন করে হিসাব করবে সরকার। তারপরও যদি সরকার দলটিকে নিষিদ্ধ করে, তাহলে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে করণীয় সব ঠিক করা আছে। সময়মতো বাস্তবায়ন শুরু হবে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের এক সদস্য জানান, নিষিদ্ধ হওয়ার আগেই আমরা নিজেরা দলকে নিষিদ্ধ করতে চাই না। সরকার নিষিদ্ধ করলে তখন সিদ্ধান্ত জানানো হবে।
ঢাকা মহানগর জামায়াতের দায়িত্বশীল এক রোকন বলেন, দল নিষিদ্ধ হলে নতুন দল গঠন অথবা নিবন্ধিত কোনো দলে একীভূত হওয়ার ব্যাপারে মতামত এসেছে বিভিন্ন মহল থেকে। তবে নিবন্ধিত কোনো দলে একীভূত হওয়ার চেয়ে নতুন নামে দল করে নিবন্ধন নেয়ার ব্যাপারেই মতামত আছে বেশি। সেক্ষেত্রে বর্তমান গঠনতন্ত্র থেকে বেশ কিছু বিষয় বাদ দিয়ে নতুন নামে দল গঠন করে অগ্রসর হওয়ার প্রাথমিক পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। নতুন দলের নাম এখনও চূড়ান্ত করা হয়নি। এ দলে ১৯৭১ সালে প্রাপ্তবয়স্ক বর্তমান কোনো নেতাকেই রাখা হবে না। তবে নিষিদ্ধ হলেই তাৎক্ষণিকভাবে কিছুদিন চুপ থাকবেন দলের নেতাকর্মীরা_ পরিস্থিতি বুঝেই নতুনভাবে আত্মপ্রকাশ করবে। সর্বোচ্চ পাঁচ বছরের মধ্যেই পরিস্থিতি অনুকূলে চলে আসবে বলে তাদের বিশ্বাস।
নিষিদ্ধ হলে নতুন দল গঠনের সিদ্ধান্তের কথা উল্লেখ করে উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে নবনির্বাচিত এক জামায়াত নেতা বলেন, কেন্দ্রীয় নেতাদের তথ্য অনুযায়ী নতুন দল গঠনের ব্যাপারে সবই প্রস্তুত আছে; সময়ের ব্যবধানে তা কার্যকর করা হবে। তিনি জানান, নতুন দলে জামায়াতের বর্তমান মুরবিক্ষ নেতাদের বাদ দিয়ে উপদেষ্টা হিসেবে রাখা হবে। তারাই মূলত দল চালাবেন।
এদিকে অন্য একটি সূত্রে জানা গেছে, নিষিদ্ধ হওয়া থেকে রক্ষা পেতে দেশে-বিদেশে নানা তৎপরতা চালাচ্ছে জামায়াত। এজন্য সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষার চেষ্টা চালাচ্ছেন দলের নেতারা। আইনগতভাবে পক্ষে রায় আনার বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখছে দলটি। তাছাড়া আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বন্ধুরাষ্ট্রগুলোর সঙ্গেও যোগাযোগ করে জামায়াতের পক্ষে সহায়তা কামনা করা হচ্ছে বলে সূত্র জানিয়েছে।
প্রসঙ্গত, ১৯৪১ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকে এ পর্যন্ত তিনবার নিষিদ্ধ হয় জামায়াত। প্রথম নিষিদ্ধ হয় ১৯৫৯ সালের ৮ অক্টোবর। ওই সময় আইয়ুব খান সামরিক শাসন জারি করলে জামায়াতসহ সব দলের রাজনৈতিক তৎপরতা বন্ধ হয়ে যায়। ১৯৬২ সালের ১৫ জুলাই পর্যন্ত এ ফরমান বলবৎ ছিল। এরপর ১৯৬৪ সালের ৬ জানুয়ারি আইয়ুব খান জামায়াতের রাজনীতি নিষিদ্ধ করেন। এ সময় জামায়াতের তাত্তি্বক নেতা মাওলানা সৈয়দ আবুল আলা মওদুদীসহ ৬০ জন নেতাকে গ্রেফতার ও কারাবন্দি করা হয়। সে বছরের ২৫ সেপ্টেম্বর পাকিস্তান সুপ্রিমকোর্টের রায়ে জামায়াত আবার প্রকাশ্যে রাজনীতি করার অধিকার পায়। সর্বশেষ ১৯৭২ সালে জামায়াতে ইসলামীকে নিষিদ্ধ করা হয়। ১৯৭৬ সালে জিয়াউর রহমান পলিটিক্যাল পার্টিজ রেগুলেশনের (পিপিআর) আওতায় রাজনৈতিক দল গঠনের অনুমতি দিলে কয়েকটি অবলুপ্ত দলের সমন্বয়ে ইসলামিক ডেমোক্র্যাটিক লীগ (আইডিএল) গঠিত হলে জামায়াতের নেতাকর্মীরা প্রথমে তাতে যোগ দেন। ১৯৭৯ সালে জাতীয় নির্বাচনের আগে পিপিআর রহিত করা হলে ওই বছরের ২৫ মে সম্মেলন করে জামায়াতে ইসলামী নামে প্রকাশ্যে রাজনৈতিক কর্মকান্ড চালানোর ঘোষণা দিয়ে কাজ শুরু করে।