এই মন্তব্যটি আওয়ামী সরকারের কোন মন্ত্রীর মনে হলেও তা আসলে বলেছেন সফররত মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরর উপসহকারী মন্ত্রী অতুল কেশাপ।
পাঁচ জানুয়ারির নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র তার আগের অবস্থানেই রয়েছে— এমনটি জানালেও ঢাকা সফরে আসা মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের উপসহকারী মন্ত্রী অতুল কেশাপ বলেছেন, ‘সংলাপের জন্য বিএনপিকে দেয়া দুটি শর্ত তারা মানেনি বলে সরকারের সংলাপের উদ্যোগ এখনও শুরু হয়নি।’
আগামীকাল ঢাকায় শুরু হতে যাওয়া বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে তৃতীয় নিরাপত্তা সংলাপে অংশ নিতে প্রতিনিধি দলের হয়ে গতকাল ঢাকা আসেন অতুল কেশাপ। বিকালে তিনি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলমের সঙ্গে সাক্ষাত্ শেষে সাংবাদিকদের কাছে এই মন্তব্য করেন।
মার্কিন উপসহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী অতুল কেশাপ বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র গণতান্ত্রিক, নিরাপদ, স্থিতিশীল ও জনগণের প্রতিনিধিত্বশীল বাংলাদেশ দেখতে চায়। সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেন, ৫ জানুয়ারির নির্বাচন প্রসঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র তার আগের অবস্থানেই আছে। তিনি বলেন, ‘দুটি শর্তে বিএনপির সঙ্গে আলোচনার প্রস্তাব দেয়া হয়েছিল। সহিংসতা বন্ধ ও জামায়াতের সঙ্গ ত্যাগ। এই শর্তগুলো এখনও পূরণ হয়নি। হলেই সরকার আলোচনায় উদ্যোগী হবে।
সরকার আলোচনা চায় বলেও জানান তিনি। বেলার প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসানের স্বামী এবি সিদ্দিক উদ্ধার বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, পৃথিবীর অনেক দেশে এমন ঘটনা ঘটে; কিন্তু কোনো ক্লু পাওয়া যায় না। তবে এবি সিদ্দিককে দ্রুতই উদ্ধার করা গেছে। কারখানা পরিদর্শক নিয়োগ, শ্রম আইন পরিবর্তন, শ্রমিকদের নিরাপত্তা বিধান, কারখানার পরিবেশ উন্নয়ন, ক্ষতিপূরণ প্রদানসহ তৈরি পোশাক শিল্পের উন্নয়নে সরকারের গৃহীত পদক্ষেপে সন্তুষ্ট মার্কিন প্রসাশন।
বৈঠকে মায়ানমারসহ প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নে বাংলাদেশ সরকারের অব্যাহত প্রচেষ্টাকে সাধুবাদ জানান অতুল কেশাপ। তিনি বলেন, বাংলাদেশের নাগরিকদের অর্থনৈতিক, গণতান্ত্রিক উন্নয়ন ও নিরাপত্তায় যুক্তরাষ্ট্র সরকার সহায়তা অব্যাহত রাখবে। প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বাংলাদেশে অবস্থানরত মায়ানমার শরণার্থীদের ফেরত পাঠানো এবং মায়ামারের সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে মাদক প্রবেশের বিষয়গুলো মার্কিন ডেপুটি অ্যাসিসটেন্ট সেক্রেটারিকে অবহিত করেন।
এসব বিষয় মার্কিন সরকারের উচ্চ মহলে আলোচনা করার আশ্বাস দিয়েছেন কেশাপ। কেশাপ এদেশের বিদ্যুত্ পরিস্থিতি বিষয়ে জানতে চাইলে সরকারের কয়লাভিত্তিক বিদ্যুত্ উত্পাদন প্রকল্প শুরুর উদ্যোগের বিষয়ে তাকে অবহিত করা হয়। তবে এসব প্রকল্পে উত্পাদিত বিদ্যুতের দাম অনেক বেশি দিতে হয় উল্লেখ করে এ খাতে আরও ব্যাপক বিনিয়োগ প্রয়োজন বলে প্রতিমন্ত্রী জানান।
এছাড়া অতুল কেশাপ বাংলাদেশের বিদ্যুত্ ঘাটতি মোকাবিলায় নেপাল ও ভুটানের প্রসঙ্গ উত্থাপন করলে প্রতিমন্ত্রী জানান, ভারতসহ এসব দেশের সঙ্গে জলবিদ্যুত্ সঞ্চালনের বিষয়ে কাজ শুরু করেছে সরকার। মার্কিন ডেপুটি অ্যাসিসটেন্ট সেক্রেটারি এদেশের বিনিয়োগ পরিস্থিতি সম্পর্কে জানতে চাইলে মন্ত্রী জানান, বর্তমানে এর পরিমাণ বাড়ছে। অতুল কেশাপ নির্বাচন পরবর্তী রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় থাকবে বলে আশা প্রকাশ করেন। প্রতিমন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের অবস্থান পুনর্ব্যক্ত করে বলেন, বিএনপি সহিংসতা এবং জামায়াতকে বর্জন করলে সরকার তাদের সঙ্গে আলোচনার উদ্যোগ গ্রহণ করবে।
নিরাপত্তা সংলাপ: বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে তৃতীয় নিরাপত্তা সংলাপ হবে আগামীকাল। তৃতীয় নিরাপত্তা সংলাপে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কবিষয়ক পররাষ্ট্র সচিব মুস্তাফা কামাল বাংলাদেশের প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেবেন। অপর পক্ষে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি দলের নেতৃত্বে থাকবেন ভারপ্রাপ্ত এসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি থমাস কেলি।
সূত্র জানায়, পরপর দুটি নিরাপত্তা সংলাপের পর জঙ্গিবাদ মোকাবিলা, সমুদ্র নিরাপত্তা, সম্পদ আহরণ ও তার যথাযথ সংরক্ষণ, জলদস্যুতা প্রতিরোধ, মানব পাচাররোধ এবং বিভিন্ন ধরনের দুর্যোগ মোকাবিলায় দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতা বাড়ানোর বিষয়গুলো ব্যাপকভাবে আলোচনা করা হয়েছে। এছাড়া তথ্য আদান-প্রদান, সামরিক বিভিন্ন ধরনের প্রশিক্ষণও বেড়েছে। শুধু সংখ্যাই নয়, এর পরিধি ও মানও বৃদ্ধি পেয়েছে কয়েকগুণ।