DMCA.com Protection Status
title="৭

গুরুতর অসুস্থ সিলেটের মেয়র আরিফুল হকঃপরিবারের পক্ষ থেকে সকলের দোয়া প্রার্থনা

download (47)গুরুতর অসুস্থ সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র ও বিএনপির কেন্দ্রীয় সদস্য আরিফুল হক চৌধুরীর দুঃসময়ে তার পাশে স্থানীয় নেতারা না থাকলেও অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর রয়েছেন।



শনিবার বিকেল সাড়ে ৪টায় আরিফকে দেখতে ঢাকার ইউনাইটেড হাসপাতালে যান অর্থমন্ত্রী। পরে বিকেল ৫টায় দলীয় মহাসচিব ফখরুলও দেখতে যান। এ সময় ফখরুলের সাথে বিএনপির নেতা শিমুল বিশ্বাসও ছিলেন।



সিটি মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীর পিএস সুহেল আহমদ দৈনিক প্রথম বাংলাদেশকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।



তিনি জানান, অর্থমন্ত্রী ও মির্জা ফখরুল এসে আরিফেকে দেখে যাওয়ার পর শনিবার সন্ধ্যায় বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শমসের মবিন চৌধুরী, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আব্দুল আওয়াল মিন্টু ও এনাম আহমদ চৌধুরী আসেন।



গত শুক্রবার রাতে হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার পর সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীকে ভর্তি করা হয় সিলেট নগরীর নয়াসড়কস্থ মাউন্ট এডোরা হাসপাতালে। সেখানে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের সমন্বয়ে গঠিত বোর্ড তাকে নিবিড় পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রে (সিসিইউ) রেখে চিকিৎসা সেবা দেন। তবে তার অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় চিকিৎসকরা তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন।



চিকিৎসকদের পরামর্শ অনুযায়ী শনিবার সকাল সোয়া ৭টার দিকে সিলেট জেলা স্টেডিয়াম থেকে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সযোগে মেয়র আরিফকে নিয়ে যাওয়া হয় ঢাকার ইউনাইটেড হাসপাতালে। ওই সময় আরিফকে বিদায় দিতে স্টেডিয়ামে তার শুভাকাঙ্ক্ষি অনেকেই উপস্থিত হন। আরিফকে বিদায় দিতে গিয়ে অনেকে কান্নায়ও ভেঙে পড়েন।



তবে সিলেট থেকে ঢাকায় যাওয়ার সময় তাকে বিদায় দিতে যাননি দলীয় নেতা ও সিটির কাউন্সিলররা। অবশ্য শনিবার বাদ যোহর হযরত শাহজালাল (রহ.) মাজারে সিটি কাউন্সিলর ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা দোয় মাহফিল করে দায় সারলেও দলীয় নেতারা রয়েছেন নীরব। অথচ আরিফ সুস্থ থাকাবস্থায় জেলা ও মহানগরের গুরুত্বপূর্ণ পদ পাওয়ার আশায় দলীয় নেতারা তার বাসা ও অফিসে নিয়মিত ধর্ণা দিতেন। কাউন্সিলররাও কাজ বাগিয়ে নিতে আরিফের তোষামোদী করতে পিছপা হতেন না। এমনকি স্থানীয় বিএনপির নেতারা মেয়র আরিফের কোনো খোঁজ-খবরও নিচ্ছে না বলে একটি সূত্র জানিয়েছে।



আরিফের ঢাকা যাত্রাকালে দলের জেলা ও মহানগর শাখার শীর্ষ কোনো নেতাই সেখানে উপস্থিত ছিলেন না। একইভাবে সিটি করপোরেশনে পুরুষ ও নারী ৩৬ জন কাউন্সিলরের মধ্যে ৩৪ জনই ছিলেন অনুপস্থিত। কাউন্সিলরদের মধ্যে কেবলমাত্র ৫নং ওয়ার্ডের রেজওয়ান আহমদ ও ১৮নং ওয়ার্ডের এবিএম জিল্লুর রহমান উজ্জ্বলই ছিলেন ব্যতিক্রম। রেজওয়ান আহমদ সিলেট স্টেডিয়ামে উপস্থিত হয়ে মেয়র আরিফকে বিদায় জানান এবং তার সুস্থতা কামনা করেন। আর কাউন্সিলর উজ্জ্বল আগের রাতেই চলে যান ঢাকায়। সেখানে বিমানবন্দর থেকে আরিফকে নিয়ে যান হাসপাতালে। উজ্জ্বল এখনো ঢাকায় অবস্থান করছেন এবং মেয়র আরিফের চিকিৎসার খোঁজ খবর নিচ্ছেন।



জানা গেছে, হৃদরোগে আক্রান্ত মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীর সুস্থতা কামনা করে সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলরদের উদ্যোগে শনিবার বাদ যোহর দরগাহে হযরত শাহ জালাল (রহ.) মাজার সংলগ্ন মসজিদ প্রাঙ্গণে দোয়া মহফিল করে দায়সাড়া হয়েছেন। এছাড়াও সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন বলে জানা গেছে। তবে দোয়া মহফিলে উপস্থিত ছিলেন ১নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর সৈয়দ তৌফিকুল হাদী, ২নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো. রাজিক মিয়া, ৪নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর রেজাউল হাসান কয়েস লোদী, ৫নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর রেজওয়ান আহমদ, ৬নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর ফরহাদ চৌধুরী শামীম, ১৩নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর শান্তনু দত্ত সন্ত, ১৫নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো. ছয়ফুল আমিন বাকের, ১৬নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর আব্দুল মুহিত জাবেদ, ১৯নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর দিনার খান হাসু, ২১নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো. আব্দুর রকিব তুহিন, ২৩নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মোস্তাক আহমদ, ২৪নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর সোহেল আহমদ রিপন, ২৬নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মোহাম্মদ তৌপিক বকস লিপন, ২৭নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর আব্দুল জলিল নজরুল।



জানা যায়, সিলেট জেলা ও মহানগর বিএনপি পুনর্গঠনে আরিফুল হক চৌধুরীর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল। ওই সময় পদ-পদবী পেতে জেলা ও মহানগরের শীর্ষ অনেক নেতাই আরিফের কাছে ধর্ণা দেন। আরিফের মাধ্যমে কেন্দ্রকে বুঝিয়ে-সুঝিয়ে বড় পদ বাগিয়ে নিতে তারা তদবির করেন। কিন্তু শনিবার অসুস্থ অবস্থায় সিলেট ছেড়ে যাওয়ার সময় তার পাশে ওইসব নেতাদের কেউই ছিলেন না। এমনকি শনিবার রাত পর্যন্ত দলীয় উদ্যোগে আরিফের জন্য দোয়া মাহফিল বা সিলেট বিএনপির কোনো নেতা ঢাকায় যাননি।



শনিবার রাত সাড়ে ১০টায় সিলেট জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আব্দুল গফ্ফাকে মেয়র আরিফের শারীরিক অবস্থাকি জানতে চাইলে তিনি দৈনিক প্রথম বাংলাদেশকে বলেন, ‘শারীরিক অবস্থা আগের চেয়ে অনেক উন্নত বলে শুনেছি।’



স্থানীয় ও কেন্দ্রীয় কোনো নেতা আরিফকে দেখতে গিয়েছেন কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এ ব্যাপারে আমি কিছু বলতে পারবো না। আপনি (প্রতিবেদক) আরিফের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগ করে বিষয়টি জেনে নিন।’



তবে এরপর মেয়র আরিফের মোবাইলে ফোন দিলে তার পিএস সুহেল আহমদ রিসিভ করে  বলেন, ‘মেয়রকে দেখতে অর্থমন্ত্রীসহ বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা হাসপাতালে এসেছিলেন। তবে সিলেট জেলা ও মহানগর বিএনপির শীর্ষ কোনো নেতা এখনও মেয়রকে দেখতে যাননি।’

Share this post

scroll to top
error: Content is protected !!