শ্রমিকদের অধিকার ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করার বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র কংগ্রেসম্যানদের মতামতকে বিএনপি সমর্থন করে বলে জানিয়েছেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া। তিনি মনে করেন, এই বক্তব্য যথার্থ। একই সঙ্গে কারখানায় শ্রমিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে শিল্প স্থাপনের আগে ছাড়পত্র নেয়ার বিধান বাধ্যতামূলক করার দাবিও জানান তিনি।
শুক্রবার জাতীয় প্রেসক্লাবে মেডিক্যাল টেকনোলজিস্ট অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (এমটিএসবি) উদ্যোগে সংগঠনের প্রয়াত নেতা হযরত আলীর স্মরণে আয়োজিত আলোচনা সভায় তিনি এ কথা বলেন। গত ৭ এপ্রিল সড়ক দুর্ঘটনায় হযরত আলী মারা যান। রফিকুল ইসলাম মিয়া বলেন, রানা প্লাজা ট্র্যাজেডির পর পোশাক শিল্পের শ্রমিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এখন অতি জরুরি বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।
আমরা দাবি জানাচ্ছি, পোশাকসহ প্রতিটি শিল্প স্থাপনের আগে ছাড়পত্র নেয়ার বিধান চালু করতে হবে। এটা করা গেলে শ্রমিকদের নিরাপত্তা সুরক্ষা হবে। বাংলাদেশে শ্রমিকদের নিরাপত্তার বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসম্যানরা বলেছেন, ‘আমরা বাংলাদেশের শ্রমিকদের ন্যায্য অধিকার ও জানমালের নিরাপত্তা চাই।’ বৃহস্পতিবার যুক্তরাষ্ট্রের জ্যামাইকায় এক আলোচনা সভায় নিউইয়র্ক থেকে নির্বাচিত কংগ্রেসওম্যান গ্রেস ম্যাং বলেন, সাভার ট্র্যাজেডির ঘটনা এবং বাংলাদেশের শ্রমিকদের অবস্থা সম্পর্কে যুক্তরাষ্ট্র ওয়াকিবহাল। আমরা বাংলাদেশে শ্রমিকদের ন্যায্য অধিকার এবং জানমালের নিরাপত্তা চাই।
সভায় রানা প্লাজার ধসে হতাহতদের পরিবারের সদস্যদের পর্যাপ্ত ক্ষতিপূরণ দেয়া হয়নি বলে অভিযোগ করেন বিএনপি নেতা রফিকুল। তিনি বলেন, রানা প্লাজা ট্র্যাজেডির পর কয়েক হাজার শ্রমিক পঙ্গু ও বিকলাঙ্গ হয়ে গেছে। তাদের অনেকে চিকিত্সা পাচ্ছে না। একটি টেলিভিশনের সংবাদে দেখানো হলো, রানা প্লাজার দুর্ঘটনা থেকে বেঁচে যাওয়া এক নারী শ্রমিকের জন্ম নেয়া সন্তানের মাথা বৃহত্ হয়ে গেছে। ওই নারী শ্রমিক তার সন্তানকে নিয়ে কোথাও চিকিত্সা পাচ্ছেন না। এটা জাতির জন্য লজ্জাজনক। তিনি বলেন, ‘আমরা পত্রপত্রিকার প্রকাশিত সংবাদ থেকে জেনেছি, রানা প্লাজার দুর্ঘটনায় ১২৮ কোটি টাকা সরকারের তহবিল রয়েছে। এর মধ্যে প্রধানমন্ত্রী ২২ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ হিসেবে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সদস্যদের মধ্যে বিতরণ করেছেন।’ তার প্রশ্ন, বাকি অর্থ গেল কোথায়? আমরা কোনো আত্মসাতের অভিযোগ করছি না। কিন্তু সুষ্ঠুভাবে ক্ষতিপূরণের অর্থ দেয়া হলে রানা প্লাজার শ্রমিকদের এরকম আহাজারি আমাদের শুনতে হতো না।
সরকারের সমালোচনা করে সুপ্রিমকোর্টের জ্যেষ্ঠ এই আইনজীবী বলেন, এরশাদ জেনারেল মঞ্জুর হত্যার সঙ্গে সরাসরি জড়িত, তাকে প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত করা হয়েছে। এভাবে গুরুতর অপরাধে অভিযুক্তরা যদি সরকারের ছত্রছায়ায় আশ্রয়-প্রশ্রয় পায়, তাহলে দেশে আইনের শাসন আছে কোথায়? ভারতের সঙ্গে সম্পর্কের বিষযে তিনি বলেন, ‘ভারত প্রতিবেশী দেশ। তারা আমাদের শত্রু নয়। কিন্তু বাংলাদেশের অনির্বাচিত ও জনসমর্থনহীন সরকারকে যেনতেনভাবে ভারতের যে সরকার ক্ষমতায় রাখতে চায়, সেদেশের জনগণ তাদের ওই নীতিকে সমর্থন করে না। ভারতের জনগণ চায়, বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক পথে চলুক, নির্বাচিত সরকার হোক।’
সংগঠনের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এ কে এম মূসা লিটনের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা অধ্যাপক এজেডএম জাহিদ হোসেন, সহছাত্র সম্পাদক সুলতান সালাহউদ্দিন টুকু, জিয়াউর রহমান ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক ডা. ফরহাদ হোসেন ডোনার ও ড্যাবের যুগ্ম মহাসচিব ডা. রফিকুল ইসলাম বক্তব্য রাখেন।