ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের হাতে গড়া বিএনপি আজ এক ক্রান্তি কাল অতিক্রম করছে।জন্মলগ্ন থেকে এপর্যন্ত বিএনকে বেশ কয়েকবার প্রচন্ড ধাক্কা ও চরম বৈরী রাজনৈতিক পরিস্থিতির মোকাবেলা করতে হয়েছে।
আমাদের অবশ্যই অনুধাবন করতে হবে যে বিএনপি বরাবরই একটি সমর্থক এবং ভোটার নির্ভর দল,আওয়ামী লীগ কিংবা জামাতের মতো কর্মী নির্ভর দল নয়।তাই আপাতঃ দৃষ্টিতে রাজপথে ও কর্মী সমাগমে বিএনপিকে যথেষ্ট শক্তিশালী মনে না হলেও তাদের বিপুল নিরব সমর্থকদের উপেক্ষা করাটা হবে অবিবেচনা প্রসূত কাজ।
বিএনপি কে উপলব্ধি করতে হবে বাংলাদেশের নারী ভোটারদের অধিকাংশই বিএনপি তথা বেগম খালেদা জিয়ার সমর্থক-ভোটার।তাই প্রচলিত ভোটের সমীকরন এক্ষেত্রে অনুসরন করাটা বুদ্ধিমানের কাজ হবে না।এমন কোন দল বা প্লাটফরম যাদের নীতি ও আদর্শ বিএনপির উদার মুসলিম গনতান্ত্রীক আদর্শের পরিপন্থি না হয়,তাহলে বিএনপি এই বিশাল নারী ভোটারদের সমর্থন হারাতে পারে।
বিএনপির উচিৎ হবে সন্তপর্নে দল গোছানো এবং নিজের গনতান্ত্রীক চরিত্র অক্ষুন্ন রাখা।এক্ষেত্রে আওয়ামী লীগের অব্যাহত হীন উদ্দেশ্য প্রনোদিত উস্কানী এবং ক্রমাগত দলন-পিড়ন নীতিতে মনোবল হারানো নেতা কর্মীদের ন্যায় বিচারের আলোকে উদ্ভূদ্ধ রাখাই হবে বিএনপির প্রধান কাজ।অদক্ষ এবং স্বার্থপর নেতাদের বদলে পরিক্ষিত এবং তরুন নেতৃত্ব কে সামনে নিয়ে আসাই হবে দলের জন্য অতীব জরুরী
এমতাবস্থায় ঠিক যেনো হঠাৎ আলোর ঝলকানির মতো বদলে যাওয়ার জন্য অপেক্ষা করছে বিএনপি। এরইমধ্যে স্পষ্ট হয়ে উঠেছে যে, বিএনপিকে নিজেদের রাজনীতির খেলা গুছিয়ে আনতে কিছুটা সময় অপেক্ষা করতে হবে। এই অপেক্ষার সময়টাতে বিএনপিকে কৌশলবিহীন, এলোমেলো মনে হলেও দলটির অভ্যন্তরে চলতে থাকবে পরিবর্তন ও পরিবর্ধনের কর্মযজ্ঞ।
পরিবর্তন ও পরিবর্ধনের মধ্য দিয়ে ‘দলের ভেতরে সংস্কারের’ কঠিন অগ্নিপরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার জন্য অপেক্ষা করছে বিএনপি। আর, বিএনপির ভেতরে পরিবর্তনের অগ্নিপরীক্ষাকে কঠিন করে দিচ্ছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। আওয়ামী লীগ একদিকে বিএনপির বর্তমান নেতৃত্বের একটি অংশকে নিজেদের প্রভাব বলয়ের ভেতরে নিয়ে এসে রাজনীতি করার চেষ্টা করছে।
অন্যদিকে, এইভাবে চেষ্টা করতে গিয়ে নেতৃত্বের ওই অংশটিকেই আবারও নিজেদের থেকে দূরে ঠেলে দিচ্ছে। এইভাবে ‘এক পা আগানো ও দুই পা পেছানোর’ আওয়ামী লীগের খেলা কিছুটা সময় জুড়ে চলতে থাকবে। একারণেই,বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ রাজনীতিতে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সাথে বিএনপির নেতাদের আঁতাতের আরও ষড়যন্ত্র তত্ত্ব শুনতে পাবে বাংলাদেশ। তবে, আপাতত আওয়ামী লীগের ‘এক পা আগানো ও দুই পা পেছানোর’ কৌশল গ্রহণ করা ছাড়া আর কোন গত্যন্তরও নাই। আর এইখানেই লুকিয়ে আছে বিএনপির রাজনীতির জায়গা।
খালেদা জিয়ার নেতৃত্ব বিচ্ছিন্ন রেখে বিএনপির সংস্কারপন্থী নেতাদের নিয়ে রাজনীতির ভিন্ন স্রোত তৈরী কত কঠিন তা এরই মধ্যে প্রমাণ হয়েছে। একারণেই, এই পথে আওয়ামী লীগ কেবল ‘এক পা’ই এগুতে পারবে। অর্থাৎ আওয়ামী লীগ বা অন্যকোন মহলের এমন চেষ্টার আশু ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল নয়। এর বিপরীতে গিয়ে, বিএনপির সংস্কারপন্থী বা অন্য যে কোন নেতাদের নিরবিচ্ছিন্ন স্বাধীনতার বিপদও হিসাবে রাখছে আওয়ামী লীগ। ফলে, আওয়ামী লীগ আইন, বিচার, হামলা, মামলা বা অন্য কোন পদ্ধতিতে বিএনপি নেতাদের দমনের কৌশলটিও বাস্তবায়ন করতে থাকবে। ফলে, বিএনপি নেতাদের কোন অংশকে নিয়েই আপাতত দীর্ঘকালীন কোন নকশা বাস্তবায়ন করতে পারবে না আওয়ামী লীগ।
এইভাবে এক পা এগুতে দিয়ে আর দুই পা পিছিয়ে দেওয়ার খেলায় আওয়ামী লীগকে যত সময় বেঁধে রাখা যাবে ততই তুলনামূলকভাবে নির্বিঘ্নে দল গোছানর সুযোগ পাবে বিএনপি। একইভাবে, বিএনপির ভেতরে খালেদা জিয়ার নেতৃত্বকে আরও সংহত করার পথও সহজ করে দিচ্ছে আওয়ামী লীগ। খালেদা জিয়া দলের ভেতর নিজের সমালোচক অংশের মধ্যেও নেতৃত্ব পুনঃপ্রতিষ্ঠা করতে পারবেন।
এইভাবে, বিএনপির নেতৃত্বের একটি অংশের ওপর আওয়ামী লীগের দ্বৈতপ্রভাবকে ঠিক সময়ে কাজে লাগাতে পারলে তা খালেদা জিয়ার জন্য সুফল বয়ে আনতে পারে। কিন্তু তা করতে ব্যর্থ হলে সম্পূর্ণ নতুন পথে হাটতে পারে বিএনপি, এমনকি দেশের রাজনীতির ভবিষ্যৎ।
বিএনপির প্রতিটি নেতা কর্মীকে মনে রাখতে হবে বাংলাদেশের অসহায় জনগনকে গনতন্ত্র এবং সুশাসনের বাংলাদেশ ফিরিয়ে দিতে তাদের বিকল্প নেই এবং জনগন একদলীয় আওয়ামী শাসনের স্টিমরোলারের পেষন থেকে উদ্ধার পেতে বিএনপির দিকেই তাকিয়ে আছে।