DMCA.com Protection Status
title="৭

এবার এরশাদের উপর চড়াও হলেন রওশন

1393867241.জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের কর্মকাণ্ডে ক্ষেপেছেন তার স্ত্রী পার্টির সিনিয়র প্রেসিডিয়াম সদস্য রওশন এরশাদ। তবে এসময় এরশাদ উপস্থিত থাকলেও তিনি ছিলেন একেবারেই চুপ।

বুধবার দুপুরে গুলশান-১ এ জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য ও নির্বাচিত সংসদ সদস্যদের নিয়ে এক যৌথ সভার বক্তব্যকালে এরশাদের উপর চড়াও হন রওশন। বৈঠকের পুরো সময়ই তিনি পার্টির চেয়ারম্যান এরশাদ ও বিভিন্ন নেতার দোষত্রুটি নিয়ে সমালোচনায় মুখর ছিলেন। পাশাপাশি তার সঙ্গে যোগ দেন আরো বেশ কয়েক জন নেতা।

বৈঠকের শুরুতেই বক্তব্য রাখেন পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। তারপর বক্তব্য রাখেন মহাসচিব জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু ও সিনিয়র প্রেসিডিয়াম সদস্য রওশন এরশাদ। এরপরই সেখানে থাকা উপস্থিত মিডিয়াকর্মীদের বের করে দেয়া হয়। তারপর শুরু হয় পার্টির মূল আলোচনা সভা।

বৈঠক সূত্রে জানা যায়, আলোচনায় উঠে আসে পার্টির নানা অসঙ্গতি, বিভিন্ন নেতার ভূমিকা, নির্বাচনে অংশ নেয়া নেতাদের পোয়াবারো হওয়ার বিষয়গুলো। সভায় চেয়ারম্যানের পলিটিক্যাল সেক্রেটারি শুনীল শুভ রায়ের বিষয়েও কথা উঠে। তাকে ইঙ্গিত করে রওশন এরশাদ বলেন, ‘পার্টির অফিসের একজন কর্মচারী কীভাবে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেয়? সে তো আমাদের অফিসের বেতনভুক্ত কর্মচারী। তার মতো কর্মচারী পার্টির হয়ে নির্বাচনে অংশ নিলে দল বেকায়দায় পড়ে। কেননা তারা সুযোগ নেবে কিন্তু দলের বিপদের সময় এগিয়ে আসবে না।’

এ সময় তিনি ক্ষুব্ধ কণ্ঠে বলেন, ‘তারা আবার আমার ব্যাপারেও বিরূপ মন্তব্য করে। এসব বিষয়তো আমার কানে আসে। তাদের ব্যাপারে দলের সবার সতর্ক থাকা উচিৎ।’ সিনিয়র নেতাদের সামনে তাদের বসাও উচিৎ নয় বলে মন্তব্য করেন তিনি।

রওশনের এমন বক্তব্যের পরই সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে দুর্ব্যবহারের বিষয়ে আরেক প্রেসিডিয়াম সদস্য বলেন, ‘একজন কর্মচারী কীভাবে স্যারের (এরশাদ) সঙ্গে টকশোতে যায়? এমন আচরণ সত্যিই দুঃখজনক।’

তবে এ বিষয়ে সুনীল শুভ রায়ের সঙ্গে কথা হলে তিনি  বলেন, ‘আমিতো ল্যাবএইড হাসপাতালে ভর্তি রয়েছি। কিছুই বলতে পারবো না। তবে এ বিষয়ে স্যারই ভালো বলতে পারবেন।’

পার্টির সূত্র আরো জানায়, বৈঠকে পার্টির চেয়ারম্যানের এক উপদেষ্টাকে (ববি হাজ্জাজ) নিয়ে প্রশ্ন উঠে। বলা হয়, তিনি কী গবেষণা করেন যে এতো টাকা খরচ হয় প্রতিমাসে?
প্রেসিডিয়াম সদস্য এসএম ফয়সাল চিশতী বলে ওঠেন, ‘জাপার যে গবেষণা সেল রয়েছে তা থেকে কোনো প্রকার ফিটব্যাক পাওয়া যায় না। শুধু প্রতি মাসে ১০ লাখ টাকা দেয়া হয় ওই কাজের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিকে।’

তবে এ ব্যাপারে ফয়সাল চিশতীর সঙ্গে পরে যোগাযোগ করা হলে তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।

পরে এ বিষয়ে ববি হাজ্জাজের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘গবেষণা সেলটি চেয়ারম্যান সাহেবের ছিল। এ সেলটি দেখশুনা করার জন্য আমাকে ও জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলুকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল। গত বছরের ডিসেম্বরে সেলটি বন্ধ করে দেয়া হয়। তখনই আমিও বিদেশ চলে যাই। এরপর থেকে আর সেলটি খোলা হয়নি।’

তিনি বলেন, ‘বৈঠকে আমাকে নিয়ে যদি এসব অপ্রীতিকর কথাবার্তা বলা হয়ে থাকে তবে আমি বলবো, যিনি বলেছেন তিনি না জেনে ভুল বক্তব্য রেখেছেন এবং ডাহা মিথ্যা কথা বলেছেন। আমার নাম ধরে এ ধরনের নোংরা কথা বলায় মনে করতে হবে তার জ্ঞান অত্যন্ত কম ও তার দল এবং দলের কার্যক্রম সম্বন্ধে ধারণা কম। ওই ব্যক্তি যদি আমার সামনে এসে কথাগুলো বলতে পারতেন তবে আমি এর উচিৎ জবাব দিতে পারতাম।’

এদিকে বৈঠকে আরেক প্রেসিডিয়াম সদস্য বলেন, ‘যারা নির্বাচনে অংশ নিয়েছে তাদের তো কোনো প্রকার টাকা পয়সা খরচ করতে হয়নি। তারা এখন তাদের ছেলেমেয়েদের বিনা খরচে পড়াশুনা করানো, ফ্ল্যাট ও গাড়ি পাচ্ছেন। এ জন্য তারা প্রতিমাসে পার্টির জন্য ১০ হাজার করে টাকা চাঁদা দেবেন।’

পার্টির চেয়ারম্যান ওই সময়ই বিষয়টি অনুমোদন করে সবাইকে প্রতি মাসে ১০ হাজার করে টাকা দেয়ার জন্য বলেন।

তবে এরশাদ পুরো সময়টাই ছিলেন চুপচাপ। অবশ্য রওশনের বক্তব্যের মাঝে এরশাদ বলে উঠেন, ‘আমারও কিছু ভুল হয়েছে।’

বৈঠকে আরেক প্রেসিডিয়াম সদস্য চিত্রনায়ক মাসুদ পারভেজ সোহেল রানাও নেতাদের তোপের মুখে পড়েন। তাকে লক্ষ্য করে রওশন বলে উঠেন, ‘সোহেল রানা কী করে দলের নির্বাচন পরিচালনা সেলের প্রধান হন। তিনি তো এর আগে কোনো দিন জাতীয় নির্বাচনে অংশগ্রহণই করেননি। তিনি কীভাবে এ দায়িত্ব পালন করেন?’

এর জবাবে সোহেল বলেন, ‘উনি (রওশন) কীভাবে বললেন যে, আমি অনভিজ্ঞ। আমি এর আগে অনেক নির্বাচন পরিচালনা করেছি। এমনকি আওয়ামী লীগেরও অনেক নির্বাচন সমন্বয় করেছি। বঙ্গবন্ধু আমাকে দিয়ে অনেক কাজ করিয়েছেন।’

এসময় উপস্থিত অন্য নেতারা উত্তেজিত হয়ে বলে উঠেন, ‘আপনি কথায় কথায় এতো জয় বাংলা, জয় বাংলা করেন কেন?’

এর জবাবে ক্ষেপে গিয়ে সোহেল রানা বলেন, ‘জয় বাংলা বলবো না তো কী বলবো? এটা কোসো দলীয় শ্লোগান নয়। সবাই এই শ্লোগান দিতে পারে। এটা একটা জাতীয় শ্লোগান। আগে জয় বাংলা পরে জাতীয় পার্টি।’

আলোচনা ও সমালোচনার পাশাপাশি বৈঠকে কমিটি গঠনে টাকার লেনদেন হওয়া, পার্টির নেতাদের ছেলেমেয়েরা দল না করা, পার্টির ভুল সিদ্ধান্তের কারণে উপজেলা নির্বাচনে পরাজয়ের বিষয়গুলোও উঠে আসে যৌথ সভায়। তবে সমালোচনায় নেতারা মুখর থাকলেও তারা সবাই এক হয়ে কাজ করার জন্য মত দেন। সামনের দিনে জাপাকে যাতে একটা ভালো অবস্থানে নিয়ে যাওয়া যায় সে ব্যাপারেও জোরালো মত দেন তারা।

Share this post

scroll to top
error: Content is protected !!