DMCA.com Protection Status
title="৭

৩০ শতাংশ নারী স্বামীর ভয়ে যৌন সম্পর্কে বাধ্য হন:জরিপ রিপোর্ট

download (37)বাংলাদেশের বিবাহিত নারীদের এক-তৃতীয়াংশেরও বেশি জীবনের কোনো না কোনো সময় স্বামীর মাধ্যমে যৌন নির্যাতনের শিকার হন। ২০ থেকে ৩৪ বছর বয়সী বিবাহিত নারীরা এ নির্যাতনের ক্ষেত্রে বেশি ঝুঁকির মধ্যে আছেন। শহরের তুলনায় গ্রামে এ ধরনের নির্যাতনের ঘটনা বেশি ঘটে। ৩০ শতাংশ নারী জানিয়েছেন, স্বামীর ইচ্ছা অনুযায়ী যৌন সম্পর্ক না করলে স্বামী কী না কী করবে; সে ভয়ে শারীরিক সম্পর্ক করতে বাধ্য হন।


এ তথ্য বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) প্রথমবারের মতো নারী নির্যাতন নিয়ে 'ভায়োলেন্স অ্যাগেইনস্ট উইমেন (ভিএডবিস্নউ) সার্ভে ২০১১' শীর্ষক জরিপের। এ জরিপে বলতে গেলে প্রায় অপ্রকাশ্য এ ধরনের যৌন নির্যাতনের চিত্রটি প্রকাশ পেয়েছে। গত ডিসেম্বরে আনুষ্ঠানিকভাবে জরিপটি প্রকাশ করা হয়।


জাতিসংঘ জনসংখ্যা তহবিলের (ইউএনএফপিএ) কারিগরি ও আর্থিক সহায়তায় ২০১১ সালের ১৯ থেকে ২৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত জরিপের তথ্য সংগ্রহ করা হয়। জরিপে স্বামীর মাধ্যমে যৌন নির্যাতন বলতে স্ত্রীর অনিচ্ছা সত্ত্বেও জোরপূর্বক শারীরিক সম্পর্ক করতে বাধ্য করা, স্বামীর নির্যাতনের ভয়ে শারীরিক সম্পর্কে সম্মত হওয়া, শারীরিক সম্পর্ক ছাড়াও স্ত্রীকে এমন কিছু করতে বাধ্য করা যা স্ত্রী করতে চান না অথবা এতে অপমানিত বোধ করেন অথবা অন্যান্য যৌন নির্যাতনকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এতে ১২ হাজারের বেশি নারী তথ্য দিয়েছেন।


এদিকে স্বামীর মাধ্যমে যে যৌন নির্যাতন হয়, সেটিকে 'নির্যাতন' হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে জাতিসংঘ। তবে বাংলাদেশের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে (২০০০, সংশোধিত ২০০৩) বিবাহিত নারীদের যে যৌন অধিকার আছে বা স্ত্রীর অমতে স্বামী যে কোনো ধরনের যৌন আচরণ করতে পারেন না, সে বিষয়টির স্বীকৃতি দেয়া হয়নি। 


এ আইনে বলা হয়েছে, যদি কোনো পুরুষ বিবাহবন্ধনের বাইরে ১৬ বছরের অধিক বয়সী কোনো নারীর সম্মতি ছাড়া বা ভয় দেখিয়ে বা প্রতারণা করে সম্মতি আদায় করে যৌন সম্পর্ক স্থাপন করে, তা ধর্ষণ হবে। অর্থাৎ, এ ক্ষেত্রে স্ত্রীর ইচ্ছা-অনিচ্ছার বিষয়টিকে আমলে নেয়া হয়নি।


অন্যদিকে একই আইন বলছে, ১৬ বছরের কম বয়সী কোনো নারীর সঙ্গে সম্মতি বা সম্মতি ছাড়া শারীরিক সম্পর্ক করলে তা ধর্ষণ বলে গণ্য হবে। তবে এ ক্ষেত্রেও সমস্যা আছে। দেশের বিদ্যমান বাল্যবিবাহ প্রতিরোধ আইন অনুযায়ী, ১৮ বছরের কম বয়সী মেয়ের বিয়ে হলে তা বাল্যবিবাহ বলে বিবেচিত হবে। এ আইনে শাস্তির বিধান থাকলেও বিয়েটা বৈধ হবে। বিয়ে বৈধ হলে স্বামী-স্ত্রীর সঙ্গে যৌন সম্পর্ক করার অধিকারপ্রাপ্ত হন। তাই তখন স্ত্রীর সম্মতি বা ইচ্ছার বিষয়টি গৌণ হয়ে যায়।


তবে ২০১০ সালের পারিবারিক সহিংসতা (প্রতিরোধ ও সুরক্ষা) আইনে যৌন নির্যাতনের বিষয়টিকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। তবে এ আইনেও বিষয়টিকে সেভাবে স্পষ্ট করা হয়নি। আইনে যৌন প্রকৃতির এমন আচরণ যা সংক্ষুব্ধ ব্যক্তির সম্ভ্রম, সম্মান বা সুনামের ক্ষতি করে, তা অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এছাড়া এ আইনে শারীরিক নির্যাতনের ক্ষেত্রেও জীবন, স্বাস্থ্য, নিরাপত্তা বা শরীরের কোনো অঙ্গ ক্ষতিগ্রস্ত হলে বা হওয়ার সম্ভাবনা থাকলে এবং বলপ্রয়োগের বিষয়টিকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। তাই বিবাহিত নারীদের এ আইন ব্যবহারের একটি সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। তবে নতুন আইন এবং আইনটির প্রচার কম থাকায় যৌন অধিকারের বিষয়ে আইনি সুরক্ষা নেয়ার নজির নেই।


বিশেষজ্ঞরা কী বলছেন?

বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্টের (বস্নাস্ট) অবৈতনিক পরিচালক সারা হোসেন বলেন, বাংলাদেশের সমাজে এ ধরনের নির্যাতন যে ঘটছে, তা নিয়েই কেউ মুখ খুলতে চাইতেন না। তথ্য হাতের কাছে ছিল না বলে নীতিনির্ধারকদের কাছে বিষয়টির গুরুত্ব তুলে ধরা সম্ভব হয়নি। এখন বিবিএসের জরিপকে ভিত্তি ধরে আইনি সুরক্ষার বিষয়টিতে গুরুত্ব দিতে হবে।

মনোরোগ চিকিৎসক মোহিত কামাল বলেন, 'আমাদের কাছে যে কোনো রোগী এলেই তার যৌন জীবনের ইতিহাস নিতে হয়। বিষণ্ন্নতায় ভুগছে বা আত্মহত্যা করতে চান, এ ধরনের বিবাহিত নারী রোগীদের ৯০ শতাংশেরই স্বামীর সঙ্গে ইচ্ছার বিরুদ্ধে শারীরিক সম্পর্ক করা, যৌন সম্পর্কে ব্যাপারে স্বামীর সঙ্গে মতবিরোধ বা এ ধরনের জটিলতার ইতিহাস পাওয়া যায়। তবে নারীরা এ কথাগুলো বলতে চান না। ধীরে ধীরে তা বের হয়ে আসে।'

Share this post

scroll to top
error: Content is protected !!