দৈনিক প্রথম বাংলাদেশ বিশ্লেষনঃ তিস্তায় প্রাপ্য পানি দিতে ভারতের উপর চাপ তৈরি ও দলকে আবারো আন্দোলনুমখী করে তোলাই ছিল বিএনপির তিস্তা লংমার্চের মূল লক্ষ্য। আর সেই লক্ষ্যে দলটি পুরোপুরি সফল হয়েছে বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। তিস্তা লংমার্চের প্রথম দিনেই ভারত তিস্তায় পানির সরবরাহ বাড়িয়ে দিতে বাধ্য হয়েছে। আরেক দিকে এই লংমার্চকে কেন্দ্র করে বিএনপি দেশের সর্বস্তরের সংগঠনকে আন্দোলনমুখী ও শক্তিশালী করতে সক্ষম হয়েছে।
তিস্তা নদীতে পানিপ্রবাহ বাড়ানর দাবিতে তিস্তা অভিমুখী লংমার্চের ঘোষণা দেয় বিএনপি। ঘোষণা অনুযায়ী ২২ এপ্রিল সকালে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে শুরু হয় লংমার্চ। সারা দেশ থেকে বিএনপির সর্বস্তরের নেতা-কর্মীরা এই লংমার্চে অংশ নেয়। বিএনপির বিভিন্ন সূত্রের দাবি, বিএনপির লংমার্চে প্রায় দশ লক্ষাধিক কর্মী অংশ নিয়েছিল। বিএনপির নেতা-কর্মীদের আন্দোলনমুখীতারও বড় প্রমাণ এই লংমার্চ। লংমার্চ শুরু পর থেকেই তিস্তায় জল বাড়তে থাকে। লংমার্চের প্রথমদিন বিকালে গাইবান্ধায় সমাবেশে দলটির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, লংমার্চের কারণে ভারত তিস্তায় কিছুটা পানি ছেড়েছে দাবি করে বলেন, ‘এটা লংমার্চের প্রাথমিক সাফল্য। আমরা সাময়িক নয়, পুরোপুরি সফলতা চাই।’
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, লংমার্চ তিস্তায় পানির প্রবাহ বৃদ্ধির পাশাপাশি বিএনপির সাংগঠনিক ক্ষমতাও অনেকগুণে বৃদ্ধি করেছে। দীর্ঘদিন ধরেই আন্দোলনের বাইরে ছিল বিএনপি। বিএনপির চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া ঘোষণা দেওয়ার পরেও অনেক কর্মসূচী সফল করতে পারেনি দলটি। কেন্দ্রীয় নেতাদের মধ্যে পারস্পরিক দ্বন্দ্ব, অবিশ্বাস ও দলের প্রতি আনুগত্য নিয়েও দেখা দিয়েছিল নানান প্রশ্ন। নেতাদের গাছাড়া ভাব আর আন্দোলনে না থাকতে পেরে তৃণমূলের কর্মীরাও হতাশ হয়ে পড়ে। এমনকি খালেদা নিজে দল গোছানর কাজ গুছিয়ে আনার চেষ্টা করলেও পুরোপুরি সফলতা পাননি।
তবে তিস্তার পানির ঢল বিএনপি হারান আন্দোলনের শক্তিকে নতুন করে জাগিয়ে তুলেছে। দলটি এখন আগের যেকোন সময়ের চেয়ে অনেক বেশি শক্তিশালী। এছাড়া সরকারবিরোধী আন্দোলনের মহড়ায়ও দলটি পুরোপুরি সফলতা লাভ করেছে।
লংমার্চের প্রচার-প্রচারণা ও কর্মীদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে দলটির সিনিয়র নেতারা বিশেষ ভূমিকা রেখেছেন। এতদিন ধরে অনেক সিনিয়র নেতা কোন আন্দোলনে অংশ নিতে না পারলেও লংমার্চকে কেন্দ্র করে আবার সক্রিয় হয়েছেন। অবশ্য, বিএনপির পক্ষ থেকে এই আন্দোলনকে সরকারবিরোধী আন্দোলন হিসেবে না দেখাও বিএনপি একটি কৌশল ছিল। সরকারবিরোধী আন্দোলনে না গিয়ে নেতা-কর্মীদের সরকারবিরোধী আন্দোলনের মহড়ায় অংশ নেওয়ার কৌশল নিয়েছিল বিএনপি। সেই কৌশলেও বিএনপি সাফল্য লাভ করেছে বলেই রাজনৈতিক বিশ্রেষকদের মতামত।
তিস্তা লংমার্চে বিএনপির এমন সফলতাকে দলটির ভবিষ্যতের পাথেয় হিসেবেই দেখছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। তিস্তা লংমার্চ একদিকে বিএনপিকে জনগণের মধ্যে ব্যাপক গ্রহণযোগ্যতা দিয়েছে। আরেকদিকে বিএনপি সাংগঠনিক ক্ষমতাও কয়েকগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। যা পরবর্তী শক্তিশালী সরকারবিরোধী আন্দোলনে বিএনপি অনেকটাই সুবিধাজনক অবস্থানে রাখবে বলেই তাদের অভিমত। অবশ্য, অনেকে আবার বিএনপি এমন সাফল্যকে বাংলাদেশের স্বার্থ ও গণতন্ত্রের জন্য মঙ্গলময় বলেও মনে করছেন।