DMCA.com Protection Status
title="৭

বন্ধু তত্ত্ব’ ও রেলের জমিঃ এবার ব্যাখ্যা দিতে বাধ্য হলেন আল্লামা শফী

image_87486_0চট্টগ্রামের ঐতিহাসিক লালদীঘির ময়দানে অনুষ্ঠিত শানে রেসলাত সম্মেলনে দেয়া ‘বন্ধু তত্ত্ব’ নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে নেতিবাচক সংবাদ পরিবেশনের ঘটনায় হেফাজত ইসলামের পর এবার দলটির আমির আল্লামা আহমদ শফীর নিজের অবস্থান ব্যাখ্যা করেছেন।



সোমবার রাতে গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে আহমদ শফী এ ব্যাখ্যা দেন। এসময় তিনি রেলের জায়গা দখল ও পুত্র আনাস মাদানী সর্ম্পকে ওঠা অভিযোগ সম্পর্কেও ব্যাখ্যা দিয়েছেন।



গণমাধ্যমে পাঠানো বিবৃতিতে আহমদ শফী বলেন, ‘হেফাজতে ইসলাম সম্পূর্ণ অরাজনৈতিক ঈমান-আক্বিদা ভিত্তিক একটি আধ্যাত্মিক সংগঠন। ইতোপূর্বেও বিভিন্ন বক্তব্য ও বিবৃতির মাধ্যমে আমরা বারবারই স্পষ্ট করেছি যে, ইসলাম ও মুসলিম জীবনধারা নিরাপদ রাখা এবং সঠিক পথে পরিচালিত করার লক্ষ্যে কাজ করাই এই সংগঠনের মূল লক্ষ্য।’



তিনি বলেন, ‘হেফাজতে ইসলাম কখনোই যেমন কারো ক্ষমতায় যাওয়ার সিঁড়ি হিসেবে ব্যবহৃত হবে না, তেমনি কাউকে ক্ষমতাচ্যুত করার জন্যও কাজ করবে না। তবে যে বা যারাই ক্ষমতায় থাকুক, ইসলামের বিপক্ষে অবস্থান নিলে যেমন হেফাজতের আন্দোলনে স্বস্তির কারণ নেই, তেমনি ইসলামের পক্ষে যে বা যারাই কাজ করবেন, তারা হেফাজতের আন্দোলনের কারণে উপকৃত হবেন।’



বিবৃতিতে হেফাজত আমীর আরো বলেন, ‘হেফাজতে ইসলামের মূল স্লোগান হচ্ছে, দ্বীনি ও ইসলামী একটি অরাজনৈতিক সংগঠন। হেফাজতে ইসলাম প্রতিষ্ঠাকাল থেকে এ পর্যন্ত কখনো কোন রাজনৈতিক বা কোন দলের পক্ষে বা বিপক্ষে যায়, এমন কোন দাবি বা কর্মসূচি দেয়নি। আমাদের দাবি ও প্রতিবাদ কর্মসূচি একান্তই ঈমান-আক্বীদা, ইসলাম ও নৈতিকতা সংশ্লিষ্ট। আমাদের এই অবস্থানের কোনই হেরফের হয়নি।’



বিবৃতিতে আহমদ শফী বলেন, ‘বর্তমানে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে পারস্পরিক দূরত্ব বেড়েই চলেছে। কিন্তু হেফাজতে ইসলামের গঠনতান্ত্রিক বাধ্যবাধকতা এবং আমাদের অরাজনৈতিক নীতি-আদর্শের কারণে সরাসরি সরকারের পক্ষে বা বিপক্ষে অবস্থান নেয়ার কোনই সুযোগ নেই। আমাদের বিরোধ কেবল ইসলাম ও মুসলমানদের বিরুদ্ধে যারা অবস্থান নিয়েছে, তাদের ও তাদের সহযোগী নাস্তিক্যবাদের বিরুদ্ধে।’



তিনি বলেন, ‘লালদিঘীর শানে রেসালাত সম্মেলনে দেশ ও জাতির প্রতি আমি এই বার্তাটাই দিতে চেয়েছি যে, কোন বিশেষ রাজনৈতিক দলের সাথেই হেফাজতে ইসলামের শত্রুতা নেই। মুসলমান হিসেবে আমরা সকলেই ভাই ভাই। ইসলাম ও মুসলিম বিদ্বেষী যে কোন অপতৎপরতা ও নাস্তিক্যবাদের বিরুদ্ধে আমাদের সকলেরই ঐক্যবদ্ধ অবস্থান থাকা চাই।’



যারা বিভিন্ন ভাবে অভিযোগ করতে চায় যে, আমরা বিশেষ কোন দলের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করতে চাচ্ছি, আমি শুধু তাদের ভুলটা সংশোধন করে হেফাজতে ইসলামের অরাজনৈতিক অবস্থানটা পরিষ্কার করেছি। ঈমান-আক্বিদা ভিত্তিক অরাজনৈতিক শান্তিপূর্ণ একটা আধ্যাত্মিক সংগঠন হিসেবে বর্তমানে দেশের রাজনৈতিক অস্থিতিশীল পরিস্থিতিতে ১৩ দফা নিয়ে মাঠ পর্যায়ে বড় ধরণের কর্মসূচী দেওয়ার পরিবেশ বর্তমানে নেই বলেও বিবৃতিতে শফী জানান।



বিবৃতিতে হেফাজত আমীর আরো বলেন, ‘হেফাজতে ইসলাম প্রতিষ্ঠা লগ্ন থেকেই ইসলাম বিদ্বেষী নাস্তিক্যবাদসহ সকল কুফরী, শিরকী ও ধর্মীয় কুসংস্কারের বিরুদ্ধে যেমন সোচ্চার ভূমিকা পালন করে এসেছে, বর্তমানেও তা চালিয়ে যাচ্ছে। বরং আগের যে কোন সময়ের চেয়ে ওলামা-মাশায়েখ ও তৌহিদী জনতার ঐক্যবদ্ধ অবস্থান আরো দৃঢ় হয়েছে এবং আমাদের কাজের পরিধিও অনেক বেড়েছে। সুতরাং যে বা যারাই হেফাজতের নেতৃত্বের বিরুদ্ধে নানা কুৎসা রটনা করতে চায়, বুঝতে হবে তারা কার্যত ওলামা-মাশায়েখ ও তৌহিদী জনতার মধ্যে বিভেদ তৈরী করে নাস্তিক্যবাদের পক্ষেই কাজ করে যাচ্ছে।’



চিহ্ণিত দুয়েকটি পত্রিকা বারবার বার্ধক্যতার কারণে আমার ছেলে মাওলানা আনাস মাদানীর প্রতি আমার দুর্বলতাসহ নানা বিষোদগার মূলক কাল্পনিক মনগড়া আভিযোগ রটাচ্ছে উল্লেখ করে শফী বলেন, ‘আমি স্পষ্ট করে বলতে চাই, হেফাজতে ইসলাম ও দারুল উলূম হাটহাজারী মাদ্রাসার কোন কিছুই গোপনভাবে পরিচালিত হয় না। যে কোন সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় সকলের মতামত নিয়ে সংখ্যাগরিষ্ঠের সমর্থনের ভিত্তিতেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়ে থাকে। একজন পিতা হিসেবে মাওলানা আনাস মাদানীর প্রতি যতটা স্নেহ থাকা উচিত, তাই আছে। এর বাইরে দারুল উলূম হাটহাজারী মাদ্রাসার প্রাতিষ্ঠানিক ও হেফাজতে ইসলামের সাংগঠনিক যে কোন সিদ্ধান্ত গ্রহণে আমার পুত্র হিসেবে মাওলানা আনাস মাদানীর বিশেষ কোন কর্তৃত্ব নেই।’



রেলওয়ের জায়গা নিয়ে যে বা যারা অপপ্রচার চালাচ্ছে, সেটাও সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন উল্লেখ করে শফী বলেন, ‘বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ ইসলামী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান দারুল উলূম হাটহাজারী মাদ্রাসার উত্তরোত্তর ছাত্র সংখ্যার বৃদ্ধির কারণে আবাসন, পানি ও হাজার হাজার ছাত্রের বসবাস ও সুস্থ পরিবেশ নিশ্চিত করার স্বার্থেই হেফাজতের আন্দোলন শুরু হওয়ার অনেক আগে থেকেই মাদ্রাসা সংলগ্ন বাংলাদেশ রেলওয়ের অনাবাদি ভূমি লিজ সূত্রে বরাদ্দ পাওয়ার চেষ্টা চালিয়ে আসছে। এর সাথে হেফাজতের ১৩ দফা আন্দোলনকে জড়িয়ে ফেলা শুধু চরম মিথ্যাচারই নয়, বরং এটা হেফাজতে ইসলাম ও দারুল উলূম হাটহাজারী মাদ্রাসার বিরুদ্ধে বিদ্বেষ ও শত্রুতা ছাড়া আর কিছু নয়। রেলওয়ের জায়গা বরাদ্দের আবেদন করা হয়েছে দারুল উলূম হাটহাজারী মাদ্রাসার নামে। কিন্তু এর সঙ্গে ব্যক্তিগতভাবে আমাকে জড়িয়ে সংবাদ প্রচারের কোন যুক্তি নেই। এ ধরণের মিথ্যা সংবাদ ও অপপ্রচারের আমি তীব্র প্রতিবাদ ও নিন্দা জানাচ্ছি।’



বিবৃতিতে হেফাজত আমীর আল্লামা শাহ আহমদ শফী আরো বলেন, ‘সত্যকে আড়াল করে চরম মানহানিকর ও মিথ্যা সংবাদ পরিবেশনা দায়িত্বশীল কোন সংবাদ মাধ্যমের কাজ হতে পারে না। সুতরাং এ ব্যাপারে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বনসহ গণমাধ্যম সংশ্লিষ্ট সকলের সহযোগিতা কামনা করছি।’

Share this post

scroll to top
error: Content is protected !!