অঙ্কুর আমার একমাত্র ছেলে। পরীক্ষা শেষ। বায়না ধরল সেন্টমার্টিন যাবে। আমিও না করতে পারলাম না। গেল। কিন্তু আমার বাবা আর ফিরে এলো না। আমার বুক খালি হয়ে গেল রে! তোমরা আমার বাবাকে এনে দাও।' এভাবে বিলাপ করে ছেলে হারানোর কষ্ট বর্ণনা করছিলেন সাদ্দাম হোসেন ওরফে অঙ্কুরের বাবা গোলাম ফারুক।
সোমবার দুপুরে ২টার দিকে সেন্টমার্টিন সমুদ্রে গোসল করতে নেমে আহছানউল্লা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই ছাত্রের মৃত্যু হয়। তারা হলেন মানফেজুল ইসলাম ওরফে ইভান (২৩) ও সাদ্দাম হোসেন ওরফে অঙ্কুর (২৩)। একই সময়ে ইশতিয়াক বিন মাহমুদ, শাহরিয়ার ইসলাম নোমান, সাবি্বর হাসান ও এস এম গোলাম রহিম নামের চারজন শিক্ষার্থী নিখোঁজ রয়েছেন। এখনো তাদের উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। গোলাম ফারুক জানান, অঙ্কুরের লাশ ঢাকার পথে রয়েছে। জানাজা শেষে মিরপুর কবরস্থানে সাদ্দামের দাদির কবরে তাকে দাফন করা হবে। জানা গেছে, দুই ভাইবোনের মধ্যে অঙ্কুর ছিলেন বড়। 'আর ইভান সাঁতার জানত না। তাই যাওয়ার আগে বলেছিলাম সমুদ্রে যাচ্ছিস ভালো কথা, কিন্তু গোসল করতে নাইমো না। সমুদ্রে নামাটাই ওর কাল হলো। আমার অবস্থা যা-ই হোক, ওর মা বারবার জ্ঞান হারাচ্ছে।' ছেলে হারানোর বেদনার কথা এভাবে বর্ণনা করছিলেন মানফেজুল ইসলাম ওরফে ইভানের বাবা মাকছেদুল আলম।
তিনি জানান, ঠাকুরগাঁওয়ের বীরগঞ্জ উপজেলার পারিবারিক কবরস্থানে ইভানের মরদেহ দাফন করা হবে। হয়তো লাশও জুটবে না সেন্টমার্টিনে দুজন ছাত্র মারা গেছে, কয়েকজন নিখোঁজ। হঠাৎ টিভিতে এমন খবর দেখে চমকে যান মাহমুদউল্লাহ গাজী। বুকের কেমন মোচড় দিয়ে ওঠে। তখন ছেলে ইশতিয়াক বিন মাহমুদের মুঠোফোনে কল দেন। অন্য একজন ফোন ধরে বলেন, 'আংকেল ও গোসল করতে নেমেছে। আমরা ওকে খুঁজে পাচ্ছি না।' মাহমুদউল্লাহ গাজী বলেন, 'ওই কথা শোনার পর থেকে ওর মা বিছানায়। এখনো ওঠেনি। বারবার বলছে, আমার ছেলেকে এনে দাও। খুব আদরের ছেলে আমার। তিন ভাইয়ের মধ্যে ওই বড়।'
এভাবে ছেলে নিখোঁজ হওয়ার ঘটনা বর্ণনা করছিলেন ইশতিয়াকের বাবা মাহমুদউল্লাহ গাজী। পাঁচ ভাইবোনের মধ্যে সবার ছোট ছিলেন গোলাম রহিম ওরফে বাপ্পী। তার পরিবারও টিভিতে দেখে প্রথম ছেলে হারানোর খবর পান। বাপ্পীর মা ছেলে হারানোর খবর শোনার পর থেকে শয্যাশায়ী। বাপ্পীর বাবা অবসরপ্রাপ্ত উপজেলা পরিসংখ্যান কর্মকর্তা শামসউদ্দিন আহমেদ বলেন, 'অন্যরা তো লাশটাও পেয়েছে। কিন্তু আমাদের কপালে হয়তো লাশও জুটবে না।'
এ কথা বলে তিনি কান্নায় ভেঙে পড়েন। একইভাবে শাহরিয়ার ইসলাম নোমান, সাবি্বর হাসানের পরিবারেও চলছে শোকের মাতম। সবাই খোঁজ নিচ্ছেন উদ্ধার তৎপরতার কী হলো। বাড়িতে এসে, টেলিফোনে তাদের খবর নিচ্ছেন স্বজনরা।
'চলে যাচ্ছি দোস্ত, নেটওয়ার্কের বাইরে'
সাবি্বর হাসান শনিবারই ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়েছিলেন, 'চলে যাচ্ছি দোস্ত! একদম নেটওয়ার্কের বাইরে !!'। তার সেই স্ট্যাটাসের ওপর কমেন্ট এসেছে- 'চোখের পানি ধরে রাখতে পারছি না।' রাহাত খান অমিতের মতো অনেকেই মেনে নিতে পারছেন না সাবি্বরের এই প্রস্থান। আর এই স্ট্যাটাসগুলোর মধ্যে তার স্মৃতি হাতড়ে বেড়াচ্ছেন স্বজনরা।
সোমবার সেন্টমার্টিন দ্বীপে বেড়াতে গিয়ে গোসলে নেমে নিখোঁজ হন ঢাকার আহছানউল্লা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের চার ছাত্র, তাদের একজন সাবি্বর আহমেদ। কম্পিউটার বিজ্ঞান বিভাগের এই ছাত্রের বাসা রাজধানীর মোহাম্মদপুরে। সেখানে গিয়ে দেখা যায় মা সেলিনা আক্তার শুধু কাঁদছেন। 'আমার ছেলেকে ছবি হতে দেব না, হে আল্লাহ তুমি আমার ছেলেকে ফিরিয়ে দাও, আল্লাহ আমি তোমার কাছে ছেলের জীবন ভিক্ষা চাই' শুধু বলছিলেন তিনি। 'ভাইয়া বাসায় থাকলে সবাই মিলে একসঙ্গে খাওয়া দাওয়া করত, গল্প করত।'
গত রাত থেকে বাসায় কান্নার শব্দ ছাড়া কারো মুখে কোনো কথা নেই,' বলেন বাড়ির গৃহকর্মী শারমিন। সাবি্বরের বাবা হাসানুর রহমান পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব। এখন অবসর প্রস্তুতিকালীন (পিএলআর) ছুটিতে রয়েছেন। মোহাম্মদপুর হাউজিং সোসাইটির ১৫১ নাম্বার বাড়ির দ্বিতীয়তলায় এক ছেলে ও এক মেয়েকে নিয়ে হাসানুর ও সেলিনার সংসার। হাসানুর বলেন, সাবি্বর খুব ভালো ছবি তুলতে পারত। দৃক গ্যালারিতে তার ছবির প্রদর্শনী হয়েছিল। বিদেশে বেশ কয়েকটি প্রদর্শনীতে অংশ নেয়ার কথা ছিল। মেমোরি মেকারস নামে একটি ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানিতে আলোকচিত্র গ্রাহক হিসেবে কাজও করত সে। 'একমাত্র ছেলে ছিল ও। ভেবেছিলাম আমার চাকরির পর ও পরিবারের দায়িত্ব নেবে।
সবাই মিলে একসঙ্গে বাকিটা জীবন সুখে কাটাব। আহ! কী যে হলো,' ভারী হয়ে ওঠে তার কণ্ঠ। সাবি্বরের ফুফাত ভাই আবদুর রউফ মোহন জানান, সাবি্বর সাঁতার জানত না। বন্ধুদের ছবি তুলতে গিয়েই সম্ভবত ভাটার টানে ভেসে গেছে সে। বাংলা নতুন বছর উদযাপনে সাবি্বররা ৩৪ বন্ধু একসঙ্গে সেন্টমার্টিন গিয়েছিলেন। এর মধ্যে নয়জন ভেসে গেলে কোস্টগার্ড ও স্থানীয়রা পাঁচজনকে উদ্ধার করে। নিখোঁজ শিক্ষার্থীদের সন্ধানের ব্যাপারে কোস্টগার্ড সদর দপ্তরের পেটি অফিসার মো. কামরুজ্জামান বলেন, নৌবাহিনীর নেতৃত্বে অনুসন্ধান চলছে।
আহছানউল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ শরীফুল আলম জানান, চারজন শিক্ষক সেন্টমার্টিন গেছেন। আহছানিয়া মিশনের সহকারী পরিচালক আবদুর রাজ্জাকও সেখানে রয়েছেন। অধ্যাপক আবদুল্লাহ আল মামুন জানান, তারা সেন্টমার্টিনে পৌছেছেন। স্থানীয় প্রশাসনের সহযোগিতা নিয়ে তারা নিখোঁজ শিক্ষার্থীদের সন্ধান পাবেন বলে আশা করছেন।
এভাবে বিলাপ করে ছেলে হারানোর কষ্ট বর্ণনা করছিলেন সাদ্দাম হোসেন ওরফে অঙ্কুরের বাবা গোলাম ফারুক।
সোমবার দুপুরে ২টার দিকে সেন্টমার্টিন সমুদ্রে গোসল করতে নেমে আহছানউল্লা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই ছাত্রের মৃত্যু হয়। তারা হলেন মানফেজুল ইসলাম ওরফে ইভান (২৩) ও সাদ্দাম হোসেন ওরফে অঙ্কুর (২৩)।
একই সময়ে ইশতিয়াক বিন মাহমুদ, শাহরিয়ার ইসলাম নোমান, সাবি্বর হাসান ও এস এম গোলাম রহিম নামের চারজন শিক্ষার্থী নিখোঁজ রয়েছেন। এখনো তাদের উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি।
গোলাম ফারুক জানান, অঙ্কুরের লাশ ঢাকার পথে রয়েছে। জানাজা শেষে মিরপুর কবরস্থানে সাদ্দামের দাদির কবরে তাকে দাফন করা হবে। জানা গেছে, দুই ভাইবোনের মধ্যে অঙ্কুর ছিলেন বড়।
'আর ইভান সাঁতার জানত না। তাই যাওয়ার আগে বলেছিলাম সমুদ্রে যাচ্ছিস ভালো কথা, কিন্তু গোসল করতে নাইমো না। সমুদ্রে নামাটাই ওর কাল হলো। আমার অবস্থা যা-ই হোক, ওর মা বারবার জ্ঞান হারাচ্ছে।'
ছেলে হারানোর বেদনার কথা এভাবে বর্ণনা করছিলেন মানফেজুল ইসলাম ওরফে ইভানের বাবা মাকছেদুল আলম। তিনি জানান, ঠাকুরগাঁওয়ের বীরগঞ্জ উপজেলার পারিবারিক কবরস্থানে ইভানের মরদেহ দাফন করা হবে।
হয়তো লাশও জুটবে না
সেন্টমার্টিনে দুজন ছাত্র মারা গেছে, কয়েকজন নিখোঁজ। হঠাৎ টিভিতে এমন খবর দেখে চমকে যান মাহমুদউল্লাহ গাজী। বুকের কেমন মোচড় দিয়ে ওঠে। তখন ছেলে ইশতিয়াক বিন মাহমুদের মুঠোফোনে কল দেন।
অন্য একজন ফোন ধরে বলেন, 'আংকেল ও গোসল করতে নেমেছে। আমরা ওকে খুঁজে পাচ্ছি না।'
মাহমুদউল্লাহ গাজী বলেন, 'ওই কথা শোনার পর থেকে ওর মা বিছানায়। এখনো ওঠেনি। বারবার বলছে, আমার ছেলেকে এনে দাও। খুব আদরের ছেলে আমার। তিন ভাইয়ের মধ্যে ওই বড়।'
এভাবে ছেলে নিখোঁজ হওয়ার ঘটনা বর্ণনা করছিলেন ইশতিয়াকের বাবা মাহমুদউল্লাহ গাজী।
পাঁচ ভাইবোনের মধ্যে সবার ছোট ছিলেন গোলাম রহিম ওরফে বাপ্পী। তার পরিবারও টিভিতে দেখে প্রথম ছেলে হারানোর খবর পান। বাপ্পীর মা ছেলে হারানোর খবর শোনার পর থেকে শয্যাশায়ী। বাপ্পীর বাবা অবসরপ্রাপ্ত উপজেলা পরিসংখ্যান কর্মকর্তা শামসউদ্দিন আহমেদ বলেন, 'অন্যরা তো লাশটাও পেয়েছে। কিন্তু আমাদের কপালে হয়তো লাশও জুটবে না।' এ কথা বলে তিনি কান্নায় ভেঙে পড়েন।
একইভাবে শাহরিয়ার ইসলাম নোমান, সাবি্বর হাসানের পরিবারেও চলছে শোকের মাতম। সবাই খোঁজ নিচ্ছেন উদ্ধার তৎপরতার কী হলো। বাড়িতে এসে, টেলিফোনে তাদের খবর নিচ্ছেন স্বজনরা।
চলে যাচ্ছি দোস্ত, নেটওয়ার্কের বাইরে
সাবি্বর হাসান শনিবারই ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়েছিলেন, 'চলে যাচ্ছি দোস্ত! একদম নেটওয়ার্কের বাইরে !!'। তার সেই স্ট্যাটাসের ওপর কমেন্ট এসেছে- 'চোখের পানি ধরে রাখতে পারছি না।'
রাহাত খান অমিতের মতো অনেকেই মেনে নিতে পারছেন না সাবি্বরের এই প্রস্থান। আর এই স্ট্যাটাসগুলোর মধ্যে তার স্মৃতি হাতড়ে বেড়াচ্ছেন স্বজনরা।
সোমবার সেন্টমার্টিন দ্বীপে বেড়াতে গিয়ে গোসলে নেমে নিখোঁজ হন ঢাকার আহছানউল্লা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের চার ছাত্র, তাদের একজন সাবি্বর আহমেদ।
কম্পিউটার বিজ্ঞান বিভাগের এই ছাত্রের বাসা রাজধানীর মোহাম্মদপুরে। সেখানে গিয়ে দেখা যায় মা সেলিনা আক্তার শুধু কাঁদছেন।
'আমার ছেলেকে ছবি হতে দেব না, হে আল্লাহ তুমি আমার ছেলেকে ফিরিয়ে দাও, আল্লাহ আমি তোমার কাছে ছেলের জীবন ভিক্ষা চাই' শুধু বলছিলেন তিনি।
'ভাইয়া বাসায় থাকলে সবাই মিলে একসঙ্গে খাওয়া দাওয়া করত, গল্প করত। গত রাত থেকে বাসায় কান্নার শব্দ ছাড়া কারো মুখে কোনো কথা নেই,' বলেন বাড়ির গৃহকর্মী শারমিন।
সাবি্বরের বাবা হাসানুর রহমান পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব। এখন অবসর প্রস্তুতিকালীন (পিএলআর) ছুটিতে রয়েছেন।
মোহাম্মদপুর হাউজিং সোসাইটির ১৫১ নাম্বার বাড়ির দ্বিতীয়তলায় এক ছেলে ও এক মেয়েকে নিয়ে হাসানুর ও সেলিনার সংসার।
হাসানুর বলেন, সাবি্বর খুব ভালো ছবি তুলতে পারত। দৃক গ্যালারিতে তার ছবির প্রদর্শনী হয়েছিল। বিদেশে বেশ কয়েকটি প্রদর্শনীতে অংশ নেয়ার কথা ছিল। মেমোরি মেকারস নামে একটি ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানিতে আলোকচিত্র গ্রাহক হিসেবে কাজও করত সে।
'একমাত্র ছেলে ছিল ও। ভেবেছিলাম আমার চাকরির পর ও পরিবারের দায়িত্ব নেবে। সবাই মিলে একসঙ্গে বাকিটা জীবন সুখে কাটাব। আহ! কী যে হলো,' ভারী হয়ে ওঠে তার কণ্ঠ।
সাবি্বরের ফুফাত ভাই আবদুর রউফ মোহন জানান, সাবি্বর সাঁতার জানত না। বন্ধুদের ছবি তুলতে গিয়েই সম্ভবত ভাটার টানে ভেসে গেছে সে।
বাংলা নতুন বছর উদযাপনে সাবি্বররা ৩৪ বন্ধু একসঙ্গে সেন্টমার্টিন গিয়েছিলেন। এর মধ্যে নয়জন ভেসে গেলে কোস্টগার্ড ও স্থানীয়রা পাঁচজনকে উদ্ধার করে।
নিখোঁজ শিক্ষার্থীদের সন্ধানের ব্যাপারে কোস্টগার্ড সদর দপ্তরের পেটি অফিসার মো. কামরুজ্জামান বলেন, নৌবাহিনীর নেতৃত্বে অনুসন্ধান চলছে।
আহছানউল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ শরীফুল আলম জানান, চারজন শিক্ষক সেন্টমার্টিন গেছেন। আহছানিয়া মিশনের সহকারী পরিচালক আবদুর রাজ্জাকও সেখানে রয়েছেন।
অধ্যাপক আবদুল্লাহ আল মামুন জানান, তারা সেন্টমার্টিনে পেঁৗছেছেন। স্থানীয় প্রশাসনের সহযোগিতা নিয়ে তারা নিখোঁজ শিক্ষার্থীদের সন্ধান পাবেন বলে আশা করছেন। – See more at: http://www.jjdin.com/?view=details&type=single&pub_no=807&cat_id=1&menu_id=13&news_type_id=1&index=1&archiev=yes&arch_date=16-04-2014#sthash.D4aOXnSG.dpuf