গত দুই দশকের মধ্যে ২০১৩ সালে সারা বিশ্বে সর্বাধিক সংখ্যক মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে। এর মধ্যে ইরাক ও ইরান প্রথম সারিতে রয়েছে। মূলত এ দুটি দেশে অধিক পরিমাণে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার কারণেই গত বছরের পরিসংখ্যান এতো বড় হয়েছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল প্রকাশিত প্রতিবেদনে এ তথ্য দেয়া হয়েছে। তবে বিশ্বে মৃত্যুদণ্ডের বিরুদ্ধে জনমত তৈরি হচ্ছে। এবং বেশিরভাগ দেশ এ আইনের বিরোধী বলে জানিয়েছে মানবাধিকার সংস্থাটি।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শিরশ্ছেদ, বিদ্যুৎস্পৃষ্ট, ফায়ারিং স্কোয়াড, ফাঁসি এবং ইনজেকশন দিয়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার হার ২০১৩ সালে তার আগের বছরের তুলনায় ১৫ শতাংশ বেড়েছে।
পরিসংখ্যানে দেখা যাচ্ছে, এসময় চীনে সর্বাধিক সংখ্যক মানুষের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে। চীন এই দণ্ডের তথ্য সব সময়ই গোপন রাখে তারপরও অ্যামনেস্টির অনুমান, প্রতি বছর সেখানে কমপক্ষে এক হাজার মানুষের মৃত্যুদণ্ড কার্যকরা করা হয় যা সারা বিশ্বের মোট সংখ্যারও বেশি।
চীনকে বাদ দিলে বাকি বিশ্বে গত বছর মৃত্যুদণ্ড কার্যকরা হয়েছে কমপক্ষে ৭৭৮টি। যেখানে ২০১২ সালে এ সংখ্য ছিল ৬৮৩টি।
এদিক থেকে ইরান দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে। গত বছর এখানে মৃত্যুদণ্ড কার্যকরা হয়েছে কমপক্ষে ৩৬৯ জনের। এরপরই আছে যথাক্রমে ইরাক (১৬৯), সৌদি আরব (৭৯) এবং যুক্তরাষ্ট্র (৩৯)।
আমেরিকা মহাদেশে যুক্তরাষ্ট্রই একমাত্র দেশ যেখানে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়। তবে ২০১৩ সালে এ সংখ্যা কিছুটা কমেছে। ২০১২ সালে সেখানে ৪৩ জনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়। আর এর ৪০ শতাংশই ঘটেছে টেক্সাসে।
এছাড়া গত বছর ২২টি দেশ মৃত্যুদণ্ড দিয়েছে। এর সংখ্যাও অবশ্য ২০১২ সালের চেয়ে এক কম। এর মধ্যে ইন্দোনেশিয়া, কুয়েত, নাইজেরিয়া এবং ভিয়েতনাম এ চারটি দেশ কিছুদিন বিরতির পর আবার মৃত্যুদণ্ড দেয়া শুরু করেছে।
এছাড়া এশিয়ার মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম দেশ যা মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করে থাকে। এখানে গত কয়েক বছরের মধ্যে দুই জঙ্গি নেতা শায়খ আব্দুর রহমান ও সিদ্দিকুর রহমান ওরয়ে বাংলাভাই, এরপর বঙ্গবন্ধুর তিন খুনি এবং সর্বশেষ একাত্তরে মানবতা বিরোধী অপরাধে জামায়াত নেতা আব্দুল কাদের মোল্লার ফাঁসি কার্যকরা করা হয় ২০১৩ সালের ১২ ডিসেম্বর। এ নিয়ে সেসময় অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল তাদের অসন্তোষ প্রকাশ করে বিবৃতিও দেয়।
তবে সংঘাত বিক্ষুব্ধ দেশগুলোতে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হচ্ছে কি না তার সঠিক তথ্য দিতে পারেনি অ্যামেনেস্টি। তারপরও অনুমান করা হচ্ছে, সিরিয়া এবং মিশরে এমন ঘটনা ঘটছে।
অ্যামনেস্টির তথ্য মতে, ২০১৩ সালে সারা বিশ্বে ২৩ হাজারেরও বেশি মানুষের মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়েছে।