টয়োটা, নিশান, মিৎসুবিসি আর হোন্ডা বিশ্বখ্যাত জাপানি ব্র্যান্ড। বাংলাদেশে মোট গাড়ি ব্যবসার ৯০ শতাংশই নিয়ন্ত্রণ করে জাপান। বিশেষ করে জাপানি নাগরিকদের জন্য তৈরি রিকন্ডিশন্ড গাড়ির রয়েছে এদেশে বিশাল বাজার।
জাপান থেকে বছরে কমপক্ষে ২৫ থেকে ৩০ হাজার রিকন্ডিশন্ড গাড়ি আমদানি হয়; এ বাবদ সরকার আয় করছে হাজার হাজার কোটি টাকার রাজস্ব। জাপানি গাড়ির এমন বিপুল চাহিদার সুযোগ নিয়ে নতুন ও পুরনো গাড়ি আমদানি এবং বিক্রয়ে নজিরবিহীন প্রতারণা আর অনিয়মের আশ্রয় নিচ্ছেন একশ্রেণীর আমদানিকারক।
অভিযোগ রয়েছে, আমদানিকারকের চাহিদা অনুযায়ী কয়েকজন রফতানিকারক দুর্ঘটনায় ড্যামেজড হয়ে যাওয়া গাড়ি বাংলাদেশে পাঠাচ্ছেন। বিশেষ করে জাপানের সুনামি-পরবর্তী সময়ে বিভিন্নভাবে ক্ষতিগ্রস্ত শত শত গাড়ি মেরামত ও সংস্কার করে বাংলাদেশে পাঠানো হয়েছে ‘রিকন্ডিশন্ড’ নাম দিয়ে।
প্রথমে গাড়ির যন্ত্রাংশ নামে আমদানি করে পরে সংযোজনের মাধ্যমে ফিটফাট গাড়িতে রূপান্তরের ঘটনাও রয়েছে। বাংলাদেশের একশ্রেণীর গাড়ি ব্যবসায়ী এ ধরনের গাড়ি আমদানির সুযোগ নিয়ে কোটি কোটি টাকার মুনাফা করলেও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন সাধারণ ক্রেতারা। এমন ঘটনাও ঘটেছে দুটি গাড়ি জোড়া দিয়ে একটি গাড়িতে রূপান্তর করা হয়েছে। আর তা আমদানি হয়েছে গাড়ির যন্ত্রাংশ নামে। পরে বাংলাদেশে এনে রিকন্ডিশন্ড গাড়িতে রূপান্তর করে বিক্রি করা হয়েছে।
বিষয়টি স্বীকার করে বাংলাদেশ রিকন্ডিশন্ড ভেহিক্যালস ডিলার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বারভিডা) প্রেসিডেন্ট হাবিব উল্লাহ ডন জানান, ‘আগে এমন ঘটেছে অস্বীকার করছি না। কিন্তু এখন এ ধরনের ঘটনা অনেক কমে গেছে। তারপরও কেউ কেউ এ ধরনের গাড়ি আনছেন আমরা শুনেছি। এজিএমে হাতজোড় করে বলেছি, দোহাই ভাঙা গাড়ির ব্যবসা করবেন না, ড্যামেজড গাড়ি এনে ক্রেতাদের প্রতারিত করবেন না।
বারভিডার ৫শ’ সদস্য আছেন সবাইকে কি আমরা নিয়ন্ত্রণ করতে পারি?’ জাপানে গাড়ি অকশনের আগে রফতানিকারকরা সার্ভে করেন। এরপর গাড়ির মান অনুযায়ী মূল্য নির্ধারণ করেন। এতে একই মডেল ও সনের গাড়ির বিভিন্ন মূল্য হতে পারে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের নথিপত্র অনুযায়ী এটা স্বীকৃত যে, জাপান ও বিভিন্ন দেশ থেকে আমদানি করা ব্র্যান্ড নিউ কারে ব্যাপক আন্ডারইনভয়েসিং হচ্ছে। কিন্তু পদ্ধতিগত ক্রটির কারণে তা ধরা পড়ছে না। এ নিয়ে অনেক তদন্ত হয়েছে।
জানা গেছে, নতুন গাড়ির আমদানিকারকরা সিসিভেদে ইনভয়েসে যে মূল্য উল্লেখ করে তা প্রকৃত মূল্যের চেয়ে অনেক কম। কোনো কোনো ক্ষেত্রে ৩০ থেকে ৫০ শতাংশ মূল্য কম দেখানো হয়। বিশেষ করে উচ্চ সিসির বিলাসবহুল প্রাডো, পাজেরো, ক্লুগার, হ্যারিয়ার, হাইলাক্স, সিআরভি, র্যাভ-৪ গাড়ি আমদানির ক্ষেত্রে ব্যাপক আন্ডারইনভয়েসিং হচ্ছে বলে স্বীকার করেছেন কাস্টমস কর্তৃপক্ষ।
কিন্তু এসব ক্ষেত্রে তাদের তেমন একটা করণীয় নেই বলে জানা গেছে। ২০০৯ সালে ডিজিএফআইয়ের এক প্রতিবেদনে তথ্যপ্রমাণ দিয়ে দাবি করা হয়েছে, আমদানি করা নতুন গাড়ি প্রকৃত মূল্যের প্রায় অর্ধেক ঘোষণা দিয়ে খালাস নেয়া হচ্ছে। কিন্তু এরপর প্রতিবেদনের সুপারিশ খুব একটা আমলে নেয়নি এনবিআর।