DMCA.com Protection Status
title="৭

সুরের দিগন্তে উজ্জ্বল নক্ষত্র বশির আহমেদ

basউপমহাদেশের প্রখ্যাত সংগীতশিল্পী বশির আহমেদের মৃত্যুতে দেশের সংগীতাঙ্গনে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। বশির আহমেদকে ছাড়া আমাদের দেশের সংগীতাঙ্গনের ইতিহাসের কথা ভাবাই যায়না।

দীর্ঘদিনের সংগীত ক্যারিয়ারে অনেক জনপ্রিয় ও কালজয়ী গান গেয়েছেন তিনি। যারে যাবি যদি যা, ডেকোনা আমারে তুমি কাছে ডেকোনা, আমাকে পোড়াতে যদি এত লাগে ভালো, অনেক সাধের ময়না আমার কিংবা সজনী গো ভালোবেসে এত জ্বালা কেন বলোনা— এসব শ্রোতানন্দিত গান সত্যিকার অর্থেই একজন বশির আহমেদকে খুব সহজে ষাটের দশকের শ্রোতা থেকে শুরু করে আজকের প্রজন্মের শ্রোতাদের সামনে খুব সহজেই বিশিষ্ট শিল্পী হিসেবে চিনিয়ে দেয়।

একুশে পদকপ্রাপ্ত এবং একাধিকবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত শিল্পী বশির আহমেদ ঢাকার মোহাম্মদপুরের জহুরী মহল্লায় বসবাস করতেন। রাজা মেহেদী আলী খানের কথায় এবং মোহাম্মদ শফির সংগীত পরিচালনায় বশির আহমেদ সর্বপ্রথম মুম্বাইয়ের আবুল হাসান চলচ্চিত্রে প্লেব্যাক করেন। তার বয়স তখন উনিশ কিংবা বিশ বছর।

বশির আহমেদের বাবা নাসির আহমেদ এবং মা মোমেনা খাতুন। দুজনই প্রয়াত। ১৯৩৯ সালের ১৮ নভেম্বর কলকাতা শহরে বশির আহমেদের জন্ম। ছোটবেলায় তার মা তাকে ঘুমপাড়ানির গান শুনিয়ে শুনিয়ে যখন ঘুম পাড়াতেন, সেই সময় থেকেই মূলত গানের প্রতি তার এক ধরনের আগ্রহ জন্মায়। দিন দিন বড় হতে থাকলেন তিনি, গান গাওয়ার প্রতিও তার আগ্রহ প্রবলভাবে বাড়তে থাকল। পড়াশোনার পাশাপাশিই তিনি গান গাইতেন।

বাবা কিংবা মা কেউই তাতে বাধা দিতেন না। ওস্তাদ বেলায়েত হোসেন বাঁকার কাছেই তার গানে হাতেখড়ি এবং দীর্ঘদিনের চর্চা। তালিম নিয়েছেন ওস্তাদ বড়ে গোলাম আলীর কাছেও। এক সময় চর্চা চলতে থাকাকালে ছবিতে গান গাওয়ার পরিকল্পনা নিয়ে মুম্বাই যান। অপরিচিত জায়গায় এসে তিনি দিশেহারা হয়ে যান। ঘুম থেকে উঠে পরেরদিন সকালে তারই এক বন্ধুর সঙ্গে দেখা। তিনিই এক সময় তাকে গীতিকার রাজা মেহেদী আলী খানের কাছে নিয়ে যান।

এভাবেই তার মুম্বাইয়ের ছবিতে গান গাওয়া শুরু। পরে কয়েকটি ছবিতে গান গাওয়ার পর তিনি মা-বাবার টানে কলকাতায় চলে আসেন। গুলিস্তান সিনেমা হলের মালিক দোষানী এক সময় তার সঙ্গে এবং তালাত মাহমুদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন যে ঢাকাসহ কয়েকটি জেলা শহরে গানের অনুষ্ঠানে গান গাইতে হবে। তারা সে অনুযায়ী এক সময় ঢাকার গুলিস্তান সিনেমা হলসহ সিলেট, রাজশাহী, কুমিল্লাসহ আরও কয়েকটি জেলাশহরে গান গাইলেন।

একদিন পরিচালক এহতেশামের ভাই মু্স্তাফিজ তার সঙ্গে যোগাযোগ করেন। সে সময় দুটি ছবির কাজ এক সঙ্গে শুরু হয়। একটি মুস্তাফিজের ‘তালাশ’ ও অন্যটি এহতেশামের ‘রাজধানীর বুকে’। রাজধানীর বুকে ছবিতে গাইলেন তালাত মাহমুদ। রবিন ঘোষের সুরে ‘তোমারে লেগেছে এত যে ভালো চাঁদ বুঝি তা জানে।’ বশির আহমেদের ওপর দায়িত্ব পড়ল ‘তালাশ’ ছবির গান লেখার এবং গাওয়ার। রবিন ঘোষের সুরে এই ছবিতে তিনি গাইলেন। সব গানই শ্রোতা সমাদৃত হয়।

এভাবেই ঢাকার ছবিতে তার প্লেব্যাক শুরু। এরপর তিনি নায়ক রহমানের প্রথম পরিচালিত ছবি ‘দর্শন’-এর সংগীত পরিচালনার দায়িত্ব পান। এই ছবির নয়টি গানই সুুপারহিট হয়। এই ছবিতে রহমানের বিপরীতে ছিলেন শবনম। এরপর কাজী জহিরসহ আরও অনেকের ছবির জন্য গান গেয়েছেন তিনি। তবে যারে যাবি যদি যা কিংবা আমাকে পোড়াতে যদি এতলাগে ভালো— এসব গান রেডিওতে তার প্রথম গাওয়া। রেডিওতে জনপ্রিয় হওয়ার পর সেসব গান ছবিতে সংযুক্ত করা হয়েছে।

পাকিস্তানের জনপ্রিয় কণ্ঠশিল্পী নূরজাহানের মতো একজন শিল্পীর সঙ্গে বশির আহমেদ গান গেয়েছেন। তার সঙ্গে গাওয়া ‘তুমজো মিলে পেয়ার মিলা’ কিংবা ‘চুনলিয়া এক ফুলকো’ গান ব্যাপক হিট হয়। বরেণ্য এই কণ্ঠশিল্পী একুশে পদকের পাশাপাশি চিত্রনায়িকা মৌসুমী পরিচালিত ‘কখনো মেঘ কখনো বৃষ্টি’ ছবিতে গান গাওয়ার জন্য ২০০৩ সালে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করেন। 

Share this post

scroll to top
error: Content is protected !!