২৪ মার্চ মন্ত্রিসভায় টোল নীতিমালা-২০১৪ অনুমোদনের পর গণমাধ্যমে এ নিয়ে আলোচনার ঝড় ওঠে। সবাই এর সমালোচনা করে। কিন্তু পরদিন যোগাযোগমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের আশ্বস্ত করে বলেন, নতুন টোল নীতিতে বিদ্যমান জাতীয়, আঞ্চলিক ও জেলা সড়কগুলোতে টোল আরোপ করা হবে না। এছাড়া নতুনভাবে কোনো সড়ক নির্মিত হলে সে সড়কে কোনো টোল আরোপ করা হবে কি না, তা সরকার সার্বিক বিবেচনায় যথাসময়ে সিদ্ধান্ত নিবে। সচিব ভুল ব্যাখ্যা দিয়েছেন বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
মন্ত্রী জানান, বর্তমানে চট্টগ্রাম পোর্ট এক্সেস রোড, হাটিকুমরুল-বনপাড়া এবং হবিগঞ্জের রুস্তমপুর থেকে সিলেট জাফলং পর্যন্ত সড়কে টোল আদায় করা হয়। এছাড়া ৬১টি সেতু ও ৫০টি ফেরিঘাটে টোল আদায় করা হয়ে থাকে।
যোগাযোগমন্ত্রীর এ আশ্বাস শেষ পর্যন্ত সরকারি নীতিমালায় ধোপে টিকলো না। জুলাই থেকেই সরকার বিভিন্ন সড়ক ও সেতুতে টোল আরোপ করতে যাচ্ছে। যোগাযোগ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, প্রতি কিলোমিটারে ভিত্তি টোল হবে দুই টাকা। জাতীয় মহাসড়কে কিলোমটারপ্রতি টোল হবে দেড় টাকা, আঞ্চলিক মহাসড়কে এক টাকা ও জেলা সড়কে ৫০ পয়সা। সড়কের ধরন ও দৈর্ঘ্য এবং যানবাহনে এ ধরনের ভিত্তিতে টোল প্রযোজ্য হবে।
একইভাবে দেশের গুরুত্বপূর্ণ সড়কে অবস্থিত সেতুতে সর্বোচ্চ হারে টোল দিতে হবে। এতে ভিত্তি টোল হবে ৪০০ টাকা। জাতীয় মহাসড়কের সেতুতে ভিত্তি টোল হবে ৩০০ টাকা, আঞ্চলিক মহাসড়কে ২০০ ও জেলা সড়কে ১০০ টাকা। এক্ষেত্রেও সেতুর ধরন ও দৈর্ঘ্য এবং যানবাহনের ধরনের ভিত্তিতে টোল আরোপ হবে।
এছাড়া সব সেতু ও ফেরিতে একক কাঠামোর আওতায় টোল আদায় করা হবে বলে যোগাযোগ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়। তিন বছর পর পর টোলের পরিমাণও সংশোধন আনা হবে। সড়ক ও সেতু থেকে আদায় করা টোল সড়ক উন্নয়ন তহবিলে যাবে; যা দিয়ে সড়ক অবকাঠামোর উন্নয়ন ও রক্ষণাবেক্ষণ ও দেশের গুরুত্বপূর্ণ সড়কে সর্বোচ্চ হারে টোল আরোপ করা হবে।
সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের (সওজ) অধীন সড়ক-মহাসড়কে ক্রমান্বয়ে টোল আরোপের বিধান রেখে গত ২৪ মার্চ মন্ত্রিসভার বৈঠকে ‘টোল নীতিমালা-২০১৩’ অনুমোদন করা হয়। গত ১৫ এপ্রিল এই নীতিমালা গেজেট আকারে প্রকাশ করা হয়।
নীতিমালা অনুযায়ী, জাতীয় মহাসড়ক, আঞ্চলিক মহাসড়ক, জেলা সড়ক, পিপিপিতে নির্মিত সড়ক বা সেতু, ২০০ মিটারের বড় সেতু, উড়াল সড়ক, টানেল ও সরকার ঘোষিত যে কোনো স্থাপনার ওপর টোল আরোপ করা যাবে।
এছাড়া সওজের অধীন উড়াল সড়ক (এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে), টানেল (নদী বা সড়কের তলদেশ দিয়ে নির্মিত পথ) বা সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বের (পিপিপি) ভিত্তিতে নির্মিত সড়কেও টোল দেয়ার বিধান রাখা হয়েছে এই নীতিমালায়।
সড়ক বিভাগের সচিব এমএএন ছিদ্দিক জানান, বর্তমানে সওজের অধীন তিনটি সড়কে টোল আরোপ করা হয়। এগুলোকে টোল সড়ক বলে। ভবিষ্যতে আরো টোল সড়ক নির্মিত হলে বা পিপিপিতে সড়ক নির্মিত হলে শুধু সেগুলোতেই টোল আদায় করা হবে।
সড়ক বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ঢাকা-চট্টগ্রাম, ঢাকা-ময়মনসিংহ, ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক দেশের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক হিসেবে বিবেচিত হবে। জাতীয় মহাসড়কের মধ্যে রয়েছে- ঢাকা-সিলেট, ঢাকা-রংপুর, ঢাকা-রাজশাহীর মহাসড়ক। আঞ্চলিক মহাসড়ক হলো- সিলেট-তামাবিল সড়ক, চট্টগ্রাম-কক্সবাজার সড়ক, ঢাকা-কালিগঞ্জ-ঘোড়াশাল সড়ক ইত্যাদি। আর জেলা সড়ক বলতে জেলা সদর ও উপজেলার মধ্যে সংযোগ স্থাপনকারি সড়ককে বোঝানো হবে। যেমন- রংপুর জেলা সড়ক, সিলেট জেলা সড়ক, কুমিল্লা জেলা সড়ক ইত্যাদি।