দৈনিক প্রথম বাংলাদেশঃ বন্দর নগরী চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী আবদুল জব্বারের বলী খেলার মূল পর্ব অনুষ্ঠিত হবে আগামী শুক্রবার। বলী খেলাকে ঘিরে লালদীঘি ও এর আশপাশে বসে বিস্তীর্ণ লোকজ পণ্যের মেলা। ঐতিহ্য অনুযায়ী লোকজমেলা অনুষ্ঠিত হয় খেলার আগের দিন থেকে শুরু হয়ে পরের দিন পর্যন্ত। ১৯০৯ সালে শুরু হওয়া বলী খেলার এটি ১০৫তম আসর।
লালদীঘি মাঠে অগণন উৎসুক জনতার উপস্থিতিতে প্রতিপকে কুপোকাত করে নির্বাচিত হবেন বলী খেলার এবারের আসরের নতুন নায়ক। বলী খেলাকে কেন্দ্র করে লালদীঘি ও আশপাশের এলাকায় এরই মধ্যে লোকজ পণ্যের পসরা সাজাতে শুরু করেছেন দোকানিরা। ঐতিহ্যবাহী লোকজ মেলা চলবে আগামী শনিবার পর্যন্ত। চট্টগ্রাম মহানগরীর বকশিরহাট এলাকার বদরপাতির আবদুল জব্বার সওদাগর বাংলা ১৩১৬ সনের ১২ বৈশাখ বলী খেলার সূচনা করেছিলেন ব্রিটিশ শোষণের বিরুদ্ধে এখানকার যুবকদের সংগঠিত করার ল্েয। তার সে ঐতিহ্যের ধারাবাহিকতা আজো রা করে চলেছে উত্তরসূরিরা।
প্রতি বছরই চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি, বান্দরবান, ফেনীসহ বিভিন্ন জেলা থেকে বলীরা (কুস্তিগির) এসে তাদের শক্তি ও কৌশলের পারঙ্গমতা দেখিয়ে মুগ্ধ করেন এখানকার দর্শকদের। বলী খেলার জন্য ঐতিহ্যবাহী লালদীঘি মাঠের এক পাশে তৈরি করা হয় কুস্তির রিং। এই রিংয়ে শক্তি পরীায় নামবেন বলীরা। ঐতিহ্যবাহী আবদুল জব্বারের বলী খেলাকে কেন্দ্র করে লালদীঘি ও এর আশপাশের প্রায় এক বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে সৃষ্টি হয় অন্যরকম এক দৃশ্য।
আন্দরকিল্লা মোড় থেকে শুরু। এরপর জেল রোড, কোর্ট রোড, লয়েল রোড, পুরনো গির্জা, কেসি দে রোড, শহীদ মিনার এলাকা, কোতোয়ালি মোড়সহ আশপাশের সব এলাকা চলে যায় দোকানিদের দখলে। রাস্তা, ফুটপাথ, আইল্যান্ড সব জায়গায় বসে নানা পণ্যের পসরা। বিভিন্ন ধরনের হস্তশিল্প, বেতের ফার্নিচার, মৃৎশিল্প, শিশুদের নানা ধরনের খেলনা, বাহারি চুড়ি, হাতপাখা, শীতলপাটি, গৃহস্থালীসামগ্রী, প্লাস্টিকসামগ্রী, কুটির শিল্প, মুড়ি-মুড়কিসহ নানা খাদ্যদ্রব্য, দা-ছুরি, চেয়ার-টেবিল, খাট, আলনা, বিভিন্ন ফলদ ও বনজ উদ্ভিদের চারাসহ সব ধরনের সামগ্রী নিয়ে জড়ো হচ্ছেন দেশের বিভিন্ন স্থানের উৎপাদক ও বিক্রেতারা। ঐতিহ্য অনুযায়ী বলী খেলার আগের দিন ও পরদিনসহ তিন দিন ধরে চলে বৈশাখী মেলা।
চট্টগ্রাম মহানগরী ছাড়াও জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে নানা বয়সী নারী-পুরুষ প্রতি বছর মেলায় আসেন পছন্দের জিনিসপত্র কিনতে। আবার অনেকে আসেন কৌতূহলের বশে। তীব্র খরতাপ উপো করে লালদীঘি মাঠে প্রতি বছর অগণন উৎসুক জনতা হাজির হন বলীদের শারীরিক কসরত ও মল্লযুদ্ধ প্রত্য করতে। প্রথমে চলে সাধারণ প্রতিযোগিতা। পরে চ্যালেঞ্জ রাউন্ডে অনুষ্ঠিত হয় মূল প্রতিযোগিতা। সাধারণ পর্বে অংশ নেন সবাই। এরপর গতবারের চ্যাম্পিয়ন এবং রানার আপের সাথে চ্যালেঞ্জ রাউন্ডে বলীদের অংশ নেয়ার নিয়ম রয়েছে। উল্লেখ্য, গতবারের ১০৪তম আসরে রামুর দিদার বলী চ্যাম্পিয়ন ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ার অলি বলী রানার আপ হন।