ডা. ইমরান এইচ সরকারকে গণজাগরণ মঞ্চের মুখপাত্রের দায়িত্ব থেকে ‘অব্যাহতি’ দেয়া হয়েছে মঞ্চের সংগঠক ও কর্মী পরিচয় দিয়ে সকালে শাহবাগে সংবাদ সম্মেলনের এমন ঘোষণা উড়িয়ে দিয়েছেন ড. ইমরান এইচ সরকার। তিনি নিজেকে গণজাগরণ মঞ্চের একমাত্র মুখপাত্র দাবি করেছেন।
ইমরান এইচ সরকার বাংলামেইলকে বলেন, ‘সকালে যে সংবাদ সম্মেলন হয়েছে তা আমি গণমাধ্যমের মাধ্যমে জেনেছি। গণমাধ্যমে আমি যাদের দেখেছি তাদের কাউকে আমি চিনি না। এদের সঙ্গে গণজাগরণ মঞ্চের কোনো সম্পর্ক ছিল না। আমি যতদূর জেনেছি যারা এ সংবাদ সম্মেলনে ছিলেন, তাদের ৭ জনই হচ্ছেন আওয়ামী লীগের সহ-সম্পাদক এবং ৩ জন সংসদ নীর্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নপত্র কিনেছিলেন। তাই আমি বলতে চাই গণজাগরণ মঞ্চ কোনো রাজনৈতিক দলের সংগঠন নয়। এটি গণমানুষের সংগঠন। সাধারণ মানুষের সংগঠন।’
দায়িত্ব থেকে ‘অব্যহতি’র সংবাদ সম্মেলনের এমন বক্তব্য আপনি প্রত্যাখ্যান করছেন কি না দৈনিক প্রথম বাংলদেশের এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘এখানে প্রত্যাখ্যানের বিষয় প্রশ্নই আসেনা কারণ তাদের এ ধরনের বক্তব্য দেয়ার কোনো এখতিয়ার নেই। আমাকে যে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে তা লক্ষ লক্ষ সাধারণ মানুষের পক্ষ থেকে দেয়া হয়েছে। তা আমি পালন করে যাবো। যতক্ষণ পর্যন্ত আমাদের দাবি আদায় না হবে ততোদিন পর্যন্ত আমরা আন্দোন চালিয়ে যাবো। এ আন্দোলন সাধারণ মানুষের আন্দোলন। এ আন্দোলন সাধারণ মনুষকে পথ দেখাবে। এ আন্দোলন তো কোনো রাজনৈতিক দলের আন্দোলন নয়।’
মঞ্চের সিদ্ধান্তের বিষয়ে ড. ইমরান আরো বলেন, ‘গণজাগরণ মঞ্চ হচ্ছে জনমানুষের মঞ্চ। এ মঞ্চ কি কর্মসূচি পালন করবে তা নির্ধারণ করবে সাধারণ কর্মীরা, কোনো রাজনৈতিক দলের নেতা বা কর্মীরা নয়। ইতিমধ্যে ছাত্রলীগ বলেছে, তাদের গণজাগরণ মঞ্চের কোনো প্রয়োজন নেই। এখন একের পর এক সংবাদ সম্মেলন করে মঞ্চকে নস্যাৎ করার চেষ্টা চালানো হচ্ছে। এ বিষয়ে কোনো সন্দেহ নাই।’
মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমাণ্ডের মাহাবুব দৈনিক প্রথম বাংলাদেশকে বলেন, ‘আমি বাড়িতে ছিলাম আজকে আসেছি এ জন্য আমি সংবাদ সম্মেলনের বিষয়ে জানি না। আপনি মেহেদি ভাইয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করেন তিনি এ বিষয়ে বলতে পারবেন।’
পরে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ডের মেহেদির সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘ইমরানকে অব্যহতি দিয়ে গণজাগরণের কর্মী এবং সংগঠকবৃন্দ এ ঘোষণা দিয়েছে। সকালে যে সংবাদ সম্মেলন হয়েছে তা কোনো নির্দিষ্ট সংগঠনের পক্ষ থেকে করা হয়নি। এ সংবাদ সম্মেলন গণজাগরণ মঞ্চের সংগঠক ও কর্মীদের সিদ্ধান্তের মাধ্যমে করা হয়েছে। এর লিখিত বক্তব্য পাঠ করেছেন গণজাগরণ মঞ্চের অন্যতম সংগঠক কামাল পাশা চৌধুরী। যারাই এ গণজাগরণের সঙ্গে সংযুক্ত ছিলেন তারাই এ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।’
ডা. ইমরান এইচ সরকারের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি প্রসঙ্গে মেহেদি বলেন, ‘তিনি (ড. ইমরান) এ মঞ্চের অস্থায়ী দায়িত্বে ছিলেন। ওনার কর্মকাণ্ড বিতর্কিত হওয়ার কারণে সাময়িকভাবে অব্যহতি দেয়া হয়েছে। এখন থেকে তার কোনো বক্তব্য গণজাগরণের বক্তব্য বলে গৃহীত হবে না। তবে গণজাগরণ মঞ্চের কর্মীরা তাদের ৬ দফা দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে যাবে।’
এর আগে শনিবার দুপুরের দিকে শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের সামনে এক সংবাদ সম্মেলনে নিজেকে গণজাগরণ মঞ্চের অন্যতম সংগঠক পরিচয় দিয়ে কামাল পাশা চৌধুরী ডা. ইমরান এইচ সরকারকে মুখপাত্রের দায়িত্ব থেকে ‘অব্যাহতি’ দেয়া হয়েছে বলে দাবি করেন। মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ড ও প্রজন্ম একাত্তর নামে সংগঠন দুটির নেতাকর্মীরা এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
কামাল পাশা চৌধুরী এসময় বলেন, ‘আমরা গণজাগরণ মঞ্চের শুরু থেকে ছিলাম। কিন্তু ইমরান এইচ সরকার একচেটিয়াভাবে বিভিন্ন সিদ্ধান্ত নিয়ে ও আর্থিক কেলেঙ্কারিতে জড়িয়ে বিতর্কিত করেছে। আমরা যতদিন আছি মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বুকে ধারণ করে দেশবাসীর আকাঙ্ক্ষা পূরণ করে যাবো।’ তবে গণজাগরণ মঞ্চের পূর্বঘোষিত ছয় দফা দাবির ভিত্তিতেই মঞ্চ চলবে বলে জানান তিনি।
‘যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দীর্ঘসূত্রতার’ প্রতিবাদে ১৮ এপ্রিল শাহবাগে সমাবেশ ও দেশব্যাপী বিক্ষোভ কর্মসূচির ঘোষণা দেয়ার পরদিনই মঞ্চের মুখপাত্র ইমরান এইচ সরকারকে ‘অব্যাহতি’ দেয়ার কথা জানায় মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ড ও প্রজন্ম একাত্তর। এদিকে ইমরান এইচ সরকার নিজের ফেসবুক পাতায় লিখেছেন, ‘অপপ্রচার চলছে, অপপ্রচার চলবে এটা নতুন নয়। বাংলাদেশ, এমনকি সারা দুনিয়ার এমন কোনো গণআন্দোলন নেই যার বিরুদ্ধে পরিকল্পিত অপপ্রচার হয়নি।
প্রতিক্রিয়াশীল গোষ্ঠী একদম শুরু থেকেই আক্রমণের প্রধান ঢাল হিসেবে ধর্মকেই ব্যবহার করেছে। পাশাপাশি ব্যক্তিগত চরিত্র হনন, পারিবারিক আক্রমণ, বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়ানো তো আছেই।
অন্যপক্ষগুলো, বিশেষ করে প্রগতির মোড়কে আবৃত প্রতিক্রিয়াশীলেরা, অর্থকেই আক্রমণের প্রধান ঢাল হিসেবে ব্যবহার করলেন। লুটপাট-টেন্ডারবাজির রাজনীতি এবং গণআন্দোলন মানেই যাদের কাছে অর্থ আয়ের নতুন ক্ষেত্র তারাই এখানে সে সুযোগ না পেয়ে মানুষের জাগরণে ভীত হয়ে এসব প্রোপাগান্ডার আশ্রয় নিচ্ছেন।
এই উভয়পক্ষই ভেবেছিল, তাদের অসীম ক্ষমতা আর প্রতিপত্তিকে ব্যবহার করে ফু দিলেই প্রজারা বাতাসে মিশে যাবে। এরা ভুলে গেছে গণজাগরণ মঞ্চের শেকড় এতো গভীরে প্রথিত হয়েছে যে এসব তুচ্ছ অপপ্রচার, হামলা-মামলায় একে স্তব্ধ করা সম্ভব হয়। এরা ভুলে যায়, এই মাটির সন্তানেরা একবার রাজপথে নামলে দাবী আদায় না করে ঘরে ফেরে না।
দেশের জন্য আন্দোলন করতে গেলে বাধা আসবে, আঘাত আসবে; ত্যাগ স্বীকার করতে হবে। কিন্তু কোনোভাবেই লক্ষ্যচ্যুত হওয়া যাবে না, আপোষ করা যাবে না। লক্ষ্যচ্যুত আপোষকারীদের ইতিহাস, পরাজয়ের ইতিহাস। ইতিহাস কাউকে ক্ষমা করে না, কোনোদিন করেনি।
জয় আমাদের হবেই। জয় বাংলা।’