: রানা প্লাজা ভবনটির নিচতলায় ও দ্বিতীয় তলায় ছিল কয়েকশ কাপড়ের ও ইলেকট্রনিক সামগ্রীর দোকান। দ্বিতীয় তলার এমনই একটি তৈরি পোশাকের দোকান মালিক ছিলেন রুমন। দোকানের নাম ছিল ‘এক্স প্লোর ফ্যাশন’।
রুমন হতাশাভরা কণ্ঠে জানালেন, তিনি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ালেখা শেষ করে কোনো চাকরির পেছনে না ছুটে নিজেই কিছু একটা ব্যবসা করার অভিপ্রায়ে সোহেল রানার কাছ থেকে ২০০৭ সালে সাড়ে ১৭ লাখ টাকা দিয়ে একটি দোকানের পজেশন কিনেন। কিন্তু গত বছরের ২৪ এপ্রিল তার সব স্বপ্ন শেষ হয়ে যায়। গত এক বছর ধরে তিনিসহ সব দোকান মালিক ও ব্যবসায়ীরা ক্ষতিপূরণের আশায় বিভিন্ন দপ্তরে ধর্ণা দিয়েও কোনো লাভ হয়নি।
উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ ও পুনর্বাসনের দাবিতে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে প্রধানমন্ত্রীর কাছে আবেদন জানিয়ে গত বছরের ১ অক্টোবর প্রতীকী অনশন পালন করে ধসে পড়া রানা প্লাজার ক্ষতিগ্রস্ত দোকান মালিকরা। ধসে পড়া রানা প্লাজার সামনে এই প্রতীকী অনশন কর্মসূচিরও আয়োজন করে রানা প্লাজার ক্ষতিগ্রস্ত দোকান মালিক ও ব্যবসায়ী সমিতি।
সমিতির সভাপতি খলিলুর রহমান বলেন, ‘বুক ভরা স্বপ্ন নিয়ে নিজেদের ভিটেবাড়ি বিক্রি করে এবং অনেকেই সুদের ওপর টাকা নিয়ে রানা প্লাজায় দোকান নিয়ে বিনিয়োগ করেছিলেন। কিন্তু ভবনটি ধসের পর তাদের সে স্বপ্নও চাপা পড়ে গেছে। তাদের লাখ লাখ টাকার মালামাল নষ্ট হয়ে গেছে। বর্তমানে তাদের অনেকে সহায়-সম্বল হারিয়ে কূল কিনারাহীন হয়ে ছেলে-মেয়েদের লেখাপড়া বন্ধ করে দিতে বাধ্য হচ্ছেন। এমনকি অর্থের অভাবে পরিবারের সদস্যদের চিকিৎসা করাতেও কষ্ট হচ্ছে ক্ষতিগ্রস্ত দোকান মালিক সমিতির সদস্যদের।’
রানা প্লাজার ক্ষতিগ্রস্ত দোকান মালিক ও ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক নুরুজ্জামান স্বপন বলেন, ‘রানা প্লাজা ধসের এক বছর হয়ে গেল, বিভিন্ন সংস্থার কাছে ঘুরে, বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে স্মারকলিপি দিয়ে এখন পর্যন্ত আমরা কোনো প্রকার সহায়তা কিংবা ক্ষতিপূরণের আশ্বাসও পাইনি।’
তিনি আরো বলেন, ‘বহু দেশ ও সংস্থা রানা প্লাজার ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য কোটি কোটি টাকা সাহায্য করেছে। কিন্তু ক্ষতিগ্রস্ত হয়েও দোকান মালিক ও ব্যবসায়ী সমিতির সদস্যরা একটি টাকাও সহায়তা পায়নি। ১৪২ জন দোকান মালিক এখন পর্যন্ত দাবি আদায়ে কোনো প্রকার সড়ক অবরোধ কিংবা ভাঙচুরের ঘটনাও ঘটায়নি। সোহেল রানার কাছ থেকে দোকানের পজেশন আমরা কিনে নিয়েছিলাম। সেই দোকানের জায়গাও সরকার বাজেয়াপ্ত করে দিয়েছে। অথচ তাদের বিষয়টি কোনো বিবেচনায় আনা হয়নি।’
ক্ষতিপূরণ পাননি পার্শ্ববর্তী ক্ষতিগ্রস্ত ভবনের মালিকরাও:
রানা প্লাজা ধসে ভবনটির উত্তর ও দক্ষিণ দিকে অবস্থিত ভবনগুলোরও ব্যাপক ক্ষয়-ক্ষতি হয়েছিল। ওই ভবনগুলোর মালিকরাও কোনো ক্ষতিপূরণ পাননি। রানা প্লাজার দক্ষিণে অবস্থিত ভবনটির মালিক রবীন্দ্রনাথ সরকার।
তিনি ও তার ব্যাবসায়ীক অংশীদার প্রাণবন্ধু ভৌমিক জানান, ভবনসহ তাদের ব্যবসার ব্যাপক ক্ষতি হয়েছিল রানা প্লাজা ভবন ধসে। সব মিলিয়ে ৭ থেকে ৮ কোটি টাকার ক্ষতি হয় তাদের। লুট-পাট হয় মূল্যবান মালামালও। ক্ষতিপূরণের আশায় বিভিন্ন দপ্তরে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দিলেও এখন পর্যন্ত একটি টাকাও ক্ষতিপূরণ পাননি।