অনির্বাচিত সরকারের শাসনাধীনে দেশঃ মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস, গনতন্ত্র, মানবাধিকার এবং সার্বভৌমত্ব রক্ষায় জাতির করনীয়’
লন্ডন:গত ২০শে এপ্রিল পূর্ব লন্ডনের টাওয়ার হেমলেটস্থ ইউনাইট কমিউনিটি সেন্টারে ‘বাংলাদেশ ডেমোক্রেসী ফোরাম’, ‘দূঃশাসন ও আগ্রাসন বিরোধী আন্দোলন’ এবং ‘বাংলাদেশ ওয়াচ’ নামক ৩টি সংগঠনের সম্মিলিত উদ্দোগে বর্তমান বাংলাদেশের সংকটময় পরিস্থিতির aউপর একটি আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। ‘অনির্বাচিত সরকারের শাসনাধীনে দেশঃ মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস, গনতন্ত্র, মানবাধিকার এবং সার্বভৌমত্ব রক্ষায় জাতির করনীয়’ শীর্ষক এ আলোচনা সভায় কমিউনিটির বিশিষ্ট ব্যক্তিগন বক্তব্য রাখেন। অতি শীঘ্রই গণআন্দোলনের মাধ্যমে এ দেশবিরোধী সরকারের পতন ঘটিয়ে জনগণের ভোটে নির্বাচিত একটি গণতান্ত্রিক সরকার ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার জন্য বক্তারা দেশবাসীর প্রতি আহবান জানান।
বাংলাদেশ ডেমোক্রেসী ফোরামের আহবায়ক মেজর (অবঃ) ফারুক আহমেদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এ সভায় স্বাগতঃ বক্তব্য রাখেন-বাংলাদেশ ওয়াচের সভাপতি মেজর (অবঃ) সিদ্দিক এবং ‘দূঃশাসন ও আগ্রাসন বিরোধী আন্দোলনের সভাপতি- এমএস আহমেদ আজাদ; উপস্থাপন করেন- এডভোকেট আবুল হাসনাত। বক্তারা বলেন, বাকশালের চেতনাধারী বর্তমান অনির্বাচিত সরকারের হাতে জাতি এক ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে। দেশে গনতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত সরকার নেই, আইনের শাসনের অনুপস্থিতিতে চলছে-বিচারবহির্ভূত হত্যা ও গুম; বিরোধী রাজনীতিক নেতা-কর্মীদের উপর চলছে নিপীড়ন ও গণহত্যা; রাজনৈতিক কর্মকান্ড পরিচালনার উপর জারী করা হচ্ছে কঠোর নিষেধাজ্ঞা; সংবাদকর্মী ও মিডিয়ার উপর চলছে হামলা ও সেন্সরশিপ; আমার দেশ সম্পাদক মাহমুদুর রহমানকে এক বছরেরও অধিক সময় ধরে বন্দী করে রাখা হয়েছে;
আমার দেশ, দিগন্ত টিভি ও ইসলামী টিভি বন্ধ করে রাখা হয়েছে যথাক্রমে স্কাইপ কেলেংকারীর সংবাদ ও শাপলা চত্বরে আওয়ামী বাহিনীর গণহত্যার সংবাদ প্রচার করার দায়ে; দেশের অভ্যন্তরীন বিষয়ে সরাসরি হস্তক্ষেপ করছে প্রতিবেশী ভারত, তারা প্রকাশ্যে বলে দিচ্ছে – কোন্ দল ক্ষমতায় থাকা উচিত; সীমান্তে প্রতিনিয়তঃ চলছে বাংলাদেশী নাগরিকদের উপর ভারতীয় বিএসএফ কর্তৃক নির্বিচারে গুলি, হত্যা, অপহরন ও ধর্ষন; দেশের খনিজ সম্পদের উপর প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে বিদেশী দখলদারিত্ব; দেশের মানুষের কোন অনুমতি ছাড়াই বাংলাদেশের ভূমির উপর দিয়ে ভারতকে করিডোর দেয়া হচ্ছে অথচ- ভারতের সাথে আন্তর্জাতিক নদীসমূহের পানি বন্টন, সীমান্তে হত্যা, বানিজ্য ঘাটতি, ছিটমহল হস্তান্তর, পার্বত্য উপজাতি সন্ত্রাসীদেরকে ভারত কর্তৃক সহায়তা দান- ইত্যাদি বহু অমিমাংসিত বিষয়ের সুরাহা করা হচ্ছেনা। মুক্তিযুদ্ধের ঘোষনা বিষয়ে জাতীয় সংসদকে ব্যবহার করে সরকার জাতিকে মিথ্যা ইতিহাসের সবক দিয়ে আসছে।
যথাযথ প্রমান সহকারে একথা দিবালোকের মত সত্য যে- ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চে পশ্চিম পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী এ দেশের মানুষের উপর রাতের আধারে সশস্ত্র আক্রমন পরিচালনা করলে আত্মসমর্পনকারী ও পলায়নপর রাজনৈতিক নেতৃত্ব সেদিন দিশেহারা জাতিকে দিক্ নির্দেশনা দিতে ব্যর্থ হয়েছিল; সে অবস্থায় মেজর জিয়া সবচেয়ে কঠিন ঝুঁকি নিয়ে চট্টগ্রাম সেনানিবাসে প্রথম সশস্ত্র বিদ্রোহের সূচনা করেন এবং পরদিন ২৬শে মার্চে চট্টগ্রামের কালুর ঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে স্বাধীনতার ঘোষনা দেন।
স্বহস্তে লিখিত সে ঘোষনা পত্রে মেজর জিয়া নিজেকে বাংলাদেশের অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি হিসেবে ঘোষনা দিয়ে পৃথিবীর অন্যান্য দেশের প্রতি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকে সমর্থন দেয়ার আহবান জানান। সম্প্রতি লন্ডনে বিএনপি’র সিনিয়র সহসভাপতি তারেক রহমান মেজর জিয়া কর্তৃক স্বাধীনতার ঘোষনা দেয়ার বিষয়টির স্মৃতিচারণ করলে বর্তমান অবৈধ সরকারের কিছু অনির্বাচিত সাংসদ ও মন্ত্রী সংসদে খেস্তিখেউর করে। কিন্তু তারা যুক্তি-প্রমান দিয়ে নিজেদের দাবী প্রতিষ্ঠার সাহস দেখাতে ব্যর্থ হয়। বক্তারা বলেন যে, মুক্তিযুদ্ধে এবং পরবর্তীতে বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় শহীদ জিয়ার অবিস্মরণীয় ভূমিকাকে এ সরকার মুছে ফেলতে পারবে না এবং বাকশালের মাধ্যমে বিলুপ্ত আজকের আওয়ামী লীগ তার পূণরুজ্জীবন লাভ করেছিল- শহীদ জিয়ার বহুদলীয় গণতন্ত্র তথা ৫ম সংশোধনী প্রণয়নের মাধ্যমেই।
মুক্তিযুদ্ধের প্রারম্ভেই ভারতে নিরাপদ আশ্রয়গ্রহনকারী এবং ১৫ই আগষ্টের পর শেখ মুজিবের হত্যাকান্ডের বিরুদ্ধে প্রতিবাদহীন কাপুরুষোচিত ভূমিকা পালনকারী এসব অনির্বাচিত মন্ত্রীদের মুখে জাতি মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস শিখবেনা বলে- বক্তারা মন্তব্য করেন। সর্বশেষে, বাংলাদেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা, মানবাধিকার রক্ষা, জাতীয় সংস্কৃতি সংরক্ষন, সার্বভৌমত্ব রক্ষা তথা একটি স্বাধীন ও মর্যাদাসম্পন্ন জাতি হিসেবে টিকে থাকার জন্য বাংলাদেশে অচিরেই জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে একটি জনপ্রতিনিধিত্বশীল সরকার প্রতিষ্ঠার উপর বক্তারা বিশেষভাবে গুরুত্বারোপ করেন।
বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন- বিএনপি’র আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক মাহিদুর রহমান, অধ্যাপক মামনুন মোর্শেদ, বিশিষ্ট কলামিষ্ট জগলুল হোসেন, সম্পাদক চৌধুরী মোহাম্মদ ফারুক, মাওলানা শোয়েব আহমেদ, অধ্যাপক আব্দুল কাদের সালেহ, ব্যারিষ্টার তমিস উদ্দীন, ব্যারিষ্টার শাজাহান, ব্যারিষ্টার হামিদুল হক আফিন্দি, ব্যারিষ্টার মুজিবুর রহমান, ব্যারিষ্টার ইকবাল হোসেন, ব্যারিষ্টার আলীমূল হক লিটন, কবি আবু সুফিয়ান, মোক্তাদির আহমেদ, ব্যারিষ্টার সগীর আহমেদ, এডভোকেট নাসরীন আক্তার, মোঃ সদরুজ্জামান খান, হেলালুর রহমান চৌধুরী, কাউন্সিলর জয়নাল চৌধুরী, অঞ্জনা আলম,মহিলা নেত্রী কুমকুম হক এবং ফেরদৌসী রহমান সহ অন্যান্য বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ।