দৈনিক প্রথম বাংলাদেশ প্রতিবেদনঃ বাঙালির প্রাণের উৎসব পহেলা বৈশাখ। এদিন বাংলার ঘরে ঘরে পুরনো একটি বছরকে বিদায় দিয়ে নানা আচার অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে নতুন বছরকে বরণ করে নেয় উৎসবপ্রেমী বাঙালি। এ সময় বর্ষবরণের আনন্দে জেগে ওঠে লাখো বাঙালি।
বাঙালি জাতির ঐতিহ্যবাহী এ উৎসবটি পালন করতে গ্রাম-বাংলার মানুষের সঙ্গে সঙ্গে রাজধানী ঢাকায়ও নেয়া হয়েছে ব্যাপক প্রস্তুতি। পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে ঢাকার বিশেষ বিশেষ স্থানগুলোতে অনুষ্ঠিত হচ্ছে বিভিন্ন অনুষ্ঠান। ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সারাদেশে বিভিন্ন আয়োজনের মধ্য দিয়ে দিনটি উদযাপন করছে পুরো দেশ।
রমনা বটমূলে ছায়ানটের বর্ষবরণ অনুষ্ঠান ও চারুকলার মঙল শোভাযাত্রায় যোগ দিয়েছে বাংলাপ্রেমী লাখো বাঙালি।
ভোর হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ঢাকার বিভিন্ন স্থানে বর্ষবরণের অনুষ্ঠানে যোগ দিতে বেরিয়ে পড়ে রাজধানীবাসী। এতে ঢাকার রাজপথ পরিণত হয় জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সব মানুষের মহামিলন মেলায়।
রমনা পার্ক, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি, চারুকলা ইনস্টিটিউট, কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার, জাতীয় সংসদ ভবন, চন্দ্রিমা উদ্যান, শিশুপার্ক, হাতিরঝিল, ধানমণ্ডির রবীন্দ্রসরোবরসহ বিভিন্ন এলাকা পরিণত হয় অস্থায়ী লোকজ মেলায়। নারী পুরুষের সঙ্গে সঙ্গে যোগ দেয় শিশুরাও। কোথাও তিল ধারণের জায়গা ছিল না।
তবে এসব স্থানে প্রবেশের ব্যাপারে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর রয়েছে কঠোর নজরদারি। প্রবেশের গেটগুলোতে বসানো হয়েছে বিশেষ তল্লাশি মেশিন (মেটাল ডিটেকটর দরজা)। বিশেষ এ মেশিনটির ভেতর দিয়ে প্রবেশের জন্য পুরুষের তীব্র ভীড়ের মধ্যে নারীদেরও একই সারিতে দীর্ঘ লাইনে ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকতে হয়েছে।
বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মানুষের ভীড় জনসমুদ্রে পরিণত হয়। রাজধানীর রমনা পার্কের প্রবেশ পথে গিয়ে দেখা গেছে, নারী পুরুষের দীর্ঘ লাইন। অনুষ্ঠান স্থল থেকে বের হওয়া ও ঢোকার জন্য আলাদা কোনো ব্যবস্থা না থাকায় পুরুষের চাপের মধ্যে নারীদেরকেও লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়েছে। অনেকেই এতে বিরক্ত বোধ করেছেন। আবার অনেক নারীকে ভীড় সামলাতে না পেরে নিরাপদ স্থান খুঁজতে দেখা গেছে। লাইন দিয়ে ঢুকতে ও বের হতে না পেরে অনেকেই লোহার ঘেরাও টপকে পার্কের অনুষ্ঠানে প্রবেশ ও বের হতে দেখা গেছে। এতে চরম ভোগান্তির শিকার হতে থাকেন দর্শণার্থীরা।
একই অবস্থা দেখা গেছে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের গেইটেও। এতে একই পথ দিয়ে প্রবেশ এবং বের হওয়ার ব্যবস্থা থাকার কারণে মূল ফটকে বড় ধরনের জটলার সৃষ্টি হয়। মানুষের তীব্র স্রোতের মধ্যে নারীরা একশ্রেণীর বখাটেদের হাতে হয়রানির শিকার হন। এজন্য অনেক নারী ও তরুণীকে ফটকের ভিড়ে কান্নাকাটি করতেও দেখা গেছে।
ইডেন মহিলা কলেজের শিক্ষার্থী সারমিন আক্তার দৈনিক প্রথম বাংলাদেশকে বলেন, ‘সব ক্ষেত্রেই নারীর অধিকার নিশ্চিতের কথা বললেও কেউ এ বিষয়টি নিয়ে মাথা ঘামায় না। নারীদের প্রবেশের জন্য এসব অনুষ্ঠানে আলাদা ব্যবস্থা রাখা উচিত ছিল। এমন অবস্থা হলে সামনের আচার অনুষ্ঠানে যোগ দেয়া যাবে না।’
রমনা পার্কে প্রবেশের পশ্চিম গেটে দায়িত্বে থাকার একজন পুলিশ কর্মকর্তা দৈনিক প্রথম বাংলাদেশকে বলেন, ‘কর্তৃপক্ষ যেভাবেই ব্যবস্থা করেছে সেভাবেই আমরা দায়িত্ব পালন করছি।’ তবে কর্তৃপক্ষের এমন ব্যবস্থার জন্য তিনিও দুঃখ প্রকাশ করেন।
হয়রানির শিকার অপর এক তরুণী দৈনিক প্রথম বাংলাদেশকে বলেন, ‘লাইনে বখটে যুবকদের অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে তাদের যেনো মা-বোন নেই। মেয়েদেরকে দেখলে তারা আর ঠিক থাকতে পারে না। তারা যে অবস্থা সৃষ্টি করে তাতে এসব অনুষ্ঠানে আর আসা যাবে না। পুলিশ দেখেও না দেখার ভান করে থাকে।’
বর্ষবরণের অনুষ্ঠানে আগত নারীরা জনবহুল এসব অনুষ্ঠানে প্রবেশ কিংবা বের হওয়ার জন্য নারী পুরুষের আলাদা ব্যবস্থার দাবি করেছেন।