সাবেক নির্বাচন কমিশনার ব্রি. জে. (অব.) এম সাখওয়াত হোসেন বলেছেন, ভারতে অনুষ্ঠিত লোকসভা নির্বাচনে ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) ক্ষমতায় গেলে বিএনপির কোনো লাভ হবে না। কারণ এ নির্বাচনে দেশটির রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটের পরিবর্তন হলেও বাংলাদেশ প্রসঙ্গে তাদের মূলনীতির পরির্তন হবে না।
শনিবার বিকেলে জাতীয় প্রেসক্লাবে ভিআইপি লাউঞ্জে ‘ভারতের নির্বাচন এবং আমাদের প্রত্যশা’ শীর্ষক এক গোলটেবিল বৈঠক তিনি কথা বলেন। সাউথ এশিয়া ইয়ুথ ফর পিস অ্যান্ড প্রোসপারিটি সোসাইটি এ গোলটেবিল বৈঠকের আয়োজন করে।
বৈঠকে সাখাওয়াত বলেন, ‘ভারতের তরুণ ভোটাররা পারিবারিক রাজনৈতিক সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে আসতে চায়। এক্ষেত্রে বিজেপি একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেতে পারে। এছাড়া জয়ললীতা তাদের সমর্থন দিতে পারেন।’
অনুষ্ঠানে সাবেক শিক্ষামন্ত্রী বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা এম ওসমান ফারুক বলেন, ‘ভারত আমাদের নির্বাচন প্রভাবিত করতে পারে কিন্তু আমরা তাদের নির্বাচন প্রভাবিত করতে পারি না। শুধু আলোচনাই করতে পারি।’
ভারতের কঠোর সমালোচনা করে সাবেক এ মন্ত্রী বলেন, ‘ভারত একটি বৃহৎ গণতান্ত্রিক দেশ। কিন্তু তারা বাংলাদেশে একটি অগণতান্ত্রিক সরকারকে সমর্থন দিয়েছে।’
ভারতের নির্বাচন কমিশনের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘ভারতের নির্বাচন কমিশন একটি শক্তিশালী কমিশন। কিন্তু আমাদের নির্বাচন কমিশন মেরুদণ্ডহীন।’
তিনি বলেন, ‘বিজেপি ক্ষমতায় আসুক আর কংগ্রেস আসুক এটা বড় বিষয় নয়। যে দলই ক্ষমতায় আসুক না কেন, তাদের নীতির পরিবর্তন করতে হবে।’
ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্কের কথা তুলে ধরে এম ওসমান ফারুক বলেন, ‘ভারতের সঙ্গে আমরা সার্বভৌমত্বের সম্পর্ক তৈরি করতে পারিনি। এর মূল কারণ হলো নতজানু পররাষ্ট্রনীতি। এ নীতির কারণে সীমান্তে নিরীহ মানুষকে গুলি করে হত্যা করলেও তার বিচার হয় না। তবে দেশের স্বার্থে সরকার এবং বিরোধী দল ঐক্যবদ্ধ হতে পারলে ভারতের নির্বাচন বাংলাদেশের জন্য ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।’
কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইব্রাহিম বলেন, ‘ভারতের সঙ্গে আমাদের যে বর্তমান সম্পর্ক, এখন সেটি ভারত-বাংলাদেশ নেই। সেটি পরিনত হয়েছে ভারত-আওয়ামী লীগে। বাংলাদেশ সরকারের দিল্লীর প্রতি যে চিন্তা রয়েছে, তা পরিবর্তন না করলে আমাদের অধিকার প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হবে না।’
সাংবাদিক ও কলামিস্ট জগলুল আহমেদ চৌধুরী বলেন, ‘বিজেপি ক্ষমতায় এলে সম্পর্ক উন্নয়ন করা কঠিন হবে, সম্পর্ক করা যাবে না এমনটি নয়। তবে যে দলই ক্ষমতায় আসুক না কেন, তাদের সঙ্গে আমাদের দ্বিপাক্ষিক অমীমাংসিত বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করতে হবে।’
সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক এনএম সাজ্জাদুল হকের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন মেজর জেনারেল (অব.) রুহুল আমিন চৌধুরী, জানিপপের চেয়ারম্যান ড. অধ্যাপক নাজমুল হাসান কলিমুল্লাহ, বিশিষ্ট সাংবাদিক সাদেক খান, অধ্যাপক ড. দিলারা চৌধুরী প্রমুখ।
প্রসঙ্গত, গত ৭ এপ্রিল শুরু হয়েছে ভারতের ১৬তম লোকসভা নির্বাচন। ৫০০ আসনের লোকসভার নির্বাচন চলবে ১২ মে পর্যন্ত। ভারতের ২৪টি প্রদেশে এবার মোট ভোটার সংখ্যা ৮১ কোটি ৪৫ লাখ। এ নির্বাচনে কংগ্রেস, ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি), তৃণমূল কংগ্রেস, আম আদমি পার্টি (এএপি), অসাম গণপরিষদ (এজিপি), কমিউনিস্ট পার্টি অব ইন্ডিয়া (মার্ক্সবাদী) বা সিপিআই (এম), অল ইন্ডিয়া ইউনাইটেড ডেমক্রেটিক ফ্রন্ট (এআইএইইউডিএফ) এবং সমাজবাদী পার্টিসহ আরো বেশ কয়েকটি দল প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে। নয় পর্বের এই নির্বাচনের ফলাফল আগামী ১৬ মে ঘোষণা করা হবে।