রাস্তায় নামার প্রথম দিনেই ব্যাপক সাড়া পেয়েছে নতুন আমদানি করা হলুদ ট্যাক্সিক্যাব। তবে এ যানবাহন সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে। ভাড়া শুনেই ভড়কে যাচ্ছেন তারা। অন্যদিকে বিত্তবানদের বেশ আগ্রহ এ ট্যাক্সিক্যাবে। প্রাইভেটকার রেখে অনেকে এই ক্যাবে চড়ে গন্তব্যে যাচ্ছেন। ক্যাব থেকে নেমে স্বস্তিও প্রকাশ করছেন তারা।
রাজধানীর রাস্তায় নতুন হলুদ ট্যাক্সিক্যাব নামার পর জনগণের আগ্রণের পার্থক্যটা এমনটাই বলে জানিয়েছেন তমা কনস্ট্রাকশনের ডেপুটি ম্যানেজার জুনায়েদ আহমেদ। এই প্রতিষ্ঠানটিই ট্যাক্সিক্যাবগুলোর একটা অংশ তত্ত্বাবধান করছে।
বিকেলে জুনায়েদ আহমেদ বলেন, ‘আমরা মনে করেছিলাম নতুনভাবে আমদানি করা ট্যাক্সিক্যাবগুলোতে যাত্রী সাধারণের তেমন একটা সাড়া পাওয়া যাবে না। তবে রাস্তায় নামানোর প্রথম দিনে (মঙ্গলবার উদ্বোধনের পর রাত ১০টা পর্যন্ত) একটি ট্যাক্সিক্যাব ১০ থেকে ১৫টি পর্যন্ত ট্রিপ দিয়েছে। বুধবার সকাল থেকে একটি গাড়িও বসে নেই। সবগুলো রাস্তায় যাত্রী পারাপারে ব্যস্ত। এতেই বুঝা যায় মানুষ একে ব্যাপকভাবে গ্রহণ করেছে।’
এসব ক্যাবের তো ভাড়া অনেক বেশি। তাহলে সর্বসাধারণের কেমন সাড়া পাচ্ছেন- এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমাদের ট্যাক্সিক্যাবগুলোর বেশি চাহিদা গুলশান, বনানী ও ধানমণ্ডির দিকে। ওই এলাকার মানুষগুলো একটু বেশি সচ্ছল। তাই ট্যাক্সিক্যাবের ভাড়ায় তারা অসন্তুষ্ট নন। তবে ভাড়ার কারণে সাধারণ নিম্নআয়ের মানুষ ট্যাক্সিক্যাবে উঠতে চান না।’
বেশ কিছু নিম্ন ও নিম্ন মধ্যবিত্ত শ্রেণীর মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ট্যাক্সিক্যাবগুলোর ভাড়া তাদের নাগালের বাইরে। তাই তারা এসবে উঠছেন না।
মনির উদ্দিন নামে মতিঝিলের এক সাধারণ যাত্রী বলেন, ‘টেলিভিশনে শুনে ট্যাক্সিক্যাবগুলোতে উঠার জন্য আমার একটু আগ্রহ বেশিই ছিল। কিন্তু এর যে সিস্টেম তা দেখে মনে হচ্ছে এতে একবার চড়লে মোটামুটি পকেট খালি হয়ে যাবে। আমরা যারা সাধারণ যাত্রী তাদের এতো বিলাসিতা করার সুযোগ নেই। বিলাসী ও ধনাঢ্য ব্যক্তিদের জন্যই এ ট্যাক্সিক্যাব।’
নিজাম উদ্দিন নামে এক ব্যাংক কর্মকর্তা বলেন, ‘যে কোনো উদ্যোগের ভালোমন্দ সবই থাকে। যাই হোক আমার কাছে ট্যাক্সিক্যাব সার্ভিসটা ভালো লেগেছে। তাই আজ বাসা থেকে প্রথম ট্যাক্সিক্যাব যোগে অফিসে এসেছি। ভাড়া কিছুটা বেশি হলেও সার্ভিসটা আরামদায়ক।’
গতকাল মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নতুন আমদানি করা হলুদ ট্যাক্সিক্যাবের উদ্বোধন করেন। সর্বমোট ৬৫০টি ক্যাবের মধ্যে প্রথম অবস্থায় রাজধানী ঢাকায় ৪৬টি ট্যাক্সিক্যাব নামানো হয়েছে। এর মধ্যে সেনাবাহিনী কল্যাণ ট্রাস্টের তত্ত্বাবধানে থাকবে ২৭টি এবং বাকি ১৯টি গাড়ি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান তমা কনস্ট্রাকশন তত্ত্বাবধান করবে। বাকিগুলো পর্যায়ক্রমে রাস্তায় নামানো হবে।
এছাড়া আগামী জুনের মধ্যে রাজধানীতে ৫০০ এবং আগামী জুলাই মাসে চট্টগ্রামে ১৫০ ট্যাক্সিক্যাব নামনো হবে। এর মধ্যে সেনাকল্যাণ ট্রাস্ট আমদানি করবে ৪০০ এবং তমা গ্রুপ আনবে ২৫০ ট্যাক্সিক্যাব।
এ ট্যাক্সিক্যাবের প্রথম দুই কিলোমিটার ভাড়া ৮৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে যানজট বা অন্য কারণে দেরি করলে প্রতি ২ মিনিট ওয়েটিং টাইমের জন্য সাড়ে ৮ টাকা এবং মোবাইলে কল করে আনলে অতিরিক্ত ২০ টাকা ভাড়া দিতে হবে।
এর আগে ২০১০ সালে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ট্যাক্সির ভাড়া বৃদ্ধি করে যোগাযোগ মন্ত্রণালয়। সে সময় ট্যাক্সির ন্যূনতম ভাড়া ছিল ৬০ টাকা, যা প্রথম দুই কিলোমিটার বা তার কম পথ ভ্রমণের জন্য দিতে হতো। আর পরবর্তী প্রতি কিলোমিটারের ভাড়া ছিল ১৫ টাকা। ওয়েটিং চার্জ ছিল প্রতি দুই মিনিটের জন্য ৩ টাকা ৭৫ পয়সা। অর্থাৎ যানজটে বা অন্য কোনো কারণে পথে আটকে থাকলে ৮ মিনিটে এক কিলোমিটারের ভাড়া (১৫ টাকা) দিতে হত। আর টেলিফোনে বাসায় ডাকলে অতিরিক্ত দিতে হত ২০ টাকা।