নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের মেয়র ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী এবং নারায়ণগঞ্জ-৪ (ফতুল্লা-সিদ্ধিরগঞ্জ) আসনের সংসদ সদস্য শামীম ওসমানের দ্বন্দ্বটা প্রাকাশ্যেই। তাদের ওই দ্বন্দ্বে প্রতিমুহূর্তেই আতঙ্কে থাকে নারায়ণগঞ্জবাসী। তবে শামীম ওসমানের আগ্রাসী ভাবটাকেই সবচেয়ে বেশি ভয় তাদের।
আইভীকে ‘কালী মা’ আখ্যা দেয়ার পর এবার তাকে ‘বেগম সুফিয়ান’ আখ্যা দিয়ে তাকে শাসালেন শামীম ওসমান। বললেন, এই করেন ওই করেন ভালো কথা, আমার পেছনে লাগা বাদ দেন। পেছনে লাগা বাদ দিয়ে কাগজপত্র তৈরি করুন কাকে কীভাবে দোকান দিয়েছেন। কারণ দুর্নীতি দমন কমিশনের কর্মকর্তারা যদি আপনার বিষয়ে খোঁজ নেয় তবে এ কাগজপত্র আপনার কাজে লাগবে।’
বেসরকারি টেলিভিশনে দেয়া আইভীর এক সাক্ষাৎকারের উদ্বৃতি দিয়ে শামীম ওসমান বলেন, ‘বেগম সুফিয়ান সাক্ষাৎকারে বলেন- আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে আমাদের সন্তানদের জেলে যেতে হবে এটা ভাবা যায় না। এটা আপনি ভাবতে পারেন না আপনার খারাপ লাগে, আর আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে যে পারভেজ গুম হয়ে গেল তাতে আপনার খারাপ লাগে না? পারভেজ কি শিবির করতো নাকি যুবলীগ করতো? অন্যের জন্য কুয়া খুড়লে ওই কুয়ায় একদিন নিজেরই পড়তে হয়।’
মেয়র আইভীকে উদ্দেশ করে শামীম ওসমান বলেন, ‘আপনি বলেন আমার ভাই নাসিম ওসমান নাকি ভূমিদস্যু। আপনি দেখান আমার ভাই কার সম্পত্তি দখল করেছে। কিন্তু আমি প্রমানসহ বলতে পারি আপনার দেওভোগের বাড়ি যেখানে আপনি বাস করেন, রাতে ঘুমান, সেই বাড়ির জায়গাটি ১৯৫০ সালের ২৩ নভেম্বর কমিরুনেচ্ছার নামে রেজিস্ট্রি হয়। দলিল নম্বর ৬৪৭২। জমির পরিমাণ ৯ দশমিক ৫৬ শতাংশ। পরে চুনকা কাকার স্ত্রীর (আইভীর মা) নামে ওই জমি থেকে ৬ শতাংশ জমি কিনে নেয়া হয়। তাহলে বাকি ৩ দশমিক ৫৬ শতাংশ জমি আপনার বাড়িতে কেমন করে এলো? অন্যের ৩ দশমিক ৫৬ শতাংশ জমি আপনারা দখল করেছেন। সুতরাং আপনারাই ভূমি দস্যূ।’
তিনি আরো বলেন, ‘আপনি শহরের বিল্ডিং ভাঙেন, ভালো কথা সবকিছু নিয়মের মধ্যে হবে। কিন্তু ভাঙার দায়িত্ব দেন বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারীর ভাই আপানার খালু শকুকে। দেওভোগের ন্যাশনাল ক্লাব ভাঙতে চান। কিন্তু নিয়ম কি শুধু সাধারণ মানুষের জন্য? সিটি করপোরেশনের মার্কেট মাধবী প্লাজার কী হবে? এটা কার বাবার জায়গা? এটা রাজউকের জমি। সিটি করপোরেশন থেকে বিভিন্ন জায়গায় মার্কেট তৈরি করা হয়। লাখ লাখ টাকার দোকান আপনার আত্মীয়স্বজনের নামে বরাদ্দ দেয়া হয়। দোকান পায় আইভীর বোন জামাই কাদির, খবরের পাতা সম্পাদক রাজাকারের পোলা মাসুম, আরেক রাজাকারের পোলা খেলাঘরের জহির, আর নারায়ণগঞ্জে কিছু হলুদ সাংবাদিক। কাদির কোন কোটায় দোকান পায় শুনি?’
নারায়ণগঞ্জের লোকাল পত্রিকার উদ্বৃতি দিয়ে শামীম ওসমান বলেন, ‘অনেক পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশ করেছে আমরা নাকি পাল্টাপাল্টি সমাবেশ দিয়েছি। আমি তাদের উদ্দেশে বলতে চাই আগরতলা আর চকিরতলা কখনো এক হলো নাকি? চামচিকাও একটা পাখি আর ঈগলও একটা পাখি। আমি চামচিকাদের কথা বলতে চাই না। এখন আমি যদি বলি আমাদের একটা মিছিল হবে। আর সেই মিছিলটি ডিআইটি নিতাইগঞ্জ হয়ে ঘুরে আসবে তাহলে আমাদের মিছিল ২নং রেলগেইট এলাকার সামনে গেলেই শুনতে পাবেন ভুঁ করে একটি শব্দ হচ্ছে। দেখবো আমাদের স্ট্যাজের পেছনের মিটিং (আইভীর মিটিং) থেকে সব দৌড়ে পালাচ্ছে।’
বিরুদ্ধাচারণকারীদের উদ্দেশ করে তিনি বলেন, ‘আমাকে গালাগালি করেন ভালো কথা, কেউ আবার আমার হাত-পা ভেঙে দাউকান্দি পাঠিয়ে দেন। আমাকে গালাগালি করলে আমি কিছু মনে করি না। কারণ কুকুর পায়ে কামড় দিলে মানুষ কিছু মনে করে না। কিন্তু আমি বলতে চাই আর যদি আমার বাবা-দাদা ও বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনাকে নিয়ে অশ্লীল কথাবার্তা বলা হয়, তবে আমার ধৈর্য্যের বাঁধ ভেঙে যাবে। তখন নারায়ণগঞ্জবাসী, ছাত্রলীগ যুবলীগের কর্মীরা যদি কোনো ব্যবস্থা নেয় তবে এর দায়িত্ব আমরা নিবো না যে কোনো পরিস্থিতির জন্য দায়ী থাকবেন আপনারা।’
বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির উদ্দেশে শামীম ওসমান বলেন, ‘দুঃখ লাগে যখন ২০০৮ সালের নির্বাচনে সারা বাংলাদেশে যে দল ৩২ হাজার ৬২৫ ভোট পায় সেই কমিউনিস্ট পার্টির নেতারা যারা কথা বলার সময় দুই চোখ দুই দিকে থাকে তারা নারায়ণগঞ্জ চালাতে আসে। পৃথিবীতে মাত্র একটি দলই আছে যারা নিজেদের দল বিলুপ্ত ঘোষণা করে বঙ্গবন্ধুর বাকশালে যোগ দিয়েছিল। আবার পঁচাত্তরে বঙ্গবন্ধু হত্যা হওয়ার পর তারা আবার জিয়াউর রহমানের সাথে খাল কাটার কাজে যোগ দেয়। তাদের এমনই চরিত্র।’
সন্ত্রাস নির্মূল ত্বকী মঞ্চে আহ্বায়ক ও নিহত ত্বকীর বাবা রফিউর রাব্বিকে উদ্দেশ্য করে শামীম ওসমান বলেন, ‘কোথাকার কোন রফিউর রাব্বি সে পুরুষ নাকি মহিলা, নাকি হিজড়া তাই এখন পর্যন্ত জানতে পারলাম না। তার ছেলেকে নাকি আমরা বাপে-পোলায় হত্যা করছি। হত্যার পর প্রথমে বললো কে মারছে জানি না। পরে বললো স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি মারছে। ১৮ দিন পর বেগম সুফিয়ান যখন বললো- একটি পরিবার জড়িত, তখন বললো শামীম ওসমান, তার ছেলে অয়ন ওসমান, পারভেজ, ছাত্রলীগের নেতারা মিলে নাকি ত্বকীরে হত্যা করছি।’