সম্প্রতি শেষ হওয়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে দলের অভাবনীয় সাফল্যে খুবই সন্তুষ্ট জামায়াতে ইসলামীর নীতি নির্ধারকরা। এজন্য নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদেরকে সম্মাননা প্রদানের প্রস্তুতি নিচ্ছে দলটি। আর এর মধ্য দিয়ে দল গোছানোর কাজটিও সেরে নেয়ার পরিকল্পনা।আদালতের নির্দেশে নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধন বাতিল হওয়া এই দলটির সুদৃঢ় রাজনৈতিক ভিত্তি এবং শৃংখলা অন্যান্য দলগুলোর কাছে স্বপ্নের মতো।
ইতোমধ্যে সম্মাননা অনুষ্ঠান বাস্তবায়নে দলের কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ডা. আব্দুল্লাহ তাহেরকে প্রধান সমন্বয়কারী করে ৫ সদস্যের একটি ‘অনুষ্টান বাস্তবায়ন প্রস্তুতি কমিটি’ গঠন করা হয়েছে।
জামায়াত সূত্রে জানা গেছে, চতুর্থ উপজেলা নির্বাচনে জামায়াতে ইসলামীর চেয়ারম্যান পদে ৩৭টি, ভাইস চেয়ারম্যান পদে ১২০টি ও নারী ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৩৪টিসহ তিন ক্যাটাগরিতে মোট ১৯১ জনপ্রতিনিধি বিজয়ী হয়েছে। এই নির্বাচিত প্রতিনিধিদের সম্মাননা প্রদানের নির্ধারিত নিরাপদ স্থান খোঁজা হচ্ছে ঢাকা বা চট্টগ্রামের মধ্যে যে কোনো স্থানে। ১৫ এপ্রিলের আগেই নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিকে বীরত্বপূর্ণ সম্মাননা দেয়া হবে বলে জানা গেছে।
এদিকে দলের সঙ্কটকালে জনপ্রতিনিধিদের এ বিজয়কে ইতিহাসের সবচেয়ে বড় রেকর্ড বলে দাবি করেন দলটির কেন্দ্রীয় কমিটির একাধিক নেতা। তিনি বলেন, ‘আমাদের অনুকূল পরিস্থিতিতেও অতীতে এ ধরনের বিজয় কখনো ধরা দেয়নি। জালিম সরকারের বিরুদ্ধে জনগণের ভোট বিপ্লবেই প্রমাণ করে জামায়াতে ইসলামী এদেশের গণমানুষের জনপ্রিয় একটি মর্ডান ইসলামী দল।’
জামায়াতের কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ডা. আব্দুল্লাহ তাহের দৈনিক প্রথম বাংলাদেশকে বলেন, ‘এ সরকারের নিযার্তনের কারণে জনগণ আমাদের পক্ষে অবস্থান নিয়েছে। সুষ্ঠু ভোট হলে আরো ভালো করা যেতো। গত ৪ দলীয় জোট সরকারের আমলেও এ বিজয়ের চার ভাগের এক ভাগও অর্জিত হয়নি।’
তিনি বলেন, ‘অনুষ্ঠান করার জন্য আমরা সরকারের কাছে অনুমতি চাইব। অনুমতি চাওয়া নাগরিকদের গণতান্ত্রিক অধিকার।’
এদিকে দলের শীর্ষ নেতাদের মতে সংবর্ধনার মধ্য দিয়ে নেতাকর্মীদের মাঝে উৎসাহ বাড়বে। আর এ সুযোগকে কাজে লাগিয়ে দল গোছানোর পরিকল্পনা জামায়াতের। নির্বাচনের পরিসংখ্যানেও আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টিকে পেছনে ফেলে ভাইস-চেয়ারম্যানে একধাপ এগিয়ে জামায়াত। যদিও বর্তমান সময়ে বহুমুখি চাপে রয়েছে দলটি। জনপ্রতিনিধিদের এই সমর্থন কাজে লাগিয়ে দেশব্যাপী সাংগঠনিক শক্তি বৃদ্ধির চেষ্টা কার হবে বলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জামায়াতের একাধিক নেতা এমন তথ্যই দৈনিক প্রথম বাংলাদেশকে জানিয়েছেন।
নেতারা জানান, সম্মাননা কোথায় করা হবে এ নিয়ে চূড়ান্ত কোনো ভেন্যু ঠিক করা হয়নি। তবে রাজধানী ঢাকা বা চট্টগ্রামের যে কোনো নিরাপদ স্থানে অনুষ্ঠানটি করার সম্ভব্য তালিকা হয়েছে। সম্মাননা অনুষ্ঠানকে কেন্দ্রে করে ব্যাপক প্রস্তুতিও নিয়েছে দলটির ভারপ্রাপ্ত আমীর মকবুল আহমাদ ও ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি ডা. শফিকুর রহমান। ডা. আব্দুল্লাহ তাহেরকে প্রধান সমন্বয়কারী করে বাস্তবায়ন প্রস্তুতি কমিটিতে রয়েছেন ঢাকা মহানগর জামায়াতের আমীর মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান, চট্টগ্রাম মহানগর জামাতের আমীর শামসুল ইসলাম, ঢাকা মহানগরের সেক্রেটারি নুরুল ইসলাম বুল বুল ও ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ।
তারা আরো জানান, সম্প্রতি দেশের কয়েকটি স্থানে জামায়াতের প্রতিনিধিরা শপথ নিতে গেলে কয়েকজন পুলিশের হাতে আটক হন। এ বিষয়টি বিবেচনা করে নিরাপদ স্থানে অনুষ্ঠান করার জন্য দলটি ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ করছে। অনুষ্ঠানে আন্তজার্তিক টাইব্যুনালের জামায়াত নেতাদের প্রধান আইনজীবী ও জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাককে চিফ গেস্ট করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এছাড়াও আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর সদস্যরা যাতে কোনোভাবেই অনুষ্ঠানে সমস্যা করতে না পারে সে জন্য মামলার আসামি কোনো নেতাকেই দাওয়াত দেয়া হবে না।